ঢাকা, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

সম্পৃক্ততা না পেলে মামলায় নাম বাদ

সরোবর প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪, ০৮:৩১ রাত  

আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যেসব মামলা হচ্ছে, সেগুলোর প্রাথমিক তদন্তে কোনো আসামির সম্পৃক্ততা না পাওয়া গেলে মামলা থেকে তার নাম প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশের সদর দপ্তর। সেই সঙ্গে সঠিক তথ্যপ্রমাণ ছাড়া এসব মামলায় কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা যাবে না বলেও নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (কনফিডেন্সিয়াল) কামরুল আহসানের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত ১০ সেপ্টেম্বর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ চিঠি জারি করা হয়েছে।

পুলিশের এই নির্দেশনার বিষয়ে জানতে ওই কর্মকর্তার মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি সাড়া দেননি। এছাড়া জনসংযোগ বিভাগ থেকেও এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে ওই চিঠি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বিভিন্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

বর্তমানে পিবিআইয়ের প্রধানের দায়িত্বে থাকা ডিআইজি মোস্তফা কামাল চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মামলার প্রাথমিক তদন্তে যদি প্রমাণিত হয় যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি জড়িত নয়, তাহলে তাকে কেন গ্রেপ্তার করে হয়রানি করব আমরা?

আর মামলা থেকে নাম প্রত্যাহার নিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্য, মূল বিষয়টি হচ্ছে, মামলায় যখন পুলিশ রিপোর্ট দেবে, সেখানে তার নাম থাকবে কি থাকবে না। পুলিশ সদর দপ্তরের ওই চিঠিতে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির প্রথম সভার কার্য বিবরণীর বরাত দিয়ে আরো বলা হয়েছে, জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থান ঘিরে হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য মামলায় তদন্ত ছাড়া কোনো সরকারি কর্মকর্তা ব্যক্তির সম্পৃক্ততার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া না গেলে তাদের নামও প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নিতে হবে।

এই চিঠির প্রাপ্তির বিষয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌসের বলেছেন চিঠির বিষয় তিনি শুনেছেন তবে হাতে পাননি।
তিনি বলেন, র‌্যাব সব সময় আইনের মধ্য থেকেই তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকে। যাদের গ্রেপ্তার করা হয় তাদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ র‌্যাবের হাতে থাকে। গ্রেপ্তারের আগে সব তথ্য যাচাই-বাছাই করি আমরা।

ক্ষমতার পালাবদলের পর গত এক মাসে বিগত সরকারের মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে প্রায় পৌনে তিনশ মামলা হয়েছে আদালতে এবং দেশের বিভিন্ন থানায়।

এসব মামলায় নাম প্রকাশ করে আসামি করা হয়েছে ২৬ হাজারের বেশি মানুষকে; অজ্ঞাতপরিচয় আসামি রয়েছে দেড় লাখের ওপরে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে জুলাইয়ের প্রথম দিন থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীকে গুলি চালাতে নির্দেশ দিয়ে হত্যা এবং নির্যাতন চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে এসব মামলায়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামেই ১৩০টির বেশি মামলার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, যার মধ্যে ১১৯টিতেই হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। বাকি ১১টি মামলা হয়েছে হত্যাচেষ্টা ও অপহরণের অভিযোগে।

গণআসামি করে দায়ের করা এসব মামলা বিচারের ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। এছাড়া যাচাই-বাছাই না করে মিথ্যা বা ভুয়া মামলা দিয়ে নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি না করার অনুরোধ এসেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে।

তারা বলছেন, জুলাই-অগাস্টের গণ আন্দোলনে হতাহতের বিচার চেয়ে দেশজুড়ে যেসব মামলা হচ্ছে, সেগুলোর ধরণ যেন আওয়ামী লীগ আমলের ‘গায়েবি’ মামলার মতই। এতে করে ভুক্তভোগীর পরিবার সঠিক বিচার পাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে।

দৈনিক সরোবর/এএস