দুর্বল ব্যাংকগুলোয় পুনর্মূলধনীকরণ দ্রুত দরকার
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৫, ০৩:১৭ দুপুর

সরকারের পতনের পর দেশের ব্যাংক খাতের লুটপাটের প্রকৃত চিত্র প্রকাশ পেতে থাকে। এতে আস্থা সংকটে পড়ে ব্যাংক খাত। আতঙ্কে টাকা তুলতে থাকেন মানুষ। অনেক ব্যাংকে টাকা তোলার হিড়িক পড়ে যায়। এতে ব্যাংকের বাইরে অর্থাৎ মানুষের হাতে টাকার পরিমাণ বেড়ে যায়। তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। ব্যাংক খাতে আবার আস্থা ফিরছে। মানুষের ঘরে রাখা টাকা ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে। এতে ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ বেড়েছে। এদিকে ব্যাংক খাতের আস্থা ফেরায় ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়ছে। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম ১৫ দিনে ১৩১ কোটি ২২ লাখ ৩০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে); যার পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার ৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, গত জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে ব্যাংক থেকে মানুষের টাকা তুলে নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছিল। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বেশকিছু ব্যাংকের প্রকৃত অবস্থার চিত্রও প্রকাশ পায়। এতে অনেক গ্রাহক আতঙ্কিত হয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেন। ধীরে ধীরে এই পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। এর পাশাপাশি ব্যাংকে আমানতের সুদ হারও বেড়েছে। এ কারণে গ্রাহকরা আবার তাদের হাতে থাকা টাকা ব্যাংকে ফিরিয়ে আনছেন। এ কারণে এদিকে বাড়ছে আমানত, অন্যদিকে ব্যাংকের বাইরে থাকা অর্থের পরিমাণ কমছে। দেশের ইতিহাসে গত ডিসেম্বর মাসে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার বা ২৬৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। অর্থবছরের হিসাবে গত আগস্ট থেকে টানা ৬ মাস দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
বলা বাহুল্য, অর্থ পাচার ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এ কারণে হুন্ডি চাহিদা কমে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ছে। ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ বেড়ে গেলে সেটি অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হয়। মানুষের হাতে থাকা টাকা ব্যাংকে ফিরলে একদিকে তারল্য পরিস্থিতি ভালো হয়, অন্যদিকে ঋণ দেওয়ার মতো তহবিলের পরিমাণ বৃদ্ধি দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। ব্যাংকিং খাত থেকে অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ গ্রহণ, খেলাপি ঋণের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং দুর্বল ব্যাংকগুলোর অনিশ্চিত অবস্থা আমানতকারীদের আস্থা কমিয়ে দিয়েছিল। ফলে অনেকে টাকা তুলে নিয়ে সঞ্চয়ের বিকল্প পথ খুঁজছিলেন। তাই বেনামি ঋণ দেওয়া রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দুর্বল ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার উন্নতির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নজরদারি বাড়িয়েছে। ফলে ভালো ব্যাংকগুলোর প্রতি আমানতকারীদের আস্থা বাড়তে শুরু করেছে। তারা এখন নতুন করে টাকা জমা দিতে শুরু করেছেন। আমাদের প্রত্যাশা, আমানতকারীদের পূর্ণ নিরাপত্তা এবং দুর্বল ব্যাংকগুলোয় পুনর্মূলধনীকরণে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ।
দৈনিক সরোবর/কেএমএএ