ঢাকা, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১

দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল পর্যায়ে আনা জরুরি

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪, ১১:৩৬ দুপুর  

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে বর্তমানে আছে ২ হাজার ৪৩০ কোটি ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে এর পরিমাণ ২ হাজার কোটি ডলারের কাছাকাছি। এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬০ শতাংশ রেমিট্যান্স বেড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আন্তঃব্যাংক বাজার থেকে ২০ কোটি ডলারের বেশি কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাদের লক্ষ্য রয়েছে স্থানীয় ব্যাংকগুলো থেকে প্রতি মাসে ১০০ কোটি ডলার কেনা। এতে কয়েক মাসের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা হয়। অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিকল্পনা অনুযায়ী সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভাঙচুরসহ আন্দোলনে সহিংসতার কারণে দেশের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অবশ্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা হয়নি। তবে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা ডলার সংকট এখন আরো তীব্র হয়েছে। ফলে বিপর্যস্ত অর্থনীতির ক্ষত সারিয়ে চাঙা করতে হলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করতে হবে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, অনেক দিন থেকেই দেশে রেমিট্যান্স আসার প্রবাহ কম ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীরা মুখ ফিরিয়ে থাকা বেশি করে রেমিট্যান্স পাঠাতে শুরু করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে ঋণ, অনুদান ও এফডিআই আসার পথ তৈরি হয়েছে। এসবের ইতিবাচক একটা প্রভাব বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে পড়ছে। ফলে যেখানে জুলাই মাসের হিসাবে চলতি দেনা বাদ দিয়ে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ ছিল ১৩ দশমিক ২২ বিলিয়ন, সেখানে সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহান্তেই দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। আবার বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ রিজার্ভও কমে আশঙ্কাজনক অবস্থায় নেমে গেছে। ওই জায়গা থেকে আর্থিক খাতের সংস্কার এখন খুবই জরুরি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকে সঞ্চিত রিজার্ভের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। এরপরও সামষ্টিক অর্থনীতিতে বর্তমানে সংকট রয়েছে।

বলা বাহুল্য, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন দাতাদেশ ও সংস্থা অনুদান ও ঋণ মিলিয়ে বাংলাদেশকে মোট ১৮ হাজার ৭৬৪ কোটি ডলার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তা বর্তমান বাজারমূল্যে দেশি মুদ্রায় ২০ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার মতো। এর প্রায় ৩২ শতাংশ বা এক-তৃতীয়াংশ এখনো ব্যবহার করতে পারেনি বাংলাদেশ। বিদেশি সহায়তা ব্যবহার না করতে না পারার হার ক্রমেই বাড়ছে। গত জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সব মিলিয়ে বাংলাদেশ বিদেশি সাহায্য ব্যবহার করতে পেরেছে ১২ হাজার ৬৮৭ কোটি ডলার। এছাড়া দুর্নীতিসহ বিভিন্ন কারণে ১ হাজার ৪২২ কোটি ডলার প্রতিশ্রুতি বাতিল করেছে দাতা সংস্থা ও দেশগুলো। বাকি ৪ হাজার ৬৫৫ কোটি ডলার এখন পাইপলাইনে পড়ে আছে। তা বাংলাদেশ চাইলে ব্যবহার করতে পারে। শুধু তাই নয়, দেশের ব্যাংকিং খাতের অবস্থা খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এখান থেকে কয়েক লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। ফলে ঋণগুলো পাওয়া গেলে ব্যাংকিং খাত একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে আসবে। একই সঙ্গে রিজার্ভ বাড়বে এবং ডলারের দামও স্থিতিশীল হবে। এভাবেই পুরো অর্থনীতি একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে আসবে। আমাদের প্রত্যাশা, দেশের অর্থনীতি বাঁচাতে যা যা করণীয় তা করবেন সংশ্লিষ্টরা।

দৈনিক সরোবর/কেএমএএ