ঢাকা, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১

রিজার্ভ বৃদ্ধিতে আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০২৪, ০৩:২৪ দুপুর  

বৈদেশি রেমিট্যান্স পালে যখন ক্রমবর্ধমান উন্নতীর হাওয়ার মধ্যেই আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের তৃতীয় কিস্তি অর্থছাড়ের শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়ে আলোচনা করতে একটি মিশন আগামী ৪ ডিসেম্বর ঢাকায় আসছেন। বাংলাদেশের প্রকৃত রিজার্ভ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে ব্যাংক খাতে ঋণের সুদহার বাড়লেও মূল্যস্ফীতি এখনো ১০ শতাংশের বেশি। রাজস্ব সংগ্রহের গতিও কম। ভর্তুকির চাপও আছে। খেলাপি ঋণও বেড়ে পৌনে তিন লাখ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এদিকে আর্থিক খাত সংস্কারে বহুমুখী কার্যক্রমে হাত দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তা আইএমএফের দলের সঙ্গে অনুষ্ঠেয় বৈঠকগুলোয় তুলে ধরবে বাংলাদেশ। মিশনটি ঢাকা থেকে ফিরে গিয়ে তাদের প্রধান কার্যালয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে। ওই প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করবে চতুর্থ কিস্তির অর্থছাড় ও বাড়তি সহায়তার বিষয়টি। এবারের মিশনটি বেশ বড় হচ্ছে। কমপক্ষে ১০ সদস্যের এ মিশনটি এবার ১৪ দিন ঢাকায় অবস্থান করবে। এতে নেতৃত্ব দেবেন আইএমএফের গবেষণা বিভাগের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রোইকোনমিকসের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও।

বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স আসা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে রেমিট্যান্স আসা দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত তিন মাসের ব্যবধানে রেমিট্যান্স দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের করা বিপুল ঋণ পরিশোধের চাপ যখন বাড়ছে, তখন রেডর্ক পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে অন্তবর্তী সরকারের পাশে থাকছেন প্রবাসীরা। ফলে বৈধপথে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ হু হু করে বাড়ছে। এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচির অতিরিক্ত আরও ৩০০ কোটি ডলার অতিরিক্ত সহায়তা চায়। এ বিষয়ে আইএমএফ শুরুতে ইতিবাচক সাড়া দিলেও পরে তা পিছিয়ে যায়। এটি নিয়ে আইএমএফের বার্ষিক সভার সময়েও সাইড লাইনে আলোচনা হলেও চূড়ান্ত হয়নি। আগামী ডিসেম্বরে চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড় হওয়ার কথা। এর আগে তৃতীয় কিস্তির অর্থছাড়ের সময় যেসব শর্ত বাস্তবায়নের কথা বলেছিল, সেগুলো অগ্রগতি পর্যালোচনা ও বাড়তি অর্থ সহায়তা দেওয়ার বিষয়টিও পর্যালোচনা করা হবে।

বলা বাহুল্য, চার মাসে রেমিট্যান্স ৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে অবস্থান করছে। এ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বেড়েছে ২৪ শতাংশ। চলতি নভেম্বরের প্রথম ২৩ দিনে ১৭২ কোটি ৬৪ লাখ মার্কিন ডলার (১.৭৩ বিলিয়ন) রেমিট্যান্স এসেছে। তা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২০ হাজার ৭১৬ কোটি টাকার সমান। এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি ডলার। গত অক্টোবরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২৪০ কোটি ও সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ডলার। দেখা যাচ্ছে, এ দুই মাসে একই পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে। অথচ গত বছরের অক্টোবরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৭ কোটি ডলার। অর্থাৎ বৃদ্ধির হার ১৬ শতাংশ। আমরা জানি, ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্র করে প্রবাসীরা জুলাইয়ে রেমিট্যান্স বর্জনের ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু হাসিনা সরকার পতনের পর গতি বেড়ে যায় প্রবাসী আয়ে। এতে শক্তিশালী হচ্ছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। আমাদের প্রত্যাশা, সংস্কারের বিষয়ে সরকারের নানা পদক্ষেপে আইএমএফের সন্তুষ্ট হবে।

 দৈনিক সরোবর/কেএমএএ