ঢাকা, রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫, ৯ চৈত্র ১৪৩১

জাল টাকা কারাবারিদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত জরুরি

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৫, ০৩:২৯ দুপুর  

যে কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদুল ফিতর বা ঈদুল আজহা এলেই দেশের বাজারে বাড়ে জাল টাকার ছড়াছড়ি। এ জন্য নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে কারবারিরা। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদুল ফিতরের কেনাকাটাকে টার্গেট করে কারবারিরা বাজারে বিপুল পরিমাণ জাল নোট ছেড়েছে বলে তথ্য মিলেছে। এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) দুই অভিযানে প্রায় ৮০ লাখ টাকার জাল নোটসহ ধরা পড়েছে দুটি চক্রের পাঁচ সদস্য। তবে ধরা পড়ার আগেই সম্প্রতি তারা দুই দফায় ৫০ লাখ টাকার বেশি জাল নোট বাজারে ছড়ানোর তথ্য জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। জাল টাকা ছাপানোর জন্য উন্নতমানের ল্যাপটপ, প্রিন্টার, হিট মেশিন, বিভিন্ন ধরনের স্ক্রিন, ডাইস, জাল টাকার নিরাপত্তা সুতা, বিভিন্ন ধরনের দামি কালি, আঠা ও স্কেল কাটার ব্যবহার করে চক্রগুলো। এছাড়া গ্রাফিক্সের কাজের জন্য চক্রে রয়েছে বেশ কয়েকজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। নিখুঁতভাবে জাল টাকা ছাপতে তাদের মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। এরা টাকার জলছাপ থেকে শুরু করে অন্যান্য নিরাপত্তার সবই অনেকটা হুবহু নকল করছে।

বলা বাহুল্য, ফেসবুক-টিকটক ও ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চটকদার সব বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে জাল নোট; এমনকি অনলাইনে পেজ খুলেও চলছে জাল নোটের কারবার। দেওয়া হচ্ছে লোভনীয় সব অফার। শুধু অর্ডার করলেই দেশের যেকোনো প্রান্তে হোম ডেলিভারির সুবিধাও রয়েছে। এক লাখ টাকা সমমূল্যের জাল নোট বিক্রি করছে মাত্র ১০ হাজার টাকায়। তবে ৫০, ২০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বেশি নকল বা জাল করা হচ্ছে। চক্রগুলো সারা বছর ততটা সক্রিয় না থাকলেও ঈদ ও পূজার মতো ধর্মীয় উৎসবগুলো টার্গেট করে জাল টাকার নোট ছাপে। টাকা ছাড়াও মার্কিন ডলার ও রুপি জাল করছে। জাল নোট তৈরির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দেওয়া হয়। কিন্তু তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের একই কাজ শুরু করে। 

বলার অপেক্ষা রাখে না, ঈদ বা কোনো বড় উৎসব এলেই জাল নোটের কারবারিরা চাঙ্গা হয়ে ওঠে। অনলাইনেও এ চক্রগুলো ছবি এবং ভিডিও দিয়ে আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দেয়। ‘জাল টাকা বিক্রি করি’, ‘জাল টাকা বিক্রি করা হয় স্যার’, ‘জাল টাকার ডিলার’, ‘জাল টাকা বিক্রি বাংলাদেশ ডট কম’, ডিলার জাল টাকার’- এমন নানা নামে পেজ রয়েছে ফেসবুকে। এছাড়া টেলিগ্রামে ‘জাল টাকা’, ‘জাল টাকার লেনদেন’ ও ‘জাল টাকা সেল গ্রুপ’- নামে বিভিন্ন গ্রুপ দেখা গেছে। ঈদ ঘিরে ফেসবুক, টিকটক ও ইনস্টাগ্রামসহ অনলাইনে লোভনীয় ও চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে বিভিন্নভাবে বিক্রি করা হচ্ছে জাল নোট। অগ্রিম অর্ডার নিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এজেন্টদের মাধ্যমে দেওয়া হয় হোম ডেলিভারিও। জাল টাকা তৈরি থেকে শুরু করে বাজারজাত পর্যন্ত কয়েকটি ভাগে কাজ করে থাকে চক্রের সদস্যরা। প্রথমে অর্ডার অনুযায়ী জাল নোট তৈরি, দ্বিতীয় পর্যায়ে এ টাকাগুলো যে অর্ডার দেয় তার কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং তৃতীয় পর্যায়ে জাল টাকা বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আমাদের প্রত্যাশা, জাল টাকা কারাবারিদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করবেন সংশ্লিষ্টরা।

দৈনিক সরোবর/কেএমএএ