ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৯ ভাদ্র ১৪৩১

নাটোরের কাঁচাগোল্লাও এবার জিআই পণ্য 

নাটোর প্রতিনিধি

 প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২৩, ০৬:০০ বিকাল  

ছবিঃ প্রতিনিধি

নাটোর নামটি শুনলেই যেন সবার আগে ‘কাঁচাগোল্লা’ নামটি চলে আসে। আর ‘কাঁচাগোল্লা’ নাম শুনতেই ভোজনপ্রিয় মানুষের জিভে জল এসে যায়। এবার নাটোরের সেই বিখ্যাত মিষ্টান্ন কাঁচাগোল্লা নিজস্ব পণ্য হিসেবে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (জিআই) হিসেবে স্বীকৃত পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার নাটোরের জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা সংবাদ মাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট শিল্প নকশা ও ট্রেড মার্কস অধিদফতরের মহাপরিচলক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত জিআই সনদ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

জেলা প্রশাসক অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৯ মার্চ তৎকালীন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ কাঁচাগোল্লাকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের আবেদন করেন। আর শিল্প মন্ত্রণালয় গত ৮ আগস্ট সনদ প্রদান করে।

জানা গেছে, প্রায় আড়াইশ বছর আগে নাটোর শহরের লালবাজারের মধুসূদন পালের দোকান ছিল প্রসিদ্ধ মিষ্টির দোকান। দোকানে মিষ্টি তৈরির জন্য কয়েকটি বড় বড় চুলা ছিল। মধুসূদন প্রতিদিন এসব চুলায় দুধ থেকে দেড় থেকে দু’মণ ছানা দিয়ে রসগোল্লা, পানিতোয়া, চমচম, কালোজামসহ বিভিন্ন রকমারি মিষ্টি তৈরি করতেন। দোকানে কাজ করতেন ১০ থেকে ১৫ জন কর্মচারী। হঠাৎ একদিন দোকানে মিষ্টি তৈরির কারিগর না আসায় চরম বিপাক্ষে পড়েন তিনি। মধুসূদনের চিন্তায় পড়ে গেলেন কে বানাবে মিষ্টি? এত ছানা দিয়ে এখন কী হবে? চিন্তায় তিনি অস্থির। ছানা নষ্ট থেকে রক্ষায় ছানাতে চিনির রস ঢেলে জ্বাল দিয়ে নামিয়ে রাখতে বলেন। এরপর তিনি মুখে দিয়ে দেখেন চিনিমেশানো ছানার দারুণ স্বাদ হয়েছে। 

তবে নতুন এই মিষ্টির নাম কী রাখা যায় তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়। এক পর্যায়ে তিনি ভাবেন যে, ছানাকে তেলে ভেজে চিনির রসে ডোবানোর পর তার নাম করণ হয়েছে রসগোল্লা। আর কাঁচা ছানার রসে ডোবানো হয়েছে বলেই এর নাম দেওয়া হলো কাঁচাগোল্লা। ধীরে ধীরে মিষ্টি প্রেমিরা এই মিষ্টির প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকেন। তখন থেকে মধুসূদন নিয়মিত এই মিষ্টি বানাতে শুরু করেন। কাঁচাগোল্লার সুখ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় মুধুসূদন পালের দোকানে প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন মণ ছানার কাঁচাগোল্লা তৈরি হতো। সে সময় ঢোল বাজিয়ে জানানো হতো কাঁচাগোল্লার কথা।

জয়কালী মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্ত্বাধিকারী  প্রভাত কুমার পাল বলেন, আমার বাব- দাদারা সেই সময় থেকে কাঁচাগোল্লা তৈরি করে আসছে। তাদের এ কর্ম ধরে রাখতে আজও আমরা কাঁচাগোল্লা তৈরি করছি। সারা দেশে কাঁচাগোল্লার সুনাম ও খ্যতি রয়েছে। আজ আমাদের কাঁচাগোল্লা জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। আমরা যারা এ পেশার সঙ্গে রয়েছি সকলে অনেক খুশি।

নাটোরের জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, নাটোরের ঐতিহ্যবহনকারী জনপ্রিয় পণ্য কাঁচাগোল্লা এখন জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমরা অনেক গর্বিত। ভবিষতে এ পণ্যকে আরও বিশ্বব্যাপী আরও প্রসার ঘটাতে চাই। সেজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরণের  প্রয়োজন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

দৈনিক সরোবর/এএস