ঢাকা, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১

দেশের স্বার্থ সবার উপরে

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০২৩, ০৭:৪৯ বিকাল  

দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে উত্তাপ-উত্তেজনা ততই বাড়তে শুরু করেছে। ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের বাসায় যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে বিদেশি কূটনীতিকরা প্রভাবিত করতে পারে, এ জন্যে তাদের কাছে যাওয়ার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসছে।

মূল কথা হচ্ছে, বিদেশি কূটনীতিরা মুখে যে কথাই বলুক, তাদের নিজস্ব কিছু লক্ষ্য ও ইস্যু আছে। স্বার্থ হাসিলে নিজেদের পথেই বিদেশি কূটনীতিক বা তার দেশ এগুবে। এতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে থেকেই। রাজনৈতিক দলের সহায়তা নিয়ে বিদেশি কূটনীতিক বা তার দেশ কতটা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে পারবে তাও মূখ্য আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে রাষ্ট্রের যেসব দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল আছে, তাদের মধ্যে কেউ স্রেফ রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার জন্যে বিদেশিদের কাছে নিজেদের বিক্রি করবে বলে কেউ বিশ্বাস করে না। দেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এমন একটি আবহাওয়া বিদ্যমান আছে। 

এই প্রেক্ষাপট সামনে রেখে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ‘গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য রাষ্ট্রপতি হিসেবে যা করণীয় তাই করবো’- বক্তব্যটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি রাষ্ট্রের নতুন অভিভাবক। দেশের স্বার্থ যাতে কোনেভাবেই কোনো রাজনৈতিক দলের কারণে বিদেশি রাষ্ট্রের কাছে জলাঞ্জলি না যায়, এটি দেখার গুরুদায়িত্ব তার। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা। জানবাজি রেখে দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। ফলে দেশের স্বার্থ নষ্ট হয় বা বিকিয়ে যায়, এটা তিনি কখনো হতে দেবেন না। 

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিদেশি কূটনীতি বা বিদেশি রাষ্ট্রের মাথা ব্যথার বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উঠছে। নিজেদের স্বার্থ হাসিলে কোন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় গেলে তাদের জন্য ভালো হবে, এটি তাদেও ভাবনায় গুরুত্ব পায়। তাই এ ক্ষেত্রে বিদেশি রাষ্ট্র অনৈতিক পথে পা ফেলে না এটা জোর দিয়ে বলার উপায় নেই। এই ঘটনা প্রবাহে নজর রেখে বলা যায়, আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ভূমিকার গুরুত্বে বিশালতা রয়েছে। 

জানা গেছে, রবিবার রাজধানীর গুলশানে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের লেখা ‘এগিয়ে যাও বাংলাদেশ’ বইটি আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, একটি নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একজন রাষ্ট্রপতি হিসেবে আমার যা কিছু করার আমি তা করবো। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ... সবাই মুখে মুখে বলছি নির্বাচন খুব ক্রুশিয়াল হবে। কিন্তু আমি মনে করি কোনো ক্রুশিয়াল নয়। দেশে একটি সংবিধান আছে। কারও মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। দেশের সংবিধান অনুযায়ী স্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি) একদম তাদের সর্বোচ্চ স্বাধীনতা প্রয়োগ করে সংবিধানের আলোকে একটি নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে সক্ষম হবে। সেখানে রাষ্ট্রপতি ও একজন সুপ্রিম কমান্ডার হিসেবে আমার যেটুকু দায়িত্ব এই নিরপেক্ষতাটাকে বজায় রাখার জন্য, সমস্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য, যতটুকু প্রয়োজন করবো।

এদিকে নতুন করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে উত্তাপ ছড়িয়েছে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বিএনপি নেতাদেও বৈঠকের বিষয়টি। এবারই প্রথম দেখা গেল আগে বহুবার যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিএনপি নেতারা দেখা করলেও সাক্ষাতের বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু এবার দেখা করেও মুখ খোলেননি বিএনপি নেতারা। কথা বলার ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটে আছেন। এ কারণে নানা কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। ফলে তাদের অবস্থান পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না। 

তবে বিএনপির দলীয় লোকজন বলার চেষ্টা করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস কোমরে গামছা বেঁধে বিএনপির পাশে দাঁড়িয়েছে। বিএনপিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতায় নেওয়ার জন্য পিটার হাস মূলত বিএনপির একজন নেতার মতো ভূমিকা রেখে যাবেন। বিএনপির লোকজনের এই মনোভাবের পেছনে হয়তো তাদের নিজস্ব যুক্তিও আছে।  

পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে বিএনপি নেতাদের নিয়ে বিএনপির লোকজন বেশ উত্তেজিত মুড়ে আছেন। বৈঠকের ব্যাপারে কোনো পক্ষ থেকে কোনও কিছু বলা বা মন্তব্য করা না হলেও বিএনপির যারা ভোকাল তারা বলবার চেষ্টা করছে, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বিএনপিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতায় নেওয়ার ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চয়তা দিয়েছেন। 

জানা গেছে, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের আমন্ত্রণে তার সঙ্গে বৈঠকে করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। রাজধানীর বারিধারায় পিটার হাসের বাসভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পিটার হাস ছাড়াও দেশটির দূতাবাসের আরো দুই কর্মকর্তা অংশ নেন। 

এদিকে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিএনপি প্রতিনিধি দলের বৈঠকের বিষয়টি গণমাধ্যমে জানানো হলেও আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে মুখ খুলছেন না দলটির কোনো নেতা। তারা বলছেন, বৈঠকের বিষয় নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে এখনই কোনো বক্তব্য দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ আগে আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এরপর যদি দলের মনে হয়, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা দরকার, তখন বলা হবে। 

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বিএনপির নেতাদের বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বক্তব্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। রবিবার বিকালে মিরপুর-১৪ নম্বরে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি আবারো বিদেশিদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। আমেরিকা শুধু বিএনপিকে নয়, আওয়ামী লীগকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আমরাও গ্রহণ করেছি। পিটার হাসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের অনেক কথা হয়েছে। সে (পিটার হাস) একবারও নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগের কথা বলেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে তাদের কোনও মাথাব্যথা নেই। 

ঘটনা প্রবাহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, দেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র খেলেয়াড়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কথা যুক্তরাষ্ট্র শুধু  যদি  সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়, এই ভাবনাবিন্দুতেই স্থির থাকে, তাহলে এক ধরনের বিষয়। আর যদি বিএনপির ভোকালরা যেমন বলছে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের ক্ষমতায় নেবানেওয়ার জন্য কোমরে গামছা বেঁধে নেমেছে, আসলেই নেমেছে কি-না তা অবশ্য গোপন থাকবে না।

এ ক্ষেত্রে বলা যায়, দেশের স্বার্থ, দেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধ শক্তিকে সব অপচেষ্টা রুখে দিতে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বিশেষ ভূমিকা নিতে পারেন।

দৈনিক সরোবর/ আরএস