ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে চাপের মুখে বাইডেন
প্রকাশিত: নভেম্বর ০৪, ২০২৩, ০৮:০৩ রাত

ইসরায়েলকে সমর্থন করে রাজনৈতিকভাবে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন বাইডেন। মোটকথা আরো চাপে পড়ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সহিংসতায় প্রায় মাস খানেক ধরে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে গাজাবাসী। এই চরম দুর্দশার মধ্যে ইসরায়েলকে অন্ধ সমর্থন দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে মার্কিন কংগ্রেস যেখানে শুনানির সময় গাজায় যুদ্ধ বিরতির জন্য বিক্ষোভ করেছে সেখানে বাইডেনের নিজের দলের লোকও ফিলিস্তিন ইস্যুতে মানবিক বিবেচনায় তার বিপক্ষে গিয়ে কথা বলেছে।
যুদ্ধবিরতির জন্য শুধু আরব দেশই না, অনেক পশ্চিমা ও ইউরোপ দেশও আবেদন জানিয়েছে। শুধু তাই না গত সপ্তাহে মিনেসোটায় বক্তব্য দেওয়ার সময় বাইডেনকে থামিয়ে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দেন এক নারী। এ ছাড়া মার্কিন মুসলিমরা আগামী নির্বাচনে বাইডেনকে ভোট দেবেন না বলেও হুমকি দিয়েছেন। শুধু তাই না, মার্কিন আইন প্রণেতারা মার্কিন প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছে যে, ইসরায়েলকে সহযোগিতা করার আগে যেন মানবিক খাতিরে গাজার নাগরিকদের জ্বালানি,পানির মতো বিষয়গুলোর নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা হয়।
মার্কিন রাজনীতিবিদ আলেকজান্দারিয়া ওকাসিয়া করতেজ একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, এখনই সময় প্রেসিডেন্টের ওপর চাপ প্রয়োগ করা, যেন যুদ্ধ বিরতি দেওয়া হয় সেজন্য গাজার নৃশংসতা সম্পর্কে তাকে বোঝানো দরকার। এদিকে গাজায় হামাসের হাতে বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার শর্তে যুদ্ধবিরতি চান বাইডেন। এরই মধ্যে তহবিল সংগ্রহের একটি ক্যাম্পেইনে বক্তৃতা কালে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
এদিকে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে বৈঠকে বসতে নেতানিয়াহুকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন আমন্ত্রণ জানালেও তা প্রত্যাখান করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি সেনারা হামলা অব্যাহত রাখবে। তবে যুদ্ধ বিরতি নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে বিক্ষোভের পাশাপাশি হোয়াইট হাউজ ইসরায়েলের বিপক্ষে কঠোর অবস্থান নিতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে মার্কিন আইনপ্রণেতারা। মার্কিন সিনেটররাও গাজা নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
জেফ মার্কলে বলেন, গাজার বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের উচিত মানবিক সহায়তা করা, নিরাপদে বন্দীদের বের করে নিয়ে আসা। আবার, মার্কিন আইনপ্রণেতারা বলছেন, যুদ্ধবিরতি ছাড়া ইসরায়েল যেভাবে ধারাবাহিকভাবে হামলা চালাচ্ছে তাতে একে তো নৃশংসভাবে মানুষ নিহত হচ্ছে আর পুরো বিষয়টিও অপরিকল্পিত।
এই পরিস্থিতিতে বাইডেন প্রশাসন যে ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে এই নিয়ে চড়ছে চিন্তার পারদ। উল্লেখ্য গত ৭ অক্টোবর সহিংসতা শুরুর পর থেকেই ইসরায়েলকে সামরিকভাবে সাহায্য করে আসছে বাইডেন প্রশাসন।
তবে অন্যান্য ডেমোক্রেটিক নেতারা যুদ্ধবিরতির বিষয়ে এখনো চুপ রয়েছে। শুক্রবার হাউজ মাইনরিটি প্রধান হাকিম জেরেফি বলেন, তিনটি বিষয় হওয়া জরুরি, যেমন হামাসের পরাজয়, বন্দিদের মুক্তি, মানবিক সহায়তা। তবে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিশ্ব নেতারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন তিনি। অন্যদিকে মার্কিন রাজনীতিবিদিন মার্ক ডি সাউলনিয়ার বলছেন, আমি যা দেখছি তা নিয়ে আমার সন্দেহ হচ্ছে। এই ইসরায়েল সরকার কৌশলগভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।
এর আগে ২০২১ সালে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সহিংসতায় অনেকে নেতা ইসরায়েলের সাহায্যের জন্য আহ্বান জানিয়েছিল,এরমধ্যে ওয়ারেনের কথা না বললেই না। কিন্তু চলতি বছর ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সহিংসতার পরিস্থিতি বিবেচনায় পরিস্থিতি পুরোপুরি পাল্টে গেছে। হামলায় বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বিষয়টি কংগ্রেসে পাস হওয়ার সম্ভাবনা কম। ইসরায়েলকে সহযোগিতা করার বিষয়টি মোটামুটি বাদ দেয়া হয়েছে। তো যুক্তিযুক্তভাবেই ডেমোক্রেটরা এখন সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছেন।
ফিলিস্তিনের গাজার হামলার আজ ২৯তম দিন। ইসরায়েলের এই ধারাবাহিক হামলায় ক্ষোভে ফুঁসছে বিশ্ব। প্রতিদিনই নিহত হচ্ছে নারী-শিশুসহ অসংখ্য মানুষ। এরপরেও আসছে না যুদ্ধ বিরতির সিদ্ধান্ত।