ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩১

রাজশাহীতে তীব্র দাবদাহে ঝরে পড়ছে আমের গুটি

রাজশাহী প্রতিনিধি

 প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৪, ০৮:৪৩ রাত  

বৈশাখের শুরু থেকে তাপদাহে পুড়ছে রাজশাহী অঞ্চল। তপ্ত কড়াইয়ের মতো তেঁতে উঠেছে পথ-ঘাট। রবিবার রাজশাহীতে তাপমাত্রার পারদ উঠে ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস; এটিই জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এদিকে টানা তাপদাহের কারণে রাজশাহী অঞ্চলে ঝরে পড়ছে আমের গুটি। এরই মধ্যে অনেক বাগানের অন্তত ২০ শতাংশ গুটি ঝরে গেছে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, খরা দীর্ঘস্থায়ী হতে থাকলে গুটিও ঝরতে থাকবে। সে ক্ষেত্রে বাগানে সেচ দিতে হবে ঘনঘন। এমন পরিস্থিতিতে রাজশাহীজুড়ে শনিবার থেকে সাতদিনের হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে; প্রখর রোদ-গরমে সুস্থ থাকতে মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে।

আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সাধারণত ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মাঝারি তাপপ্রবাহ বলা হয়।  এছাড়া ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। আর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর উঠলেই তাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

রাজশাহীর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ শহীদুল ইসলাম বলেন, গত ১৭ এপ্রিল থেকে রাজশাহীতে তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। সেদিন রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৮ এপ্রিল ছিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ১৯ এপ্রিল রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২০ এপ্রিল তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রোববারও তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তাপমাত্রা আরো বেড়ে, এ অবস্থা আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানান এই কর্মকর্তা। এ রকম বৈরী আবহাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন রাজশহী অঞ্চলের আম চাষিরা। নগরীর খড়খড়ি বাইপাসের আমচাষি শরিফুল ইসলাম কাদু বলেন, আমের বোঁটার রস শুকিয়ে যাচ্ছে আর হলুদ আকার ধারণ করে ঝরে পড়ছে। মৌসুমের শুরুর দিকে বেশ ভালো মুকুল এলেও ঘন কুয়াশা ও হালকা বৃষ্টিতে প্রথম দফায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর যে খরা চলছে তাতে গাছে আম ধরে রাখা কষ্টকর।

কাশিয়াডাঙ্গার এনতাজ আলী বলেন, আমের জন্য এ সময় বৃষ্টি খুবই প্রয়োজন। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এবার আমের আকার বেশ ছোট হবে। সে সঙ্গে উৎপাদনও কমবে। গাছে আম না থাকায় মৌসুমের শুরু থেকে দাম চড়া থাকবে। আমের গুটি রক্ষায় প্রতিদিন পানি স্প্রে করে গাছ ধুয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রচণ্ড গরমে এরই মধ্যে অনেক বাগানের অন্তত ২০ শতাংশ গুটি ঝরে গেছে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হবে। গুটি রক্ষায় সেচ প্রয়োজন। সেচের ব্যবস্থা না থাকলে অন্তত সকালে বা সন্ধ্যায় গাছে পানি স্প্রে করতে হবে। 

এ বছর রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর এই চার জেলায় ৯৩ হাজার ২৬৬ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে জানিয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন, এখন থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টন। গত বছর এ অঞ্চলে মোট ১২ লাখ ৭ হাজার ২৬৩ টন আম উৎপাদন হয়েছিল। রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক উম্মে সালমা বলেন, সব উপজেলায় খরা মোকাবিলায় আমের গুটি টিকিয়ে রাখতে চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

দৈনিক সরোবর/এএস