ঢাকা, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১

পাকিস্তানকে হারিয়ে ঐতিহাসিক জয় পেল বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক    

 প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২৪, ০৪:৪৮ দুপুর  

অনেক বছর পর লাল বলে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ।২০০৩ সালে মুলতান টেস্টে জয়ের খুব কাছে গিয়েও হেরেছিল বাংলাদেশ। সেবার টাইগারদের হৃদয় ভেঙে পাকিস্তানকে রক্ষা করেছিলেন ইনজামাম উল হক। দুই দশকেরও বেশি সময় পর এবার রাওয়ালপিন্ডিতে টাইগারদের গর্জন! চতুর্থ দিনের শুরু থেকেই ড্রাইভিং সিটে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। তবে মুলতানের সেই স্মৃতি তাড়া করেছে অনেকটা সময় ধরে। অন্তত মোহাম্মদ রিজওয়ান যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত খানিকটা প্রতিরোধ গড়লেও মুলতানের ইনজামাম হতে পারেননি এই উইকেটকিপার ব্যাটার। ফলে প্রথমবার পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ।

পাকিস্তানের বিপক্ষে এর আগে ১৩ টেস্টের মধ্যে ১২ বারই হেরেছিল বাংলাদেশ। সেরা সাফল্য ছিল ড্র। পাকিস্তানের বিপক্ষে অধরা সেই জয় অবশেষে ধরা দিয়েছে। সেটাও আবার প্রতিপক্ষের ঘরের মাঠে, ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে।

টেস্টে বাংলাদেশের এটিই প্রথম ১০ উইকেটে জয়। পাকিস্তান নবম প্রতিপক্ষ, যাদের টেস্টে হারাল বাংলাদেশ। বাকি থাকল শুধু ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশের বাইরে বাংলাদেশের এটি মাত্র সপ্তম জয়, সব মিলিয়ে ২০তম।

রাওয়ালপিন্ডিতে টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছিল পাকিস্তান। প্রথম ইনিংসে সবকটি উইকেট হারিয়ে ৫৬৫ রান করে বাংলাদেশ, লিড পায় ১১৭ রানের। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৬ রানের বেশি করতে পারেনি স্বাগতিকরা। ৩০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে কোনো উইকেট না হারিয়েই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।

নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে এক উইকেটে ২৩ রান নিয়ে পঞ্চম দিনের খেলা শুরু করেছিল পাকিস্তান। দিনের দ্বিতীয় ওভারেই বাংলাদেশকে ব্রেকথ্রু এনে দেন হাসান মাহমুদ। শান মাসুদের ব‍্যাটের কানা ছুঁয়ে বল জমা পড়েছিল লিটন দাসের গ্লাভসে। আম্পায়ার জোরাল আবেদনে সাড়া না দিলে রিভিউ নিয়ে সফল হয় বাংলাদেশ।

মাসুদের ক্যাচ নেওয়া লিটন পরের ওভারেই শরীফুলের বলে বাবর আজমের সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও শূন্য রানে ফিরতে পারতেন পাকিস্তান অধিনায়ক। লিটনের হাতে জীবন পাওয়ার পরও অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি বাবর। নাহিদ রানার বলে বোল্ড হয়েছেন। অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের ডেলিভারিতে কাভার ড্রাইভ করেছিলেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক। ঠিকঠাক খেলতে পারেননি। ইনসাইড এজে বল আঘাত হানে লেগ স্টাম্পে। ৫০ বলে ২২ রান করেন বাবর।

বাবর আজমকে ফিরিয়ে পাকিস্তানের জুটি ভাঙার পরের ওভারেই শূন‍্য রানে সাউদ শাকিলকে ফেরান সাকিব। প্রথম ইনিংসে ১৪১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন শাকিল। পাকিস্তানের পরের উইকেটটাও পকেটে পুড়েছেন সাকিব। তেড়েফুঁড়ে বড় শট খেলতে গিয়েই উইকেটটা বিসর্জন দিলেন আব্দুল্লাহ শফিক। এর মধ্য দিয়ে রেকর্ডের পাতায় নিজের নামটা তুলেছেন সাকিব। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে বাঁহাতি স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট এখন তার। এই মুহূর্তে তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উইকেট সংখ্যা ৭০৬।

সাকিব পেছনে ফেলেছেন নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি স্পিনার ড্যানিয়েল ভেট্টোরিকে। ৩০৫ ওয়ানডে, ৩৬২ টেস্ট আর ৩৮ টি-টোয়েন্টি উইকেট মিলিয়ে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার ছিল ভেট্টোরির। রাওয়ালপিন্ডিতে আব্দুল্লাহ শফিকের উইকেট নিয়ে কিউই স্পিনারকে পেছনে ফেললেন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার।

লাঞ্চব্রেকের আগে পাকিস্তান শিবিরে আঘাত হানেন মেহেদী হাসান মিরাজও। সাকিবের পরপর ২ উইকেটে এমনিতেই ব্যাকফুটে ছিল পাকিস্তান। স্বাগতিকদের আরো বিপদে ফেলে দেন মিরাজ। তার বলে স্লিপে দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়ে আগা সালমানকে ফিরিয়েছেন সাদমান ইসলাম।

মধ্যাহ্ন বিরতির আগে যেখানে শেষ করেছিলেন, বিরতি থেকে ফিরে সেখান থেকেই শুরু করলেন মিরাজ। ঠিকঠাক ব্যাটে লাগাতে পারেননি শাহিন আফ্রিদি। বল গিয়ে আঘাত হানে প্যাডে। এলবিডব্লু হয়ে ফিরেছেন শাহিন। মিরাজের পর আবারও উইকেটের উৎসব সাকিবের। হাওয়ায় ভাসানো বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিডউইকেটে মুশফিকের হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দেন।

বাকি কাজটা একাই সারেন মেহেদী হাসান মিরাজ। একে একে ফেরালেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও মোহাম্মদ আলিকে। সাকিব ও মিরাজ দুজনে মিলেই নিলেন ৭ উইকেট। বাকি তিনটি উইকেট শিকার করেছেন যথাক্রমে শরিফুল, হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা।

পাকিস্তান ২৯ রানের লিড পেলে বাংলাদেশের জয়ের জন্য লক্ষ্য দাড়ায় ৩০ রানের। সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬ ওভার ৩ বলেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। জাকির হাসান অপরাজিত ছিলেন ১৫ রান করে। আরেক ওপেনার সাদমানব অপরাজিত ৯ রান করেছেন।

দৈনিক সরোবর/এমই