ঢাকা, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১

রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা

পেঁয়াজের আকাশছোঁয়া দাম পাকিস্তানে 

সরোবর ডেস্ক 

 প্রকাশিত: জানুয়ারী ১৮, ২০২৪, ০৭:৩৩ বিকাল  

পাকিস্তানে গত কয়েক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর ফলে, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির যুগে সাধারণ পাকিস্তানিদের পক্ষে পেঁয়াজ কেনা প্রায় দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। স্থানীয়ভাবে পেঁয়াজ সরবরাহে কোনো ব্যাঘাত ঘটায় কিন্তু এই এই দাম বাড়েনি। পেঁয়াজ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মতে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। তারা জানিয়েছেন, পাকিস্তানে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ রপ্তানিতে প্রতিবেশী দেশ ভারতের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা।

যদিও ভারত থেকে পাকিস্তানে পেঁয়াজ আমদানি করা হয় না। কিন্তু ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়েছে পাকিস্তানের বাজারে। গত এক মাসে কয়েকটি শহরে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ১৫০ রুপি (প্রায় ৪৫ ভারতীয় রুপি) থেকে বেড়ে কেজি প্রতি ২৭০ রুপি (প্রায় ৮০ ভারতীয় রুপি) হয়ে গিয়েছে।

ভারত কবে এবং কেন এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে?: ভারত গত বছরের আটই ডিসেম্বর থেকে পেঁয়াজ রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফরেন ট্রেডের পক্ষ থেকে সাতই ডিসেম্বর একটি নির্দেশিকা জারি করে বলা হয়েছে, পরদিন অর্থাৎ আটই ডিসেম্বর থেকে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ থাকবে। একই সঙ্গে এও জানানো হয়েছে নির্দেশিকা জারি করার আগ পর্যন্ত যে কয়টি রপ্তানির অর্ডার রয়েছে, তা সরবারহ করা যাবে।  পাশাপাশি রপ্তানির জন্য যে পরিমাণ পেঁয়াজ ইতিমধ্যে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়েছে তা সরবরাহ করা যাবে। তবে তা করতে হবে পাঁচই জানুয়ারির আগে।

গত বছর ২৮শে অক্টোবর পেঁয়াজ রপ্তানিতে টন প্রতি ন্যূনতম ৮০০ ডলার রপ্তানি মূল্য চালু করে ভারত। প্রাথমিকভাবে এর জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়, ৩১ শে ডিসেম্বর। তবে তার আগেই, সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে কেন্দ্র সরকার। তার কারণ ভারতীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম লাগাম ছাড়িয়ে যেতে শুরু করে। বাজারে পেঁয়াজের জোগান বাড়িয়ে তার দামে লাগাম টানার উদ্দেশ্যে এই সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় সরকার।

স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম যেন না বাড়ে এবং অন্যান্য সব্জির পাশাপাশি পেঁয়াজের দামও যেন মানুষের সাধ্যের মধ্যে থাকে, সেই কারণে এই নিষেধাজ্ঞা।

ভারতে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে বাজারে টমেটো, পেঁয়াজ এবং অন্যান্য আনাজপাতির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্র সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের শীর্ষ অংশীদার দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, কাতার, ভিয়েতনাম, ওমান এবং সিঙ্গাপুর। ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) কর্তৃক ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কাসহ ভারতের একাধিক প্রতিবেশী দেশে পেঁয়াজের দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে না পাকিস্তান। যদিও ভারতের এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়েছে দেশটিতে। কিন্তু কেন?

পাকিস্তানে কেন বাড়ছে পেঁয়াজের মূল্য?: ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পাকিস্তান পেঁয়াজের বড় অর্ডার পেয়েছে, জানিয়েছেন আব্দুল ওয়াহিদ আহমেদ যিনি অল পাকিস্তান ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্টার্স, ইমপোর্টার্স অ্যান্ড মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাথে সম্পৃক্ত।

তিনি বলেন, বিদেশের বাজারে পেঁয়াজের বিপুল চাহিদা রয়েছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওযায় সেই দেশগুলো পাকিস্তানের দিকে তাকিয়ে আছে এবং তারা সেখান থেকেই পেঁয়াজ কিনতে নিতে শুরু করেছে।

ফল ও সবজি রপ্তানিকারক এবং ব্যবসায়ী শাহজাহান বিবিসিকে বলেন, ভারত যখন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল তখন স্থানীয় পাইকারি বাজারে এক মণ পেঁয়াজের দাম ছিল ছয় হাজার থেকে সাড়ে ছয় হাজার রুপি, যা গত এক মাসে বেড়ে মণ প্রতি নয় হাজার টাকারও বেশি হয়েছে। পাকিস্তানে পরিসংখ্যান সংস্থা খাদ্যদ্রব্যের সাপ্তাহিক মূল্য সংগ্রহ করে এবং তার ভিত্তিতেই নির্ধারণ করা হয় ওই দেশের মুদ্রাস্ফীতির হার।

সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, ভারত যে সময় পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করে, সে সময় পাকিস্তানে এক কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল প্রায় ১৫০ রুপি। এই মূল্য পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে বিভিন্ন দামের গড়। কিন্তু এক মাস পর সেখানে পেঁয়াজের গড় দাম ২২০ রুপি পর্যন্ত পৌঁছেছে, যদিও পাকিস্তানের কোনও কোনও অঞ্চলে এই দাম ২৭০ রুপি বা তারও বেশি।

করাচি ফ্রুট অ্যান্ড ভেজিটেবল মান্ডি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জাহিদ আওয়ান বলেন, এই মুহূর্তে বালুচিস্তানে ফসল শেষ হয়ে গিয়েছে এবং তাদের সরবরাহ করছে সিন্ধ অঞ্চল। তার মতে, পাকিস্তান থেকে যদি এই হারে পেঁয়াজ রপ্তানি অব্যাহত থাকে, তাহলে দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পাকিস্তানের সরকার কী বলছে?:রপ্তানির জন্য পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে টন প্রতি পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য ১২০০ ডলার রাখা হয়েছে, অর্থাৎ এই দামের চেয়ে কমে পেঁয়াজ বিদেশে পাঠানো যাবে না। আগে পেঁয়াজের রফতানি মূল্য ছিল টন প্রতি কমপক্ষে ৭৫০ ডলার। যদিও পাকিস্তানের বাণিজ্য 

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে পেঁয়াজের দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, পেঁয়াজের স্থানীয় চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নজর রাখা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী রপ্তানি মূল্য আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রপ্তানি মূল্য বাড়লে বাজারে পেঁয়াজের দর কমবে?: রপ্তানি মূল্য টন প্রতি কমপক্ষে ১২০০ ডলার রেখে পেঁয়াজের স্থানীয় দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান সরকার।

বৈদেশিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ইকবাল তাবিশ বিবিসিকে বলেন, দেশের কোনও পণ্য যাতে খুব বেশি পরিমাণে বিদেশে না যায় সেই কারণে মূল্য নিয়ন্ত্রণের এই পদ্ধতি নেওয়া হয়। তিনি বলেন, কোনও পণ্যের রপ্তানি মূল্য বাড়লে সেটা আমদানির জন্য বিদেশ থেকে আসা অর্ডার কমে যায় এর ফলে সেই পণ্য স্থানীয় বাজারে সহজেই পাওয়া যেতে পারে। তবে তার মতে, রপ্তানি মূল্য না বাড়িয়ে সরকারের উচিত কোটা নির্ধারণ করা যেন বেশি পেঁয়াজ রপ্তানি না করা যায়।

তিনি বলেন, বিদেশে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। পাকিস্তানের তিন থেকে চারটি বড় রপ্তানিকারক সংস্থা রয়েছে যারা বেশি দামে ওই দেশগুলোকে তা বিক্রি করতে পারে এবং এর ফলে দেশে পেঁয়াজের দাম কমবে না। তবে আব্দুল ওয়াহিদ আহমেদ এর সঙ্গে একমত নন। তিনি বলেন, রপ্তানি মূল্য বাড়ায় পেঁয়াজের দাম কমতে পারে এবং একদিনের ব্যবধানে এই দাম প্রতিদিন এক হাজার টাকা কমেছে।আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এর দাম আরও কমবে বলে আশা করছেন তিনি। তথ্য সূত্র: বিবিসি নিউজ বাংলা

দৈনিক সরোবর/এএস