হাসপাতালে দালাল সিন্ডিকেটের অবসান জরুরি
প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২৩, ০৩:১৮ দুপুর

রাজধানীর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল অনেকদিন ধরেই দালাল সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি। এ অবস্থার কবে অবসান হবে কেউ জানে না। এতে রোগীরা পড়েছে বেকায়দায়। দালাল সিন্ডিকেটের কারণে রোগীদের চিকিৎসা ব্যয়ও বেড়েছে অনেকগুণ। রোগীর সহায়তায় এগিয়ে আসার অজুহাতে দালাল সিন্ডিকেট সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। এদের কাছে রোগীরা বেশ অসহায়।
সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নতির জন্য বহু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এতে রোগীরা কিছুটা হলেও উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন। কিন্তু বহুক্ষেত্রেই চিকিৎসকরা রোগীদের সেবায় আন্তরিক নন। সরকার চিকিৎসকদের বেতন-ভাতাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েছে। তারপরও সরকারি চিকিৎসকরা বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখার ব্যাপারেই বেশি উৎসাহি। এ জন্যে সরকার সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের ‘প্র্যাকটিস’ কর্মসূচি চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আশা করা যায়, এতে রোগীরা উপকৃত হবেন।
সকাল থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের রোগী দেখার সময়। এই সময় পার হয়ে গেলে তারা হাসপাতাল ত্যাগ করেন। তবে চিকিৎসকদের ‘প্র্যাকটিস’ শুরু হলে আড়াইটার পর নিজের কর্মস্থলে রোগী দেখতে পারবেন। তার জন্য ফি নিতে পারবেন।
এতে বোঝা যাচ্ছে, সরকার দেশের সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা উন্নতি ঘটানোর জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু হাসপাতালগুলো দালাল সিন্ডিকেটে জিম্মি। এর অবসান জরুরি।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়-রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ঘিরে সক্রিয় এ দালাল সিন্ডিকেট। হাসপাতালের শয্যার ব্যবস্থা করা, সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, অ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী গাড়ি ভাড়া নিয়ে সক্রিয় এ রকম একাধিক সিন্ডিকেট। হাসপাতাল ঘিরে শক্তিশালী বলয় গড়ে তুলেছে তারা। এদের কাছে জিম্মি রোগীরা। পদক্ষেপ নিয়েও এদের দৌরাত্ম্য কমাতে হিমশিম খায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এদের বিরুদ্ধে মাঝে মাঝেই অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু কয়েক দিন আড়ালে থেকে আবার প্রকাশ্যে আসে এদের প্রতাপ। এরা খুবই সংঘবদ্ধ।
রাজধানীর ছয়টি স্পটে সক্রিয় এ অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট। আগারগাঁও-শ্যামলী, বকশীবাজার মেডিকেলের মোড়, মিটফোর্ড, পান্থপথ, মালিবাগ-মৌচাক, উত্তরায় সক্রিয় এরা। রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বাইরে দেখা মিলবে সারি সারি অ্যাম্বুলেন্সের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের বাইরে বের করে দিলেও আবার দুই দিন পরই ক্ষমতাবলে হাসপাতাল প্রাঙ্গণের ভিতরে ঘাঁটি করে অ্যাম্বুলেন্স চালকরা।
সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, হাসপাতাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রোগীর স্বজনের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে চলছে বচসা। চার-পাঁচজন মিলে ঘিরে ধরেছেন একজনকে। প্রায় টানাটানি অবস্থা। এভাবে জায়গায় জায়গায় চলছে দরকষাকষি।
রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে রাতবিরাতে দুর্ঘটনায় আহত রোগীরা সেবা নিতে আসেন। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সেবা মিললেও দালালের উপদ্রবে বিরক্ত রোগীরা। ট্রলি, হুইলচেয়ারে রোগী নিতে গুণতে হয় পয়সা। হুইলচেয়ারের জন্য ২০০, ট্রলির জন্য চায় ৫০০ টাকা। হাসপাতালের ওয়ার্ডবয়রা এ সিন্ডিকেট চালায়।
গত ৭ মার্চ শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল,হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও পঙ্গু হাসপাতালে এক অভিযানে ৯ দালালকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দিয়েছেন র্যাব-২-এর ভ্রাম্যমাণ আদালত। র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইকবাল হাসানের পরিচালনায় দালালবিরোধী বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।পরে তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত করে প্রত্যেককে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড ও অর্থদন্ড দেওয়া হয়েছে। অভিযানের পর থেকে হাসপাতালের ভিতরে দৌরাত্ম্য কমলেও বাইরে সক্রিয় এ সিন্ডিকেট।
শুধু সরকারি হাসপাতাল নয়, রাজধানীর শ্যামলী ও পান্থপথেও বেসরকারি হাসপাতাল ঘিরে সক্রিয় একাধিক সিন্ডিকেট। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে দালাল এবং অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটে জিম্মি রোগীরা।
আমাদের দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চোখের সমানে দালাল সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য লক্ষ্য করা যায়। বিশ্বের অন্যকোনও দেশে হাসাপাতালে দালাল সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য আছে এটা কেউ বিশ্বাস করে না। ফলে আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোকে দালাল সিন্ডিকেট মুক্ত করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ প্রয়োজন।
দৈনিক সরোবর/ আরএস