ব্রিকসে জয়েনকরতে পারলে উন্নয়ন প্রকল্পে সহযোগিতা পাবো: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২৩, ০৫:০৮ বিকাল

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আবদুল মোমেন বলেছেন, তাদের (ভারতের) সরকার ব্যবস্থা অত্যন্ত পরিপক্ক। তারা নিজেদের জন্য এবং অন্যান্য আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য যদি কিছু বলে থাকে, অবশ্যই এটা অত্র এলাকার উপকারে আসবে।
রবিবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস সম্মেলনে অংশগ্রহণ বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এসময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি শাখার মহাপরিচালক সেহেলি সাবরিন উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের পশ্চিবঙ্গ থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে বাংলাদেশে আলোচনা হচ্ছে, বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারত ওয়াশিংটনকে বার্তা দিয়েছে, এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক কোনো ভাষ্য আছে কি না- জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত সরকার অত্যন্ত পরিপক্ব। তাদের অত্যন্ত শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দেশ। তারা যেটা ভালো মনে করে, সেটাই তারা করেছে। সে সম্পর্কে আমাদের কিছু বলার কোনো কারণ নেই।
তিনি বলেন, জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে আগামী ২১ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকা যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী জোহানেসবার্গে অবস্থানকালীন অনেক রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও করবেন। এ মুহূর্তে নতুন সদস্য করবে কি না জানি না। তবে আমরা এরই মধ্যে ব্যাংকে জয়েন্ট করেছি, আমরা কয়েকটি প্রকল্পে অর্থ সহায়তা পেয়েছি।
মন্ত্রী বলেন, ব্রিকসে জয়েন করতে পারলে উন্নয়ন প্রকল্পে সহযোগিতা পাবো। আমরা আফ্রিকাতে সম্পর্ক বাড়াতে চাই, যেখানে ব্রিকসের মাধ্যমে যেতে সুবিধা হবে। আফ্রিকায় আমাদের (ভালো) সুযোগ রয়েছে, বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্যে। আমাদের বিশ্বাস এতে করে আমাদের সম্পর্কে উন্নতি ঘটবে। সাউথ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সাক্ষাৎ করে বলেছিলেন আমরা ব্রিকসের সংখ্যা (সদস্য) বাড়াতে চাই। আমরা বহু রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য যোগাযোগ করেছি। যেহেতু সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ রয়েছে, সেহেতু দেখা তো হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রশ্ন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানতে চেয়েছেন কোনো দেশ তার কয়েদিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠায় কি না? হাসপাতালে ভর্তি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে এক প্রশ্নে উল্টো ওই সাংবাদিকের কাছেই তিনি এ প্রশ্ন করেন।
দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠেয় ব্রিকস সম্মেলন নিয়ে রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ওই সাংবাদিকের কাছে এই বিষয়ে তথ্যও চান তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি জানি না, কোনো দেশ ওই দেশের কয়েদিকে বিদেশে পাঠায় কি না, চিকিৎসার জন্য। আপনি জানেন, কোনো দেশ পাঠায়?
সাংবাদিকদের উদ্দেশে আবারও একই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, কোনো দেশ পাঠায়, তার দেশের কোনো কয়েদিকে অন্য দেশে চিকিৎসার জন্য? পাঠায় কোথাও? যদি পাঠায়, তাহলে আমাকে বলেন। কিন্তু এ ব্যাপারে আমি জানি না।
৭৮ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা গত ৮ অগাস্ট থেকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেখানে তিনি মেডিকেল বোর্ডের ‘নিবিড় পর্যবেক্ষণে’ রয়েছেন বলে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক জানিয়েছেন।
দুর্নীতি মামলায় দণ্ড নিয়ে কারাগারে যাওয়া খালেদা জিয়া ২০২০ সালে নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে বর্তমানে গুলশানে তার বাসায় থাকছেন। তবে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পরই তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। তার পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে একাধিকবার আবেদন করা হলেও সাড়া মেলেনি।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দণ্ডিত খালেদা জিয়া যে শর্তে মুক্ত রয়েছেন, তাতে তার বিদেশ যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এও বলেছেন, বিদেশ যেতে চাইলে খালেদাকে কারাগারে ফিরে নতুন করে আবেদন করতে হবে।
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো না হলে ‘কঠিন কর্মসূচির’ নিয়ে মাঠে নামার হুঁশিয়ারি বুধবার দিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তার ভাষায়, খালেদা জিয়ার ‘চিকিৎসা না করে’ সরকার সজ্ঞানে এবং জেনেশুনে তাকে ‘মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে’।
খালেদাকে দেশে ‘সর্বোচ্চ চিকিৎসা’ দেওয়া হচ্ছে দাবি করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, এখানে, দেশে সর্বোচ্চ চিকিৎসা তাকে দেওয়া হচ্ছে। আর কয়েদিকে বিদেশে পাঠায় কি না, আমার জানা নাই। আপনি যদি জানতে পারেন, আমরা এটাকে স্বাগত জানাব।
ব্রিকস সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবারের সফরে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীর সংখ্যা সীমিত। সরকারিভাবে মোট ১৪ জন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যাবেন। এমনিতে বাইরের কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি যাবেন, ব্যবসায়ী যাবেন। কারণ, আমাদের বিনিয়োগ, বাণিজ্য বাড়ানোর একটা উদ্দেশ্য রয়েছে। সেজন্য কিছু ব্যবসায়ী যাবেন।
দৈনিক সরোবর/ আরএস