ঢাকা, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১

বেড়েছে সবজি মাছ-মাংসেরও

বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না ডিম পেঁয়াজ আলু 

সরোবর প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২৩, ১২:১৫ দুপুর  

বেশ কয়েক মাস হলো অস্থিরতা কাটছেই ডিমের বাজারে। শেষ এক সপ্তাহে প্রতি হালি ডিমের দাম পাঁচ টাকা বেড়ে ৫৫ থেকে ৫৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড়বাজারে কিনলে ডিমের ডজন পড়ছে ১৬০ টাকা, যা পাড়া-মহল্লার খুচরা দোকানে ১৬৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে। অর্থাৎ, ভোক্তাদের এখন একটি ডিম কিনতে গুনতে হচ্ছে ১৫ টাকা। অথচ সরকার প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে।

সরকারের দাম বেঁধে দেওয়া আরেক পণ্য পেঁয়াজ। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি এ পণ্যটির দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। এখন দেশি ভালোমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে। আর আমদানি করা পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

শুরু ডিম-পেঁয়াজ নয়, বাজারে আলুসহ প্রায় সব ধরনের সবজি ও মাছের দামেও অস্থিরতা রয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে অধিকাংশ সবজির দাম আকাশছোঁয়া। পেঁপে ছাড়া অন্য কোনো সবজি ৮০ টাকা কেজির কমে মিলছে না।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষদের ওপর চাপ আরও বাড়ছে। ফলে বাজারের তালিকায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে তাদের। অধিকাংশ মানুষ অস্বাভাবিক বাজার দরে ক্ষোভ প্রকাশও করছেন।

খিলগাঁও তালতলা বাজারের এক ক্রেতা বলেন, সরকার যেসব পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছে সেগুলোর দামও বাড়ছে। আর যেগুলোর বেঁধে দেয়নি সেগুলো তো আকাশ ছুঁয়েছে। সরকার কিছুতেই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। শুধু সংবাদমাধ্যমে বাজার সিন্ডিকেটের কথা বলে দায় এড়ানো হচ্ছে। আমরা অসহায় মানুষ কি এই সিন্ডিকেটের কারণে না খেয়ে মরবো? আর সেটা বসে বসে দেখবে সরকার! তাহলে কি সরকার ব্যবসায়ীদের জন্য, সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষার জন্য নয়!

ওই বাজারে আসা আরেক ক্রেতা বলেন, আমার জন্য বাজার হয়ে উঠেছে অসহনীয়। আগে শখে শখে বাজারে আসতাম। প্রয়োজন না হলেও অনেক কিছু দেখে দেখে কিনতাম। এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসই কিনতে পারছি না। বাজারে যেতে হবে ভাবলেই অস্বস্তি লাগে।

তিনি বলেন, একটার পর একটা জিনিসের দাম বাড়ছে। যা আয় করি তা দিয়ে এখন আর সংসার চলে না। এত দ্রুত খরচ বাড়লে সমন্বয় করবো কীভাবে?

গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খুচরা বাজারে ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম নিধার্রণ করে দেয়। সে হিসাবে গত এক মাসেও এসব পণ্যের বেঁধে দেওয়া দর বাজারে কার্যকর হয়নি। ওই দামে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা, ডিমের ডজন ১৪৪ টাকা এবং আলুর কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকার মধ্যে বিক্রি হওয়ার কথা। অথচ বাজারে এখন পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ১০০ টাকা, আলু ৫০ টাকা এবং ডিমের ডজন ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে বৃষ্টির কারণে গত সপ্তাহে বেড়ে যাওয়া সবজির দাম এখনো কমেনি। এখন বৃষ্টি না থাকলেও সবজির দাম আরো বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, কৃষকের অনেক সবজি খেতে পচে নষ্ট হয়েছে। সরবরাহ বিঘ্ন হওয়ায় দাম বাড়তি।

সপ্তাহের ব্যবধানে বেশকিছু সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। এখন বাজারে গোল বেগুন ১২০-১৪০ টাকা এবং লম্বা বেগুন ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। করলা, কচুমুখি, বরবটি, টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা। আর ঢেঁড়স, পটল, ঝিঙা, চিচিঙ্গা ৮০-১০০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে। তুলনামূলক কম দামের মধ্যে মুলার কেজি ৫০-৬০ টাকা আর পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়।

অন্যদিকে দর বাড়তি মাছ-মাংসেরও। কেজিতে ১৫ টাকার মতো বেড়ে ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ২০০ এবং সোনালি জাতের মুরগির কেজি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সীমিত আয়ের মানুষেরা সবচেয়ে বেশি কেনে পাঙ্গাশ, চাষের কই ও তেলাপিয়া জাতীয় মাছ। বাজারে এসব মাছের কেজিও এখন ২২০ থেকে ২৮০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া রুই, কাতলা, কালিবাউশ ও মৃগেল মাছ বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকায়। মাছ বিক্রেতারা বলছেন, যা কয়েক সপ্তাহ আগের তুলনায় কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেশি বলে ।