ঢাকা, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১

কেন পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নিতে চান ট্রাম্প?

সরোবর ডেস্ক

 প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪, ০৮:৪৬ রাত  

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প রবিবার বলেছেন, তার নতুন প্রশাসন ফের পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করবে। এ বক্তব্যের পর তার সমালোচনা করেছেন পানামা প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো। এছাড়াও ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গ্রিনল্যান্ড নিয়েও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা এবং নিয়ন্ত্রণ একটি সন্দেহাতীত প্রয়োজন।
 
ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদেও এই ভাবনার কথা বলেছিলেন, কিন্তু ডেনিশ কর্তৃপক্ষ তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়। ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প সোমবার বলেন, ডেনমার্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসাবে কেন তিনি হাওয়ারিকে বেছে নিয়েছেন। তবে পানামা খাল নিয়ে ট্রাম্প আসলে ঠিক কী বলেছেন? পানামা খাল কেন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে আলজাজিরা।
 
ট্রাম্প কী বলেছেন?: রক্ষণশীল গোষ্ঠী টার্নিং পয়েন্টের বার্ষিক আয়োজন আমেরিকাফেস্টে আলোচনায় পানামা খালকে সামনে আনেন ট্রাম্প। আরিজোনায় অনুষ্ঠিত ওই আয়োজনে তিনি বলেন, পানামা খালে অতিরিক্ত অর্থ রেখে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে, যেমন প্রতারণা আমাদের সঙ্গে অন্য সব জায়গায় করা হচ্ছে। ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘বোকামি করে এটি দিয়ে দিয়েছে’।
 
আমেরিকা ফেস্টের পর তিনি তার নিজের সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি সংযোগ খালের উপর যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা ওড়া একটি ছবি পোস্ট করেন। তাতে ক্যাপশন দেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের খালে স্বাগতম!’ ট্রাম্পের এ বিবৃতির পর বাগযুদ্ধে জড়িয়েছেন পানামীয় প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো।
 
নিজের এক্স অ্যাকাউন্টে এক রেকর্ডেড বিবৃতিতে তিনি বলেন, পানামা খালের প্রতি বর্গ মিটার এবং আশপাশ এলাকা পানামার অধীনে রয়েছে এবং (পানামার) অধীনেই থাকবে। এ নিয়ে প্রকাশিত সংবাদ ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করে ট্রাম্প লেখেন, ‘আমরা সেটা দেখব।’
 
গত শনিবার ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টে পানামা খালের ওপর চীনের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আভাস দেন। তিনি বলেন, এটা পরিচালনার দায়িত্ব কেবল পানামাকে দেওয়া হয়েছিল, চীন বা অন্য কাউকে নয়। ট্রাম্প এও লেখেন, আমরা কখনোই এটাকে ভুল হাতে পড়তে দেব না!
 
আলজাজিরা লিখেছে, খালটি চীন নিয়ন্ত্রণ করে না। তবে হংকংভিত্তিক কর্পোরেশন সিকে হাচিসন হোল্ডিংস ১৯৯৭ সাল থেকে ক্যারিবীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরের প্রবেশমুখে থাকা খালের দুটি বন্দর পরিচালনা করছে। মুলিনো রোববার এক্স পোস্টে লিখেছেন, পানামা খালের ওপর চীনের প্রভাব নেই। বিতর্ক কী নিয়ে?: প্রশান্ত মহাসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে সংযোগ ঘটাতে কৃত্রিম জলপথ পানামা খাল খনন করা হয়েছিল।
 
আলজাজিরা লিখেছে, খালটি দিয়ে বছরে ১৪ হাজার জাহাজ যাতায়াত করে। বৈশ্বিক বাণিজ্যে জলপথটির হিস্যা গড়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মার্কিন কনটেইনারের ৪০ শতাংশই ওই পথে পরিবহন হয়। এশিয়া থেকে পণ্য আমদানির জন্য খালটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস-এলএনজিসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানির জন্যও যুক্তরাষ্ট্র এ নৌপথ ব্যবহার করে।
 
খালটি কে নির্মাণ করেছে?: খালটি ১৯০৪ থেকে ১৯১৪ সালের মধ্যে নির্মিত হয়, বেশিরভাগ অংশই করে যুক্তরাষ্ট্র। তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট নির্মাণ কাজের তদারকি করেন। মালিক কে?: খালটির মালিক এখন পানামা সরকার।
 
পানামা কবে মালিকানা লাভ করে?: ১৯৭৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার স্বাক্ষরিত এক চুক্তির আওতায় ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র খালটির মালিকানা পানামার কাছে হস্তান্তর করে।
 
ট্রাম্প বলেন, যদি দানের মহৎ পদক্ষেপের নৈতিক ও আইনি- উভয় দিক অনুসরণ করা না হয়, তাহলে আমরা পানামা খাল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করব; পুরোপুরি, দ্রুত এবং কোনো প্রশ্ন ছাড়াই। তবে কীভাবে তা সম্ভব হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। খালটি কি শুকিয়ে যাচ্ছে?: ২০২৩ সালে মধ্য আমেরিকায় যে খরা দেখা দেয়, তার আঁচ পড়ে পানামা খালেও।
 
খালটির জলকপাট পরিচালনা করতে কাছের কৃত্রিম গাতুন হ্রদের ওপর নির্ভর করতে হয়। হ্রদে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় খাল কর্তৃপক্ষ ওই জলপথে জাহাজের সংখ্যা সীমিত করার পাশাপাশি ব্যবহারের মাশুল বাড়িয়ে দেয়।
 
গত অর্থবছরে পানামা খালে জাহাজ চলাচল কমেছে ২৯ শতাংশ। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ হাজার ৯৪৪টি যাতায়াত করেছে খালটি হয়ে, যা আগের বছর ছিল ১৪ হাজার ৮০টি।
 
আলজাজিরা লিখেছে, খালটি দিয়ে জাহাজ চলাচল এখন প্রাক-খরা স্তরে ফিরে এসেছে। তবে আগামী বছর মাশুল বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
 
মুলিনো তার বিবৃতিতে বলেছেন, শুল্কহার খেয়ালখুশি মত ঠিক করা হয়নি। আরও জাহাজ চলাচলের লক্ষ্যে পানামা সরকার যে উন্নয়ন কাজ করছে, তাতে কাজে দেবে বাড়তি শুল্ক থেকে পাওয়া অর্থ।
 
ট্রাম্পের ভাবনা কী?: নভেম্বরের ভোটের আগে ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারে জোর দেওয়া হয়েছিল ‘সবার আগে আমেরিকা‘ নীতির ওপর।
 
তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি একাধিকবার ‘আঞ্চলিক সম্প্রসারণের’ ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন, যার মধ্যে পানামা খালকে তিনি সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন। কানাডার দিকেও নজর দিয়েছেন ট্রাম্প। গেল ১৮ ডিসেম্বর ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লিখেছেন, অনেক কানাডিয়ান চায় কানাডা (যুক্তরাষ্ট্রের) ৫১তম অঙ্গরাজ্য হোক। তাতে কর ও সামরিক সুরক্ষার খরচায় ব্যাপকভাবে তাদের সাশ্রয় হবে। আমি মনে করি, এটি একটি দুর্দান্ত ভাবনা। ৫১তম স্টেট!
 
তবে এ বিষয়ে ট্রাম্প ‘সিরিয়াস’ কি না তা স্পষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে তিনি এই মন্তব্য করেন। ট্রাম্প সম্প্রতি কানাডার পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়ার পর দেশটির অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড পদত্যাগ করেন এবং প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর ওপর পদত্যাগের চাপ বাড়ে। সূত্র: আলজাজিরা, রয়টার্স
 
দৈনিক সরোবর/এএস