উচ্ছ্বাসের কেন্দ্র পদ্মাসেতু: শিল্প বিপ্লবের আশা মাদারীপুরে
প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২২, ১১:২৫ দুপুর

ছবি: সংগৃহীত
প্রমত্তা পদ্মার বুকে মাথা তুলে দাঁড়ানো পদ্মাসেতু খুলে দেওয়াকে ঘিরে উচ্ছ্বসিত মাদারীপুরের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। সেতু চালু হওয়ার পর এ জেলায় গড়ে উঠবে অসংখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান। পদ্মাসেতু মাদারীপুরে শিল্প বিপ্লব আনবে বলে আশ ব্যবসায়ীদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মাসেতুর দুই পাড়ের সংযোগ সড়কের পিচ ঢালাই শেষ হয়েছে। মূল অংশের পিচ ঢালাইও শেষ। ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের পরদিন যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হবে পদ্মাসেতু। এ খবরে আনন্দে আত্মহারা পদ্মা তীরের মানুষ।
মাদারীপুরবাসীর মতে, পদ্মাসেতু চালুর মধ্য দিয়ে পুরো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চেহারা বদলে যাবে। সেতুকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। পদ্মাসেতুকে ঘিরে মানুষের জীবনমান পরিবর্তনের লক্ষ্যে হাতে নেয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকার প্রকল্প। এতে আশান্বিত হচ্ছে মানুষ, স্বপ্ন দেখছে সোনালী দিনের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পদ্মাসেতুকে কেন্দ্র করে মাদারীপুরের শিবচরে গড়ে উঠছে বিভিন্ন স্থাপনা। শিবচরের যে চরাঞ্চল ছিলো বিদ্যুৎ ও জনবিচ্ছিন্ন, সেখানে চলছে বড় বড় প্রকল্পের কর্মতৎপরতা। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বদলে যাবে দক্ষিণাঞ্চল তথা দেশের অর্থসামাজিক চিত্র। মাদারীপুরে এসব মেগা প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার একর জমি। এরই মধ্যে কয়েকটি প্রকল্পে কাজ দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন কলকারখানা গড়ে তোলার জন্য জমি ক্রয় করছে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান।
সূত্রে জানা গেছে, শিবচরের কুতুবপুরে ৭০ একর জায়াগায় দেশের প্রথম ইনফরমেশন টেকনোলজি ইনস্টিটিউট ও হাইটেক পার্ক নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়। একই ইউনিয়নে ১০৮ একর জমিতে বেনারসি পল্লী নির্মাণের কাজ চলছে। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নির্মাণের জন্য ১৫ একর জমি অধিগ্রহণ শেষে কাজ চলমান রয়েছে। দাদাভাই উপশহর নামে পরিকল্পিত শহরায়ণের জন্য ৭৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে শিবচরে। চরজানাজাতে অলিম্পিক ভিলেজ নির্মাণের প্রস্তাবনাও রয়েছে। এছাড়া রাজৈর উপজেলায় ইকোনোমিক জোন নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলমান।
আরো জানা গেছে, মাদারীপুর থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত এলাকা ঘিরে উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান করতে যাচ্ছে সরকার। যার মনিটরিং করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। মাস্টারপ্ল্যানে থাকছে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, আধুনিক পর্যটন স্থাপনা, শিল্পভিত্তিক বন্দরনগরী, পরিকল্পিত নগরায়ণ, যোগাযোগ, অর্থনীতি ও কৃষিখাতে উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষা ও দুর্যোগ ঝুঁকিসহ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাভিত্তিক কার্যক্রম।
মাদারীপুরের ব্যবসায়ী জালাল মাহমুদ বলেন, আমাদের এ অঞ্চলে গ্যাস সংযোগ নেই। গ্যাস এলে কলকারখানা স্থাপন ও উন্নয়ন আরো বেগবান হবে।
মাদারীপুর বিসিক শিল্প নগরীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক নাজমুল হক বলেন, পদ্মাসেতুকে ঘিরে চলমান প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হলে দক্ষিণাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক চিত্র বদলে যাবে। বাড়বে কর্মসংস্থান ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্র। মাদারীপুর দুটি বিসিক রয়েছে। আরো দুটি বিসিক শিল্প নগরী গড়ে তোলার কাজ চলছে।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, পদ্মাসেতু খুলে দেওয়ার পর এ অঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন হবে। গড়ে উঠবে নতুন কলকারখানা। তাঁতশিল্প টিকিয়ে রাখতে গড়ে তোলা হবে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী। এছাড়া একটি ইকোনোকি অঞ্চল গড়ে তোলার প্রস্তাবনা দেওয়া আছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মাদারীপুরে শিল্প বিপ্লব হবে।
দৈনিক সরোবর/এমকে