ঢাকা, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১

স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ নিশ্চিত করা জরুরি

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২৪, ০৪:৪৯ দুপুর  

সাধারণ মানুষের কাছে সংবাদ পৌঁছানোর কাজটি করেন সাংবাদিকরা। এতে আসে নানা বাধা। এমনই বাধার মুখোমুখি হয়েছেন গতকাল বৃহস্পতিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার স্মরণে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি কেন্দ্র করে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছেন সাংবাদিকরা। ছবি এবং ভিডিও করা যাবে না বলে প্রকাশ্যে মাইকিং করা হয়েছে। এছাড়া পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিকদের কেউ কেউ দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন। গতকাল সকাল থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের আশপাশ এলাকায় অবস্থান নেয় বিভিন্ন বয়সের একদল মানুষ। তাদের প্রত্যেকের হাতে লাঠি জাতীয় বস্তু, ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প, স্টিলের পাইপ ছিল। কপালে পতাকা বেঁধে রাস্তায় অবস্থান নিয়েছিলেন তারা। কলাবাগান থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরমুখী বিভিন্ন ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশায় থাকা যাত্রীদের তল্লাশি করা হয়। এমনকি তল্লাশি করা হয় বিভিন্ন গাড়ি। বাসে করে যাওয়া যাত্রীদের জানালা বন্ধ করে বসে থাকার হুমকি দেওয়া হয় এবং বারণ করা হয় কোনো ধরনের ছবি বা ভিডিও করতে। উল্লেখ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১৫ আগস্টের ছুটি বাতিলের কথা জানালেও শোক দিবস বাতিলের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তাই গতকাল সকাল থেকে জাতীয় শোক দিবস পালনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন অনেকে। শ্রদ্ধা জানাতে এসে হেনস্তার শিকার হন তারা। সেসব খবর সংগ্রহে বাধার সম্মুখীন হন সাংবাদিকরা।

জানা গেছে, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে দায়িত্ব পালন করছিলেন ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদক। সেখানে অবস্থান করা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের ছবি তোলার চেষ্টা করেন তিনি। তখন তার কাছ থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে ছবি ডিলিট করতে বাধ্য করা হয় বলে জানিয়েছে ডেইলি স্টার। সেখানে হ্যান্ড মাইকে সাংবাদিকদের ছবি না তুলতে এবং ভিডিও ধারণ  করতে নিষেধ করা হয়। সাংবাদিকদের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের আশপাশের বাসিন্দাদেরও ছবি তুলতে বা ভিডিও ধারণ না করতে হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা করা হয়। এমন কয়েকজন সাংবাদিক জানান, সকাল থেকে মোবাইল ফোনে ছবি ও ভিডিও ধারণে আপত্তি শুরু করেন সেখানে উপস্থিত ছাত্ররা। এ বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটিও হয় তাদের। পরে হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা করা হয়, ‘কোনো ছবি তোলা যাবে না, ভিডিও ধারণ করা যাবে না।’ এছাড়া কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী মোবাইল ফোনে ছবি ধারণ করলে তাদের মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। পরে ধারণকৃত ছবি ডিলিট করতে বাধ্য করা হয়। অন্যদিকে রাস্তায় একজনকে পেটানোর পর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এ সময় ছবি তোলা ও ভিডিও করা হলে একজন বলে ওঠেন, ‘ছবি তুলছেন কে? ছবি তোলা যাবে না।’ ওই ব্যক্তি বেশ উত্তেজিতভাবে বলেন, ‘তুললে খবর আছে, নামাইয়া পিটামু।’  তাহলে কি সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন না?গণমাধ্যমের কাজে বাধা দেয়ায় আমরা তীব্র নিন্দা জানায়। 

আমরা বলবো, গণমাধ্যমকর্মীদের পেশাদারি কাজে বাধা দেয়া শুভবুদ্ধির কাজ নয়। আমরা চাই, গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতা যেন ক্ষুণ্ন না হয়। এছাড়া সবারই স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ ও চলাফেরা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তাই যারা গণমাধ্যমকর্মীদের পেশাদারি কাজে বাধা দিয়েছে, তাদের আনা প্রয়োজন। অতীতের মতো কারো কণ্ঠ রোধ করা মানে আমরা শিক্ষা নিতে পারিনি।সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনকালে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়া খুবই উদ্বেগের। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আমাদের প্রত্যাশা, পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকরা যেন আর হয়রানির শিকার না হয় এদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখবে।