বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের ক্রমশ উত্থান
প্রকাশিত: জানুয়ারী ০৬, ২০২৩, ১১:৫৯ রাত

ফাইল ফটো
অর্থনৈতিক শক্তিতে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনামকে টপকে উপরে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। বিশ্ব অর্থনীতিতে ৩৫তম অবস্থানে এখন বাংলাদেশ। বিদায়ী বছর ২০২২ সালে বাংলাদেশ এ অবস্থান গড়ে নিয়েছে। আগের বছর ২০২১ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিলো ৪১তম। আশা করা যায় আগামী দিনগুলোতে বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশ আরো ভালো অবস্থান গড়ে নেবে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে নিজেকে পোক্ত করে নেবে। সেই দিন হয়তো খুব বেশি দূরে নয়। দিন যত এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক শক্তি নিয়ে উত্থিত হচ্ছে।
দেশের অপশক্তিগুলো যতই দেশের অর্থনীতি নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করুক না কেন এবং দেশের অর্থনীতি শ্রীলংকার অর্থনীতির মতো ভঙ্গুর হয়ে উঠবে বলে প্রচার করুক, এতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিস্ময়কর উত্থানকে ঠেকিয়ে রাখার যাবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দেশের অর্থনীতিকে কাঙ্ক্ষিত স্থানে নিয়ে যেতে পারবেন বলে বিশ্বের বাঘা বাঘা অর্থনীতিবিদরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন।
দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলায় বর্তমান সরকার সফল হয়েছে। দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরে সফল হওয়ায়, দেশকে এগিয়ে নিতে অনেক বাধা দূর হচ্ছে। গণতন্ত্রের মানসকন্যা প্রধান শেখ হাসিনা এরই মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার প্রত্যায় ব্যক্ত করেছেন। চারটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে। অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বের অর্থনৈতিক পরাশক্তি দেশগুলোর কাতারে এসে বাংলাদেশও যুক্ত হবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে নিজেকে দাঁড় করাতে হলে দেশকে কতগুলো বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে চলতে হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে চলছেন।
বিশেষভাবে বলা যায়, দেশকে শিল্পোন্নতভুক্ত করার কাজটি তরান্বিত করা। এই কাজে সরকার সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে। ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ এগিয়ে রয়েছে। বিশ্বের অর্থনৈতিক শক্তিগুলো আমাদের দেশে মোটা অংকের বিনিয়োগ শুরু করেছে। অন্যদিকে যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নতি কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়াটা ছিলো সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জে সরকার জয়ী।
পদ্মাসেতু চালু করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাকে সরাসরি যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এতে অর্থনীতির উত্থান নিয়ে আসবে অবিশ্বাস্য গতি। এর সঙ্গে আরো অনেক বিস্ময়যুক্ত করে বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার যে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে তা হাতে হাতে সাফল্য ধরা দেবে।
জানা গেছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে বিশ্ব। এর মধ্যেই বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার বেড়েছে। বিশ্বের ৩৫তম বড় অর্থনীতির দেশ এখন বাংলাদেশ।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তৈরি এ তালিকায় বিশ্বের ৫০টি বৃহৎ অর্থনীতির দেশের তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধু ভারত ও বাংলাদেশ রয়েছে। ৪৬৫ বিলিয়ন ডলার জিডিপি নিয়ে সদ্য গত ২০২২ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ৩৫তম। আগের বছরে ছিলো ৪১ অবস্থানে। প্রতিবেদেন বলা হয়, ২০২২ সালে বিশ্বে দুটি বড় ঘটনা ঘটেছে। প্রথমত বিশ্বের জনসংখ্যা ৮০০ কোটি ছাড়িয়েছে।
দ্বিতীয়ত বিশ্ব অর্থনীতির আকার ১০০ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ১০১ দশমিক ৫৬ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এতে ছোট-বড় সব দেশের জিডিপির হিসাব যুক্ত হয়েছে। তবে এর বড় অংশজুড়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, জার্মানি ও ভারত। ভারত যুক্তরাজ্যকে টপকে পঞ্চম স্থান দখল করে নিয়েছে গত বছর। আরো পাঁচটি দেশকে যদি যুক্ত করা যায়, তবে ১০ দেশের মিলিত জিডিপি বৈশ্বিক জিডিপির ৬৬ শতাংশ। আর ২৫টি দেশ বৈশ্বিক জিডিপির ৮৪ ভাগের অংশীদার।
আইএমএফের পরিসংখ্যানের বরাতে কানাডার অনলাইন প্রকাশনা সংস্থা ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট গত ২৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। দেশগুলোর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) নিরিখে এ তালিকা করা হয়েছে। ‘দি টপ হেভি গ্লোবাল ইকোনমি’ শীর্ষক ২৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবেশী দেশ ভারত বিশ্ব অর্থনীতিতে পঞ্চম স্থানে চলে এসেছে। জুলাইয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভারতের অবস্থান ছিলো ষষ্ঠ।
২০২২ সালে ৩ দশমিক ৪৬ ট্রিলিয়ন ডলার জিডিপি নিয়ে যুক্তরাজ্যকে পেছনে ফেলে পঞ্চম হয়েছে ভারত। তালিকায় প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে রয়েছে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান ও জার্মানি। দেশ চারটির জিডিপি যথাক্রমে ২৫ দশমিক শূন্য ৩, ১৮ দশমিক ৩২, ৪ দশমিক ৩০ ও ৪ দশমিক শূন্য ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বিশ্বের ১০টি বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের বাকি পাঁচটি দেশ হচ্ছে যথাক্রমে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, রাশিয়া ও ইতালি। এদের জিডিপি যথাক্রমে ৩ দশমিক ২০, ২ দশমিক ৭৮, ২ দশমিক ২০, ২ দশমিক ১৩ ও ১ দশমিক ৯৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্বের বাকি ১৬৭টি দেশের জিডিপির পরিমাণ খুবই কম, মাত্র ১৬ শতাংশ।
নিম্ন জিডিপির দেশগুলোর বেশিরভাগই ওশেনিয়া অঞ্চলের দ্বীপ দেশ। ১৯১টি দেশ নিয়ে তৈরি আইএমএফের এ তালিকায় সর্বশেষ নামটি হচ্ছে টুভালু। ৬৬ মিলিয়ন ডলার জিডিপি নিয়ে দেশটি ১৯১তম অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থান ৩৫তম। বাংলাদেশের জিডিপির আকার ৪৬০ বিলিয়ন ডলার বা ৪৬ হাজার কোটি ডলার। বাংলাদেশের ঠিক আগেই রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর ও অস্ট্রিয়া। ঠিক পরেই রয়েছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম। অর্থনীতির এক ঘোর অনিশ্চয়তা নিয়ে শুরু হয়েছে ২০২৩ সাল।
করোনা মহামারি, এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, মূল্যস্ফীতিতে নাকাল বিভিন্ন দেশের মানুষ। অনেক বিশেষজ্ঞ স্বল্প আকারে মন্দা সৃষ্টি হওয়ার কথা বলছেন। তবে এটা স্বল্প না দীর্ঘস্থায়ী হবে, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। আইএমএফ বলেছে, বিশ্বের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ দেশ মন্দার কবলে পড়বে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দেশকে উন্নতি-অগ্রগতিতে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, এটা যদি অব্যাহত রাখা যায়, তাহলে অর্থনীতিতে দেশ আগামী-দিনে আরো ভালো করবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পরেই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বলিয়ান হয়ে উঠার জানান দিতে পেরেছে। ৪১তম থেকে এক বছরের ব্যবধানে ৩৫তম স্থানে বাংলাদেশের উঠে আসাটাকে অর্থনীতিবিদরা খুবই ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বড় অর্জন হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
দৈনিক সরোবর/এমকে