ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১

ইসি হোক আস্থার 

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০২৩, ০৮:২৯ রাত  

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের খুব বেশি বাকি নেই। এ বছরের নভেম্বরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। 

সংবিধান অনুসারে ইসি গঠন হওয়ার পরে কয়েকটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছে; তার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সহ জাতীয় সংসদ থেকে বিএনপির দলীয় সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করলে সেসব আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত করে ইসি বলিষ্টতার পরিচয় দিয়েছে। সবার মনেই ইসি আশার সঞ্চার করেছে। 

সংবাদমাধ্যমসূত্র বলছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মে থেকে জুনের মধ্যে তিন ধাপে পাঁচ সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন-ইসি। এপ্রিলের মাঝামাঝি তফসিল ঘোষণা করে প্রথম ধাপে ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোটের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে তফসিল দিয়ে দ্বিতীয় ধাপে ১০ জুন দুই সিটিতে এবং মের শুরুতে তফসিল দিয়ে তৃতীয় ধাপে ২২ জুন অন্য দুই সিটিতে ভোটের সম্ভাব্য তারিখ রাখা হয়েছে। 

দ্বিতীয় ধাপে খুলনা, বরিশাল অথবা খুলনা, রাজশাহী; তৃতীয় ধাপে রাজশাহী, সিলেট অথবা বরিশাল, সিলেট সিটিতে ভোট হতে পারে। তবে তফসিলের আগে সিদ্ধান্ত হবে কোন ধাপে কোন সিটিতে ভোট হবে। মে থেকে জুনের মধ্যে গাজীপুর, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনে নির্বাচন করার বিষয়ে গত বুধবার নির্বাচন কমিশন সভায় নীতিগত সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান ইসি সচিব জাহাঙ্গীর আলম। 

গত বুধবার সকালে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার-সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে এ সভা হয়। সভা শেষে ইসির সিদ্ধান্তের বিষয়ে সচিব বলেন, মে থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। কোনটা কখন হবে তখন জানাব। এইচএসসি পরীক্ষা হবে সম্ভাব্য ৭ জুলাই থেকে। সেজন্য ২৩ মে থেকে ২৯ জুনের মধ্যবর্তী সময়ের তিন ধাপে পাঁচ সিটির ভোট করার বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ তারিখ নির্ধারণের কারণ এসএসসি পরীক্ষা চলবে ২৩ মে পর্যন্ত। আর ২৯ জুলাই হচ্ছে ঈদুল আজহা। 

সচিব বলেন, নির্বাচনে ভোট নেওয়া হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে। ভোট কেন্দ্রে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরাও রাখতে চায় কমিশন। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তফসিলের আগে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিন ধাপে পাঁচ সিটি ভোট অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি ও শরীকদলগুলো আগামী জাতীয় নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যপূরণে যগপৎ আন্দোলনও করছে। 

রোজা শুরু হওয়ার আগে বিএনপি বড় ধরনের শো ডাউন দেখাতে চায়। বিএনপির সঙ্গে জামায়াত মিলে সরকার হঠানোর আন্দোলন করবে কি না এ নিয়েও নানা গুঞ্জন বাজারে শোনা যাচ্ছে। 

ইসি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেদের শক্ত অবস্থান তুলে ধরতে সব ধরনের প্রচেষ্টা নেবে বলে মনে হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারও চায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, যেন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু একটি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে। নির্বাচন যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয় তার জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বাড়তি নজর রয়েছে। তবে আমরা মনে করি, সবার মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস তৈরিতে ইসি তার কাজ চালিয়ে যাবে। 

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিতর্কিত করার জন্য দেশে লোকের অভাব নেই, বিদেশেও অভাব নেই। 

ইসি পাঁচ সিটির নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে পারবে, এ বিশ্বাসও আস্থা ইতোমধ্যে সৃষ্টি করতে পেরেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই আস্থায় যেন কোনও আঁচড় না লাগে এবং ইসিকে বিতর্কিত করার প্রয়াস নিয়ে যারা কাজ করছে, তারা যেন এ সুযোগ না পায়, এ ব্যাপারে ইসি পুরোপুরি সচেতন থাকবে। 

দেশের সচেতন জনগণের অভিমত হলো-প্রত্যেকটি নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধমুক্ত করা সম্ভব, তার জন্য শুধু ইসির আন্তরিকতাই যথেষ্ট নয়। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর গুরুদায়িত্বও যে আছে তা অস্বীকার করার জো নেই। বিশেষ করে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে। 

বিএনপি যদি মনে করে থাকে যে নির্দলীয় সরকার  ব্যবস্থাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সবচেয়ে সহায়ক পন্থা, এটা দলটির একটি ভ্রান্ত ধারনা। দেশে তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছিলো। কিন্তু তা বিএনপিই বিতর্কিত করেছে। এ ব্যবস্থার মৃত্যুঘণ্টা বিএনপিই বাজিয়েছে। ফলে এ দাবি নিয়ে যে যগপৎ দলটির আন্দোলন, তা, মানুষকে আকর্ষণ করতে পারেনি। 

নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) শক্তিশালী করতে পারলে তার সুফল সব রাজনৈতিক দলই পাবে। উন্নত বিশ্বে শুধু নয় পাশের দেশ ভারতে ইসি এতটাই শক্তিশালী যে ভারতের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন ওঠার সুযোগ ঘটেনি। আমাদের দেশেও ইসিকে সবাই মিলে শক্তিশালী করার পথেই হাঁটতে হবে।

দৈনিক সরোবর/ আরএস