ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৯ ভাদ্র ১৪৩১

তিস্তার বানে সিকিমে ১৫ জনের মৃত্যু, নিখোঁজ শতাধিক

সরোবর ডেস্ক 

 প্রকাশিত: অক্টোবর ০৫, ২০২৩, ০৬:৫৭ বিকাল  

সিকিমে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ফুঁসছে তিস্তা নদী। নদীর তাণ্ডবে আশপাশের এলাকা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। বৃহস্পতিবার শেষ তথ্য মতে ১৫ জনের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। সন্ধান মিলছে না প্রায় শতাধিক সিকিমবাসীর। এর মধ্যে হড়কা বানে তলিয়ে যাওয়া ২৩ ভারতীয় সেনা সদস্যর মধ্যে একজনের হদিস মিলেছে। তিনি জীবিত। বাকি ২২ জনের এখনও সন্ধান মেলেনি।

বরফ গলা পানি আর লাগাতার বৃষ্টিতে বুধবার তিস্তা নদী ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল। তবে এদিন বৃহষ্পতিবার শান্ত হলেও এক অন্য রূপ নিয়েছে দুই দেশের অমীমাংসিত তিস্তা নদী। নদীর পানিতে ভেসে আসছে দেহ, চপ্পল, জামাকাপড়, বাসনপত্র, গবাদি পশু মৃত দেহ থেকে রান্নার গ্যাসের আধভর্তি সিলিন্ডার, বিছানা, আসবাপত্র। যে দৃশ্য বেশ কয়েক বছরে কেউ দেখেছে বলে স্থানীয়রা মনে করতে পারছেন না।

তিস্তায় হড়কা বানে প্রভাব পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ি অঞ্চল দার্জিলিং, কালিম্পং, ডুয়ার্স, জলপাইগুড়ির প্রায় সব সড়কই এখনও পানির নিচে। এই পরিস্থিতিতে ঘুরতে যাওয়া দেশ বিদেশের ৩ হাজার পর্যটক আটকে পড়েছেন। এর মধ্য পশ্চিমবঙ্গের দুই হাজার পর্যটক রয়েছে। উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

মূলত জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ। সড়ক পথে যান চলাচল বন্ধ হওয়ায় পর্যটকদের ফেরার পথ আপাতত বন্ধ।

তিস্তায় হড়কা বানের জেরে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিকিমের পাকিয়ং, গ্যাংটক, নামচি এবং মঙ্গন জেলা। ভেসে গিয়েছে বহু সেতু। সলিল সমাধি ঘটেছে বহু বাড়িঘরের। কিছু জায়গা পানির তোড়ে ভেঙে পড়েছে বড় বড় বিল্ডিং। কাদাস্রোতের তলায় চাপা পড়ে রয়েছে বহু বসতি, সড়কপথ, সেনাছাউনি। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, এই ধ্বংসলীলায় কত প্রাণহানি হয়েছে? এখনও পর্যন্ত ১৫ জনের লাশ মিলিছে। আশঙ্কা আরো বাড়তে পারে। পাঠানো যাচ্ছে না নিত্যপণ্য এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী। সেনাবাহিনীর তরফে অস্থায়ী বিজ্রের তৈরি ব্যবস্থা করছে।

নিম্নচাপের জেরে লাগাতার বৃষ্টিতে শোচনীয় দশা পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গও। পানি আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রাজ্য সেচ দপ্তরের। একইভাবে আরো দুর্যোগের পূর্বাভাস দিয়েছে কলকাতার আবহাওয়া দপ্তর। হাওয়া অফিসের তরফে উত্তরবঙ্গে লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সঙ্গে একাধিক সতর্কতামূলক পদক্ষেপের পরামর্শও দিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা।

আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, উত্তরবঙ্গের সবকটি জেলাতেই প্রবল দুর্যোগের আশঙ্কা রয়েছে। দার্জিলিং থেকে শুরু করে মালদহ, দুই দিনাজপুর, সর্বত্র লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দুর্যোগের অভিঘাত বেশি থাকতে পারে কালিম্পং এবং জলপাইগুড়িতে। সেখানে অত্যধিক ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে দার্জিলিং, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, মালদহ, উত্তর এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে।

হঠাৎ পরিস্থিতি বদল হওয়ায় উৎকন্ঠে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের দার্জিলিং, কালিম্পং ও জলপাইগুড়ির প্লাবিত এলাকাগুলি থেকে সমস্ত বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী বিপর্যয় মোকাবিলায় সমস্তরকম ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্যের মুখ্যসচিবকে বলা হয়েছে। রাজ্যের মন্ত্রী ও শীর্ষ কর্তারা ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গে রওনা হয়েছেন। ত্রাণ ও উদ্ধারকাজের তদারকি করছেন তারা। প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণ ও সম্পত্তিহানি রুখতে সতর্ক রয়েছে প্রশাসন।

পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিস্তার দোমহনী থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত অসংরক্ষিত এলাকায় হলুদ সতর্কতা জারি করেছে রাজ্য সেচ দফতর।

দৈনিক সরোবর/এএস