ঢাকা, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১

টাকা-রুপিতে লেনদেন আলোচনা আরো এক ধাপ এগিয়েছে

সরোবর ডেস্ক

 প্রকাশিত: মার্চ ০৪, ২০২৩, ০৪:০৪ দুপুর  

বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী দেশ ভারতের মধ্যে আমেরিকান মুদ্রা ডলারের পরিবর্তে টাকা-রুপিতে লেনদেনের আলোচনা আরো এক ধাপ এগিয়েছে। এবার দুদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।

গত ২৪-২৫ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ ভারতের শহর বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত জি-২০ অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নরদের বৈঠকের ফাঁকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার এবং ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার গভর্নর শক্তিকান্ত দাস বাংলাদেশ ও ভারত নিজেদের মধ্যে লেনদেনের জন্য বিনিময় মুদ্রা হিসেবে ডলারকে সরিয়ে দেয়ার বিষয়ে আলোচনা করেন।

সরকারি হিসাবে প্রতিবছর বাংলাদেশি নাগরিকরা ভারতে চিকিৎসা, পর্যটন ও শিক্ষা খাতে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি আমদানি যে তিন দেশ থেকে করে তার মধ্যে ভারত অন্যতম।

এই দুই দেশের মধ্যে লেনদেন হয় মার্কিন ডলারে এবং তারপরে তা রুপি বা টাকায় হিসাব করা হয়। এর ফলে উভয় পক্ষকেই বিনিময় হারে কিছু ছাড় দিতে হয়। যেমন: একজন বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডধারী ভারতে কেনাকাটা করলে রুপির পরিমাণ প্রথমে ডলারে এবং এরপর ডলার থেকে টাকায় রূপান্তরিত হয়। শুধু একটি লেনদেনের জন্য ২ বার ডলার রূপান্তরের কারণে কার্ডধারীকে প্রকৃত রুপি-টাকার বিনিময় হারের চেয়ে বেশি অর্থ প্রদান করতে হয়। ভারত থেকে পণ্য ও পরিষেবা আমদানির ক্ষেত্রের একই হিসাব প্রযোজ্য হয়।

এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার এবং ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস এমন একটি ব্যবস্থার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন, যেখানে লেনদেনের ক্ষেত্রে ডলারে রূপান্তর করতে হবে না। ভারতে যাওয়া বাংলাদেশিদের কাছে একটি দ্বৈত মুদ্রা কার্ড থাকবে, যেখানে তারা ভ্রমণের আগে ভারতীয় রুপি যোগ করে নিতে পারবেন। একইভাবে কোনো ভারতীয় বাংলাদেশে ভ্রমণের সময় একইভাবে তাদের কার্ডে টাকা যোগ করে নিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে বিনিময় হার হবে সরাসরি টাকা থেকে রুপি বা রুপি থেকে টাকায়। ভারতের সঙ্গে ব্যবসার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই ব্যবসায়ীরা তাদের মধ্যে লেনদেন সম্পন্ন করতে পারবেন।

গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে এই বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। বৈঠকে আবদুর রউফ তালুকদার জানান, এই পদ্ধতি চালু করা হলে ভারতকে যে পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হয়, তা আর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে দিতে হবে না এবং এর ফলে রিজার্ভের ওপর চাপও কমবে।

বৈঠকে উপস্থিত একজন মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এনইসি সভায় আমাদের গভর্নর প্রধানমন্ত্রীকে এই বিষয়টি অবহিত করে বলেন, রিজার্ভের ওপর চাপ অনেক কমেছে। নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে আমদানি ব্যয়ও বেশ কমেছে। এখন পণ্য রপ্তানি থেকে যে রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশে আসছে তা দিয়েই আমদানি বিল মেটানো সম্ভব। তবে অন্যান্য খাত থেকেও ডলার আসা দরকার। সে ক্ষেত্রে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের সঙ্গে এই ব্যবস্থা সাহায্য করতে পারে। শক্তিকান্ত দাস দ্বৈত মুদ্রার বিষয়ে আগ্রহী।’

জানা যায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দেশের প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে ডলারের পরিবর্তে টাকা-রুপিতে লেনদেন ব্যবস্থা চালু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আরো আলোচনা করে এই বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের এই পদ্ধতিতে বিল পরিশোধের জন্য আরো অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, এর জন্য এই পদ্ধতিতে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকেও যুক্ত করতে হবে। গভর্নর শিগগির বিষয়টি নিয়ে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে। সূত্র: দৈনিক বাংলা