ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৯ ভাদ্র ১৪৩১

ইসলামে দাঈর দায় ও দায়িত্ব

সরোবর ডেস্ক

 প্রকাশিত: আগস্ট ০৯, ২০২৪, ০৫:৫২ বিকাল  

দাওয়াত অর্থ আহ্বান, আর দ্বীনের পথে আহবানকারীকে সাধারণত দাঈ বলে। দাঈর বিশেষ কিছু গুণ থাকা জরুরি। অন্যথায় দাওয়াতের সুফল পাওয়া যায় না। ইসলামের দৃষ্টিতে দাঈর আবশ্যকীয় গুণাবলী নিচে তুলে ধরা হলো।

গভীর জ্ঞান
দাঈ যে বিষয়ে দাওয়াত দেবে, সে বিষয়ে তাঁর গভীর জ্ঞান (ইলম) থাকা উচিত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,আপনি বলুন, এটাই আমার পথ, আল্লাহর প্রতি মানুষকে আমি আহ্বান করি জেনে-বুঝে। (সুরা ইউসুফ: ১০৮)

নিজের আমলে গুরুত্ব দেওয়া
দাঈর জন্য বাঞ্ছনীয় এবং আবশ্যক গুণাবলীর মধ্যে এটিও একটি যে লোকদের যে বিষয়ের প্রতি দাওয়াত দেবে নিজের মধ্যে আগে তা বাস্তবায়ন করবে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন,হে মুমিনগণ, তোমরা যা করো না তা তোমরা বলো কেন? তোমরা যা করো না তোমাদের তা বলা আল্লাহর নিকট অতিশয় অসন্তোষজনক। (সুরা সফ: ২-৩০)

ইখলাস
দাঈর কর্তব্য হচ্ছে দাওয়াতকর্মে আল্লাহর একনিষ্ঠ হওয়া। ইখলাসহীন আমল যেমন গুরুত্বহীন, তেমনি একনিষ্ঠতা ছাড়া দাওয়াতও সুফল বয়ে আনে না। এজন্য দাওয়াত হবে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে এবং সালাত কায়েম করতে ও জাকাত প্রদান করতে; এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত ধর্ম। (সুরা বায়্যিনাহ: ৫)

সত্যবাদিতা
আল্লাহর পথের দাঈকে অবশ্যই সত্যবাদী হতে হবে। সত্য-মিথ্যার সংমিশ্রণ কিংবা রাজনৈতিক ছলচাতুরি মিশিয়ে দাওয়াতকে কলুষিত করা সম্পূর্ণ নাজায়েজ। আল্লাহর আদেশ স্পষ্ট যে, মিথ্যাবাদীদের কথায় আকৃষ্ট হওয়া যাবে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো। (সুরা তাওবা: ১১৯)

ধৈর্য ও সহনশীলতা
একজন সফল দাঈ হতে হলে অবশ্যই পরম সহিষ্ণু ও ধৈর্যশীল হতে হবে। যেমন ছিলেন রাসুলুল্লাহ (স.)। দাওয়াতি ময়দানে তাঁকে অনেক দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু তিনি কখনো বিচলিত হননি, বরং ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবেলা করেছেন। তাই তাড়াহুড়া ও কঠোর নীতি গ্রহণ করা থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আল্লাহ তাআলার নির্দেশ-হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা সহনশীলতা ও নামাজের মাধ্যমে আমার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করো, নিশ্চয় আল্লাহ সহনশীলদের সঙ্গে আছেন। (সুরা বাকারা: ১৫৩)

দৃঢ়তা
যেকোনো পরিস্থিতিতে ঈমানের ওপর অবিচল থাকা দাঈর অন্যতম গুণ। মহান আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই যারা বলে, আমাদের রব আল্লাহ অতঃপর অবিচল থাকে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। তারাই জান্নাতের অধিবাসী, তাতে তারা স্থায়ীভাবে থাকবে, তারা যা আমল করত তার পুরস্কারস্বরূপ। (সুরা আহকাফ: ১৩-১৪)

সদাচারী হওয়া
এটাও দাঈর আবশ্যকীয় গুণ, যা নবীজি (স.)-এর মাঝে অতিমাত্রায় বিদ্যমান ছিল। এ ব্যাপারে নবীজিকে উদ্দেশ্য করে মহান আল্লাহ বলেন,আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন, পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগ ও কঠিন হৃদয় হতেন, তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। কাজেই আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করুন এবং কাজে ও কর্মে তাদের পরামর্শ করুন। অতঃপর যখন কোনো কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহ তাআলার ওপর ভরসা করুন, আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদের ভালোবাসেন। (সুরা আলে ইমরান: ১৫৯)

ক্ষমাশীলতা
একজন দাঈ অবশ্যই ক্ষমাশীল হবে। দাওয়াতের কাজ করতে গিয়ে অনেক আচরণের শিকার হতে পারে, অনেক পরিস্থিতির শিকার হতে পারে। কারো দ্বারা এ রকম কোনো পরিস্থিতিতে পড়লে দাঈর উচিত আল্লাহর জন্য তাকে ক্ষমা করে দেওয়া। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, আপনি ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন করুন, লোকদের সৎকাজের নির্দেশ দিন। (সুরা আরাফ: ১৯৯)

মূর্খদের এড়িয়ে চলা
দাওয়াতের কাজ করার ক্ষেত্রে অনেক সময় সঠিক কোরআন-হাদিস দিয়ে দাওয়াত দেওয়ার পরও অনেক মূর্খরা তা মেনে নিতে চায় না, উপরন্তু ফেতনা করার চেষ্টা করে, নবীজি (স.)-এর যুগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, মূর্খদের এড়িয়ে চলতে। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, সৎকাজের নির্দেশ দিন এবং মূর্খদের এড়িয়ে চলুন। (সুরা আরাফ: ১৯৯)

দৈনিক সরোবর/এমই