ঢাকা, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৯ ভাদ্র ১৪৩১

সম্পত্তি লিখে নিয়ে বৃদ্ধ মাকে বাড়ি ছাড়া

মাদারীপুর প্রতিনিধি

 প্রকাশিত: মার্চ ২৪, ২০২৪, ০৩:৩৬ দুপুর  

মাদারীপুরে সম্পত্তি লিখে নিয়ে মাকে (৮২) বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ১০ সন্তানের কারও কাছেই ঠাঁই না পেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন বলে অভিযোগ করেছেন মা ফরিদা বেগম।

মাদারীপুর সদর উপজেলার পৌর এলাকার পেয়ারপুর গ্রামের এ ঘটনায় তোলপাড় পুরো এলাকাজুড়ে।

জানা গেছে, ৩৫ বছর আগে স্বামী কলম গড়িয়া মারা গেলে সন্তানদের নিয়ে কষ্টের জীবন শুরু হয় ফরিদা বেগমের। তবে থেমে যাননি তিনি। কষ্ট করে ৪ ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এর মধ্যে বড় ছেলে দেলোয়ার গড়িয়া কাঁচামাল ব্যবসায়ী, মেজ ছেলে কামাল টিটিসিতে চাকরি করেন, এরপর সেজো ছেলে হেমায়েত পল্লি চিকিৎসক, আর ছোট ছেলে কাজল গড়িয়া এলজিইডিতে টেকনিশিয়ান হিসেবে কর্মরত।  

এছাড়া ৬ মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন সভ্রান্ত পরিবারে। তবে জীবনের শেষ সময়ে এসে সন্তানদের সুখ তাকে ছুঁয়ে যায়নি। বরং ঘটেছে উল্টো! সম্পত্তির জন্য ছেলে-মেয়েদের কাছ থেকে পর হয়ে গেছেন ফরিদা বেগম।

ফরিদা বেগম জানান, স্বামীর দান করা ও রেখে যাওয়া ৬৭ শতাংশ ফসলি জমি বিক্রি করে সন্তানদের মানুষ করেছেন। আর বাড়ির ৪৫ শতাংশ জমি বিভিন্ন সময়ে কারণে-অকারণে লিখে নিয়ে গেছে সন্তানরা। দলিলে লাখ লাখ টাকা জমির মূল্য দেখালেও ফরিদাকে দেওয়া হয়নি একটি টাকাও। সম্প্রতি সবকিছু লিখে নেওয়ার পর মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছোট ছেলে কাজল গড়িয়ার বিরুদ্ধে। এমন অবস্থায় বড় ছেলে দেলোয়ার তার মাকে বিষ খেয়ে মরে যেতেও বলছেন। এরপর থেকে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন হতভাগ্য এই মা।

ছোট ছেলে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেওয়ার পর আশ্রয় নিয়েছিলেন বড় মেয়ে সুফিয়া বেগমের বাড়িতে। সম্পত্তির ভাগ কম হওয়ায় বড় মেয়েও তার মাকে রাখতে নারাজ। দেখভাল করবেন না, দেবেন না খাবারও। অন্য ছেলেদের মুখেও একই কথা।  

তবে মাকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেওয়া, আর জোড় করে সবসম্পত্তি লিখে নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা।

ফরিদার ১০ সন্তানের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীও। দোষীদের বিচারের পাশাপাশি ফরিদার সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তাদের। সরকারিভাবে আইনগত সহায়তার পাশাপাশি ফরিদা বেগমের পাশে দাঁড়ানোর কথা জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

ফরিদা বেগম বলেন, একটু সুখের আশা করেছিলাম সন্তানদের কাছে। সেই সুখ আমার কপালে নেই। স্বামীর রেখে যাওয়া ও আমার সব সম্পত্তি ছেলেরা কৌশলে লিখে নিয়ে গেছে। আমার এখন কিছুই নেই। বড় ছেলে ও ছোট ছেলে এ ঘটনার জন্য বেশি দায়ী। আমি আমার সব সম্পত্তি ফেরত চাই। আমি বৃদ্ধ বয়সে একটু শান্তি চাই।

ফরিদা বেগমের বড় মেয়ে সুফিয়া বেগম বলেন, আমাদের বোনদের অল্প সম্পত্তি দিয়েছেন মা। এজন্য মাকে আমরা কেউই বাড়িতে রাখবো না। ছেলেদের সম্পত্তি বেশি দিয়েছেন, তাদের কাছে মা থাকুক।

ফরিদা বেগমের ছোট ছেলে কাজল গড়িয়া বলেন, আমার মায়ের মাথায় একটু সমস্যা আছে। তাই মাঝেমাঝে উল্টাপাল্টা বলেন। আমি মাকে মারধর করিনি আর জোড় করে সম্পত্তিও লিখে নেইনি। মা আমার নামে মিথ্যে কথা বলছেন। আমার মা, ভাইদের একই সম্পত্তি বার বার লিখে দেওয়াই সমস্যা হয়েছে। আমাদের ভাইদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়েছে।

ফরিদা বেগমের সেজো ছেলে হেমায়েত গড়িয়া বলেন, ছোট ভাই কাজল গড়িয়া বেশি সম্পত্তি লিখে নেওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের ভাইবোন সবাইকে সম্পত্তি সমান ভাগ করে দিলে মায়ের এই অবস্থা হতো না। আমার মাকে আমি বলেছি, আমার ঘরে থাকতে ও খাবার খেতে, কিন্তু মা আমাকে সম্পত্তি কম দেওয়ায় তিনি নিজেই আমার ঘরে থাকবেন না।

ফরিদা বেগমের বড় ছেলে দেলোয়ার গড়িয়া বলেন, আমি জোড় করে সম্পত্তি লিখে নেইনি। মা তার ১০ ছেলে-মেয়েকে সম্পত্তি স্বেচ্ছায় লিখে দিয়েছেন। মাকে আমি খাবার দেই না, এ কথা ঠিক না। মা আমার নামে যে অভিযোগ দিয়েছেন, তা সঠিক নয়।

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল মামুন জানান, ফরিদা বেগমের স্বামী মারা গেছে ৩৫ বছর আগে। তিলে তিলে ৪ ছেলে ও ৬ মেয়েকে লালনপালন করে বড় করেছেন তিনি। অথচ, বৃদ্ধ বয়সে এই ফরিদার ঠাঁই হয়েছে মানুষের দ্বারে দ্বারে। এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। ফরিদার পাশে দাঁড়াতে সব ধরনের সহযোগিতা করবে প্রশাসন।

দৈনিক সরোবর/এএস