শিশুশ্রম বন্ধে সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি
প্রকাশিত: অক্টোবর ০৩, ২০২৪, ১০:৫৯ দুপুর

বাড়ছে প্রাথমিকে ঝরে পড়ার সংখ্যা। যে বয়সে নিয়মিত স্কুলে যাওয়ার কথা, ওই বয়সে তাদের কাঁধে চেপে বসে পরিবার চালানোর বোঝা। বয়সের তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হচ্ছে তারা। জীবিকার তাগিদে স্কুল ছেড়ে ওয়ার্কশপে ওয়েল্ডিং মিস্ত্রির কাজ করতে হয়। জীবনের ঝুঁকি জেনেও পরিবারের হাল ধরতে এসব কাজে বাড়ছে শিশুদের অংশগ্রহণ। ফলে একদিকে কমছে শিশুশিক্ষার হার, অন্যদিকে বাড়ছে ঝরেপড়া শিশুর সংখ্যাও। শৈশবের গণ্ডি পার না হলেও বহু শিশু কাঁধে তুলে নিয়েছে সংসারের দায়িত্ব। এমন শিশুশ্রমিকের সংখ্যা অসংখ্য। প্রতি বছরই যুক্ত হচ্ছে নতুন মুখ। কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় নিষেধাজ্ঞা থাকলে তা মানে না কোনো প্রতিষ্ঠানই। এসব কাজের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে শিশুরা। বিশেষজ্ঞদের দাবি, শিশুশ্রম বন্ধে সরকারের আইন থাকলেও এর কোনো প্রয়োগ নেই। একই সঙ্গে বাস্তবায়নে নেই কোনো তদারকি কমিটি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশু যারা বেতন বা অবৈতনিক উভয় ক্ষেত্রে এক বা একাধিক ঘণ্টা (প্রতি সপ্তাহে) কাজ করে তাদের শিশুশ্রমিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অন্যদিকে জাতিসংঘ শিশু জরুরি তহবিল (ইউনিসেফ) শিশুশ্রম বলতে ‘শিশুর স্বাস্থ্য ও শিক্ষাকে প্রভাবিত করে’ কাজকে বোঝায়। শিশুশ্রম হলো শৈশব কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত করে তাদের শোষণ করে। সম্প্রতি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও সিএনজিতে শিশুচালকদের দিয়ে পরিবহনসেবা দেওয়া হচ্ছে। এতে যেমন বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা, তেমনি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত।
বলার অপেক্ষা রাখে না, শিশুশ্রম বন্ধে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। একই সঙ্গে নিয়মিত তদারকি কার্যক্রমও পরিচালনা করা হয় না। এছাড়া কত সংখ্যক শিশু এ মুহূর্তে কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকির মধ্যে আছে, এর হিসাব নেই কারো কাছে। আমরা জানি, বাংলাদেশে ১৯৯২ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) শিশুশ্রম বন্ধ করতে কর্মসূচি গ্রহণ করে। প্রতি বছর নিয়ম করে শিশুদিবস ও শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস পালন করা হলেও বাস্তবিক অর্থে এটি কোনো কাজে আসছে না। তাই এটি বন্ধে প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সময়োপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। প্রত্যেক শিশুর সুস্থ ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ এবং সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে কাজ করা উচিত। শিশুশ্রমের মৌলিক কারণগুলো খুঁজে বের করে তা সমাধান করতে হবে। তাদের সুস্থ ও উন্নত জীবনযাপনের জন্য যুগোপযোগী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও রাষ্ট্রীয়পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ করে প্রচার চালাতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা, শিশুশ্রম বন্ধে কঠোরভাবে দমনসহ আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করবে কর্তৃপক্ষ।
দৈনিক সরোবর/কেএমএএ