এবারও কালো সোনার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩, ০৭:০৬ বিকাল

ফরিদপুরে এবারও বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে কালো সোনা খ্যাত পেঁয়াজ বীজের। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া বেশ অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার নয়টি উপজেলার বিভিন্ন মাঠে দোল খাচ্ছে কালো সোনার সাদা ফুল। আর এই সাদা ফুলের কদমেই লুকিয়ে রয়েছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন।
শুধু জেলা নয়, দেশজুড়ে পেঁয়াজচাষিদের স্বপ্ন পূরণ করে ফরিদপুরের কালো সোনা। সরকারি সহযোগিতা পেলে দেশের সিংহভাগ চাষির চাহিদা মেটানোর পরও পেঁয়াজ বীজ বিদেশে রফতানি সম্ভব বলে মনে করেন এ অঞ্চলের চাষিরা।
চাষিদের মতে, সারাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদিত হয় ফরিদপুর জেলায়। এ জেলার পেঁয়াজ বীজ দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ পেঁয়াজচাষির চাহিদা মেটায়। গত মৌসুমের মতো এবারও ন্যায্যমূল্য পেলে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার অধিক বীজ বিক্রি করা সম্ভব।
ফরিদপুর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে ১ হাজার ৭৮২ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে এ বীজ। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় জেলায় প্রতি বছরই বাড়ছে পেঁয়াজ বীজের চাষ। চলতি মৌসুমে জেলায় ১ হাজার ৬০ মেট্রিক টনের মতো বীজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
সরেজমিনে ফরিদপুরের বিভিন্ন উপজেলার মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে কালো সোনার সাদা ফুল। এবারও সম্ভাবনা রয়েছে বাম্পার ফলনের। আর কিছুদিন পরই চাষিরা বীজ সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করবেন। অনেকেই পরিচর্যা শেষে প্রস্তুতি নিচ্ছেন ঘরে তোলার।
বোয়ালমারী উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের মোবারকদিয়া গ্রামের চাষি আব্দুল কুদ্দুস মাতুব্বর বলেন, এবার এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ করেছি। অন্যবারের তুলনায় সার-ওষুধ, শ্রমিক খরচ একটু বেশি হয়েছে। তবে ফলন ভালো হয়েছে।
বিএডিসির তালিকাভুক্ত জেলার সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ বীজচাষি সদর উপজেলার অম্বিকাপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. বকতার খান বলেন, ফরিদপুরসহ দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও মিলে মোট ৬০ একর জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ করেছেন। এর মধ্যে তিনি ফরিদপুরে ২৫ একর জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করেছেন। গতবারের তুলনায় খরচ একটু বেশি হয়েছে। এবার প্রতি একরে খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকার মতো। ভালোভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারলে প্রতি একরে ৩০০ কেজির মতো ফলনের আশা করা যাচ্ছে। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনের আশা করা যাচ্ছে।
দেশসেরা পেঁয়াজের বীজচাষি সাহিদা বেগম বলেন, তিনি এবছর ২৫ একর জমিতে দানা পেঁয়াজ রোপণ করেছেন। এছাড়া ঠাকুরগাঁও জেলায় ৪০ একর জমিতে এই দানা পেঁয়াজ করেছেন তিনি। এসব জমি থেকে তিনি প্রায় ৫০০ মণ বীজ উৎপাদন করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
তিনি আরো বলেন, যদিও গত বছর পাশের দেশ থেকে বীজ আসায় তারা দাম কম পেয়েছেন। তবে তার উৎপাদিত দেশীয় পেঁয়াজ বীজ দিয়ে দেশের চাহিদা পূরণ করার আশা করছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফরিদপুর অঞ্চলের উপপরিচালক মো. জিয়াউল হক বলেন, এ বছর এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজ চাষ ও কালো সোনা খ্যাত পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ বীজ উৎপাদন করে চাষিরা অধিক মুনাফা করেন। এ কারণে এই ফসলকে ‘কালো সোনা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
তিনি আরো বলেন, ফরিদপুরে চলতি মৌসুমে ৪ হাজার ৬৪৮ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ, ৩৫ হাজার ৭৭৬ হেক্টর জমিতে হালি পেঁয়াজ ও ১ হাজার ৭৮২ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ হচ্ছে। সবমিলিয়ে এবার গতবারের তুলনায় বেশি আবাদ হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে ফলনও বাম্পার হবে।