ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৯ ভাদ্র ১৪৩১

শতাধিক ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব জব্দ

সরোবর ডেস্ক 

 প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২৪, ০৯:০৪ রাত  

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তার আমলের মন্ত্রী-এমপি, বিভিন্ন সহযোগীসহ গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার শীর্ষ পদে থাকা ব্যক্তিদের দুর্নীতি, অর্থপাচার ও ঋণ কেলেঙ্কারির খবর বেরিয়ে আসছে। তিন পালানোর সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তিরাও গা ঢাকা দেন। অনেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আটক ও গ্রেপ্তার হন। এমন পরিস্থিতিতে আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দ করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। একই সঙ্গে তাদের  স্ত্রী, সন্তানসহ ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করতে বলা হয়। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ হওয়ার তালিকায় সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, ব্যবসায়ী, গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তি, সাবেক সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাসহ শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে।    

সরকার পতনের পর ১২ আগস্ট সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও তার স্ত্রীর নামে থাকা ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছে বিএফআইইউ। একই সঙ্গে তাদের হিসাবের সব তথ্য চেয়েছে সংস্থাটি। বিএফআইইউ’র পক্ষ থেকে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও তার স্ত্রী শারমিন মুশতারীর ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সব ধরনের টাকা তোলা বন্ধ থাকবে।

একই দিন সাবেক সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রীর নামে থাকা ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাদের হিসাবের সব তথ্য চায় সংস্থাটি। সাবেক ভূমিমন্ত্রীর স্ত্রী রুখমিলা জামান চৌধুরী ওই সময় বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। পরে তড়িঘড়ি করে পর্ষদ ডেকে পদ ছাড়েন রুখমিলা জামান। ১৩ আগস্ট সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, তার স্ত্রী আরিফা জেসমিন কনিকাসহ তার সন্তান এবং তাদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়। ক্ষমতা ছেড়ে হাসিনা দিল্লি পালানোর পর পলক গ্রেপ্তার হন।

একই দিন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তার স্ত্রী সন্তানদের ব্যক্তিগত ও তাদের মালিকানাধীন সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার নির্দেশ দেয় আর্থিক সংস্থাটি। বিএফআইইউয়ের পক্ষ থেকে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে আসাদুজ্জামান খান, তার স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান, ছেলে সাফি মুদ্দাসির খান এবং মেয়ে সাফিয়া তাসনিম খানের নামে থাকা সব ধরনের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট বন্ধ থাকবে। সদ্য সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ সাবেক তিন সংসদ সদস্য ও তাদের স্ত্রী, সন্তান এবং তাদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করে বিএফআইইউ। সাবেক সংসদ সদস্যরা হলেন- আওয়ামী লীগ নেতা জামালপুর-৩ (মাদারগঞ্জ-মেলান্দহ) আসনের মির্জা আজম, সিরাজগঞ্জ-২ (সদর ও কামারখন্দ) এর জান্নাত আরা হেনরী এবং ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) এর সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল।

বিএফআইইউর পক্ষ থেকে ১৪ আগস্ট ব্যাংকগুলোতে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, স্থগিত করা ব্যক্তি ও তাদের স্ত্রী, পরিবারের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সব লেনদেন বন্ধ থাকবে। আগামী ৩০ দিন এসব হিসাবে কোনো ধরনের লেনদেন করতে পারবেন না। প্রয়োজনে লেনদেন স্থগিত করার সময় বাড়ানো হবে।

বিএফআইইউর নির্দেশনায় আরও বলা হয়, যেসব হিসাব স্থগিত করা হয়েছে তাদের হিসাবসংশ্লিষ্ট তথ্য বা দলিল যেমন- হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী ইত্যাদি পাঠাতে বলা হয়।

পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজ ও নাটোর-২ (সদর ও নলডাঙ্গা) আসনের শফিকুল ইসলাম শিমুলের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয় ১৫ আগস্ট। একই সঙ্গে তাদের স্ত্রী, সন্তান এবং মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত রাখতে বলা হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার সাবেক ডিবি প্রধান আলোচিত হারুন অর রশিদ এবং তার স্ত্রী, সন্তান ও তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয় গত ১৮ আগস্ট।

একই দিন ঝালকাঠি-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু তার সন্তান এবং তাদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়।

সরকার পতনের দিন রাতে আমির হোসেন আমুর ঝালকাঠির বাসভবন থেকে বিদেশি মুদ্রাসহ প্রায় ৫ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। পুলিশ জানায়, ৫ আগস্ট দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঝালকাঠি শহরের রোনালসে রোডের আমির হোসেন আমুর বাসভবনে আগুন নেভাতে এসে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা লাগেজ ভর্তি টাকা দেখতে পান। পরে বিষয়টি সেনাবাহিনী ও পুলিশকে জানালে তারা এসে লাগেজ ভর্তি ওই টাকা উদ্ধার করে।

সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার চিঠি দেওয়া হয় গত ১৯ আগস্ট। ওই চিঠিতে জাহিদ মালেক তার মেয়ে সিন্থিয়া মালেক, ছেলে রাহাত মালেকের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করতে বলা হয়।

একই দিন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত সিকদারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার স্ত্রী মাহমুদা আলী সিকদার এবং তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার ওয়ার্ল্ড বিডির ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়।

১৯ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন ও তার ছেলে শেখ সারহান নাসের তন্ময়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। চিঠিতে শেখ হেলাল উদ্দিন, তার ছেলে শেখ সারহান নাসের তন্ময় ও ছোট মেয়ে শেখ ফজিলা শারমীনের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে।

সাবেক শিক্ষা ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তার স্বামী তৌফীক নাওয়াজ এবং বড় ভাই ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপুর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে ১৯ আগস্ট। একই সঙ্গে তাদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত রাখতে বলা হয়।  

একই দিন গুম-খুনের ‘মাস্টারমাইন্ড’, ফোনকলে আড়িপাতা, মানুষের ব্যক্তিগত আলাপ রেকর্ড ও ফাঁস করা সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের স্ত্রী-সন্তান এবং তাদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়। দেশ ছেড়ে পালানো সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় পড়ে দেশের পুঁজিবাজার। বাজার অস্থির করার পেছনে জড়িত ছিলেন এমন আলোচিত আট ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে গত ২০ আগস্ট। এর মধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সদ্য পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ও তার ছেলে জুহায়ের সারার ইসলাম, মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান, শেয়ারবাজারের আলোচিত কারসাজিকারক মো. আবুল খায়ের, শেয়ারবাজারের আলোচিত ব্যক্তি জাভেদ এ মতিন, সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি সিডব্লিউটির এমডি মনিজা চৌধুরীসহ আট ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেনও স্থগিত করা হয়।

একই দিন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ৯১ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সকল হিসাব তলব করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ২০ আগস্ট আলোচিত সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমান, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে হিসাব জব্দ করা ব্যক্তিদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করতে বলা হয়।

সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল (লোটাস), তার স্ত্রী কাশ্মিরি কামাল ও মেয়ে নাফিসা কামাল এবং সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, তার স্ত্রী আইরিন মালবিকা মুনশি ও মেয়ে তানিয়া অনন্যা মুনশি এবং তৃষা মুনশির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়।

এদিকে দেশের ব্যাংকিং খাতের মাফিয়া এস আলম গ্রুপ। আওয়ামী লীগের আমলে চট্টগ্রামের এ গ্রুপটি ইসলামী ব্যাংকসহ শরীয়াহভিত্তিক ৬টি ব্যাংক দখল করে। এরপর নানা কৌশলে নামে-বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। ব্যাংক খাতে নজিরবিহীন ঋণ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে কত টাকা নিয়ে গেছে এস আলম গ্রুপ, তার কোনো হিসাবও নেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। এমন পরিস্থিতিতে এস আলম ও তার পরিবারের ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের নামে-বেনামে কত টাকা ঋণ আছে, তা জানতে ২২ আগস্ট ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় বাংক।

২৩ আগস্ট বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সদ্য পদত্যাগ করা সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং  দিনাজপুর-৬ (হাকিমপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের স্ত্রী-সন্তানদের ব্যক্তিগত এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব ও লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে।

বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবি ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তার স্ত্রী নাছরিন ইসলাম, পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান, আর্থিক খাতের আলোচিত নাম চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান ও তাদের স্ত্রী-সন্তানদের ব্যক্তিগত এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব ও লেনদেন স্থগিত করা হয় ২৫ আগস্ট।

দৈনিক সরোবর/এএস