বন্ড লাইসেন্সে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট
সরোবর প্রতিবেদক
প্রকাশিত: এপ্রিল ০৫, ২০২৩, ১১:৩৬ রাত

দশ কাস্টমস কর্মকর্তাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে ভুয়া বন্ড লাইসেন্স তৈরি করে ৯টি এলসির বিপরীতে সরকারের ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আসামিরা সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাভার শাখায় ৯টি এলসি খুলে চট্টগ্রাম বন্দর এবং নারায়ণগঞ্জ আদমজী ইপিজেড হতে পণ্য আমদানির মাধ্যমে ওই রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। যেখানে কাস্টমসের কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে।
বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে ওই চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই দুদক উপপরিচালক মঈনুল হাসান রওশনী আদালতে চার্জশিট দাখিল করবেন বলে সংস্থাটির উপপরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ভুয়া বন্ড লাইসেন্স তৈরি করে মেসার্স পলি কার্টুন অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক ফরহাদ ইবনে জামান ২০১৩ সালের ১ জুন থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাভার শাখায় ৪টি এলসি দ্বারা চট্টগ্রাম বন্দর হতে এবং ৫টি এলসি দ্বারা নারায়ণগঞ্জ আদমজী ইপিজেড হতে পণ্য আমদানি করা হয়। জাল বন্ড লাইসেন্স ব্যবহার করে মোট ৯টি বিল অব এন্ট্রির বিপরীতে চট্টগ্রাম বন্দর ও আদমজী ইপিজেড থেকে শুল্কমুক্তভাবে পণ্য খালাস করে মোট ১ কোটি ৮৫ লাখ ৬০ হাজার ৬৭৭ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, আসামি ফরহাদ ইবনে জামানের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কুমিল্লা শিপিং এজেন্সির পরিচালক আলাউদ্দিন ভুয়া বন্ড লাইসেন্স ব্যবহার করে পণ্য খালাস করে। ৪ এলসির বিপরীতে সরকারের মোট ৫৫ লাখ ৬১ হাজার ৬৩৩ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিতে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছেন।
অন্যদিকে আত্মসাৎ করা ওই রাজস্বের মধ্যে ২০১৩ সালের ১১ আগস্ট ১২ লাখ ৭১ হাজার ৩৮০ টাকা ফাঁকি দিতে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা রতন কুমার মৈত্র ও মুজিবর রহমানের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। অনুরূপভাবে একই বছরের ২২ জুন ১০ লাখ ১৯ হাজার ৩৯৩ টাকা, ৬ অক্টোবর ১২ লাখ ৫২ হাজার ৮৮ টাকা ও ৬ অক্টোবর ২০ লাখ ২৬ হাজার ৭৭২ টাকার রাজস্ব ফাঁকতে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা রেজাউল করিম, কেরামত আলী ফকির, মোহাম্মৎ রুখসানা বেগম ও সেলিম চৌধুরীর সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে দুদক।
তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে আরো জানা যায়, আসামি ফরহাদ ইবনে জামানের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ইসলাম অ্যাসোসিয়েশনের মালিক মো. খাইরুল ইসলাম ৫টি এলসির দ্বারা আমদানি করা পণ্য ভুয়াভাবে সৃষ্ট বন্ড লাইসেন্স ব্যবহার করে সরকারের ১ কোটি ২৯ লাখ ৯১ হাজার ৪৪ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিতে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন।
৫টি এলসির বিপরীতে আমদানি করা পণ্য ভুয়াভাবে সৃষ্ট বন্ড লাইসেন্সের সঠিকতা যাচাই-বাছাই না করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে স্বীয় স্বার্থ সিদ্ধির জন্য কাস্টমস কর্মকর্তারা সহযোগিতা করেছেন। যেখানে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ফরিদ উদ্দীন, বেনু রঞ্জন পাল, খন্দকার গোলাম মোর্তজা ও জাহাঙ্গীর আলমের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা।
এভাবে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাভার শাখা হতে ৯টি এলসি দ্বারা পণা আমদানি করার ভুয়া বন্ড লাইসেন্স দেখিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ও নারায়ণগঞ্জ আদমজি ইপিজেড হতে শুল্কমুক্ত ভাবে পণ্য খালাস করে মোট ১ কোটি ৮৫ লাখ ৬০ হাজার ৬৭৭ টাকা রাজস্ব ফাঁকির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪২০/৪০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
অনুমোদিত চার্জশিটের আসামিরা হলেন- রাজশাহী কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা রতন কুমার মৈত্র, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা এ কে এম মজিবুর রহমান, রেজাউল করিম ও কেরামত আলী ফকির, চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোছাম্মৎ রুখসানা বেগম, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে ঢাকা দক্ষিণের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. সেলিম চৌধুরী, মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ফরিদ উদ্দীন, নারায়ণগঞ্জের আদমজী ইপিজেড কাস্টমস হাউসের সাবেক সহকারী রাজম্ব কর্মকর্তা বেনু রঞ্জন পাল, বেনাপোল কাস্টমস হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা খন্দকার গোলাম মোর্তজা ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম এবং মেসার্স এস এম পলি কার্টুন অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক ফরহাদ ইবনে জামান, কুমিল্লা শিপিং এজেন্সির পরিচালক মো. আলাউদ্দীন ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মেসার্স ইসলাম অ্যাসোসিয়েটসের মালিক মো. খাইরুল ইসলাম।
দৈনিক সরোবর/ আরএস