ঢাকা, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১

প্রধান প্রকৌশলীসহ বেবিচকের চার কর্মকর্তার দুর্নীতির তথ্য চেয়ে চিঠি

সরোবর প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: মার্চ ১৬, ২০২৫, ০৭:৪০ বিকাল  

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানসহ চার কর্মকর্তার দুর্নীতির তথ্য চেয়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। দুর্নীতির মামলা থাকার পরও বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানকে আবারও এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে তোড়জোড় চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে মন্ত্রণালয়। সে  কারণেই এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতির তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। গত ৯ মার্চ ইস্যু করা হয় চিঠিটি।

চিঠিতে যাদের বিষয়ে তখ্য চাওয়া হয়েছে তারা হলেন—হাবিবুর রহমান, মো. শহীদুল  আফরোজ, মো. জাকারিয়া হোসেন ও শুভাশীষ বড়ুয়া। চিঠিতে এসব কর্মকর্তার অতীত দুর্নীতির তথ্য এবং বর্তমানে মামলা থাকলে তার সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করে বেবিচকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, গত ৯ মার্চ মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে তাদের তথ‍্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আগামী ২৩ মার্চ প্রধান প্রকৌশলীর পদটি খালি হবে। ২২ মার্চ বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে। তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে নানা মহলে তদবির করে আসছেন। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে ৪টি মামলা হয়েছে দুদকে। তার দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তারপরও তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে বেবিচকের কয়েকজন কর্মকর্তা উঠে পড়ে লেগেছেন।

বেবিচকের ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা বলেন, শহীদুল আফরোজের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা বিচারাধীন। তবে যে মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে ওই ঘটনায় বিভাগীয় মামলায় অভিযোগ মিথ‍্যা প্রমাণিত হয়েছে। মামলাটি মিথ‍্যা বলে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মন্ত্রণালয় যেহেতু তথ্য চেয়েছে— সেই জন্য দু-এক দিনের মধ্যে ৪ জনের বিষয়ে তথ্য পাঠিয়ে দেওয়া হবে। মন্ত্রণালয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর। আমরা যতটুকু জানি, হাবিবুর রহমানের পুনরায় নিয়োগের বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি মন্ত্রণালয়।

দুর্নীতির অভিযোগ থাকার পরও হাবিবুর রহমানকে দিয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরের সার্বিক পরিস্থিতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ব্রিফ করার চেষ্টা হয়েছে। নানা সমালোচনার পর বাধ্য হয়ে হাবিবুর রহমান কক্সবাজারগামী বিমানের টিকিট বাতিল করতে বাধ্য হন। তার পরিবর্তে প্রধান উপদেষ্টাকে বিমানবন্দরে সর্বশেষ পরিস্থিতি ব্রিফ করেন বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া।

জানা গেছে, হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে চারটি দুর্নীতির মামলা করেছে দুদক (যার নং (ক)৮২/২০২৫, (খ)৮৩/২০২৫, (গ)৮৪/২০২৫, (ঘ)৮৫/২০২৫)। এসব মামলার অন্য আসামিরা হলেন— সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক সিনিয়র সচিব মহিবুল হক, সাবেক যুগ্ম সচিব জনেদ্রনাথ সরকার, বেবিচকের সাবেক চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান, বেবিচকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মালেক।

বেবিচকের এক কর্মকর্তা বলেন, বোর্ড সভায় তাকে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ নিয়ে বিমানে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।

জানা গেছে, হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ আছে। টেন্ডারের কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ৫ লাখ টাকার ঘুষ নিয়েও কাজ না দেওয়ায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগে  আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ১৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই মামলায় বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান ও সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মালেকের নাম রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আসামিরা যেন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারেন, সেজন্য বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বেবিচক সূত্র জানায়, বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় প্রকৌশল বিভাগ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তিনি দীর্ঘদিন বেবিচকের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কাজ করেছেন। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় দুদক তদন্ত করে। অভিযোগে বলা হয়েছে, বেচিকের যত মেগা প্রকল্প রয়েছে, প্রায় সবগুলোতেই অর্থ-বাণিজ্য করেছেন তিনি।

বেবিচকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা  বলেন, হাবিবুর রহমানের অবসর ছুটি বাতিলপূর্বক চলতি বছরের ২৫ মার্চ থেকে ২০২৭ সারের ২২ মার্চ পর্যন্ত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে করা আবেদনে হাবিবুর রহমানকে নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা আখ্যায়িত করা হয়েছে। তার দীর্ঘ কর্মজীবনে কক্সবাজার বিমানবন্দর (প্রথম পর্যায়) প্রকল্প, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদ্যামান রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ের শক্তিবৃদ্ধিকরণ প্রকল্প, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ের শক্তিবৃদ্ধিকরণ প্রকল্পসহ আরো ছোট-বড় প্রকল্পের পরিচালক পদে নিষ্ঠা ও সাফল্যের সঙ্গে পালন করেন। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য আটটি ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়।

দৈনিক সরোবর/এএস