ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১

চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, বিপাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ

সরোবর প্রতিবেদক  

 প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২৪, ০৪:৫১ দুপুর  

ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বাড়ানো, বকেয়া ভাতা পরিশোধসহ চার দাবিতে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মবিরতি চলছে। এতে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

রবিবার (২৪ মার্চ) থেকে এই কর্মবিরতির মধ্যে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়াদী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খুব জরুরি না হলে অস্ত্রোপচার হচ্ছে না। সোমবার শিশু বহির্বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে কোনো চিকিৎসক নেই। সব মিলিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নার্স সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমাদের এখানে কোনো ওটি হচ্ছে না গতকাল থেকে। আউটডোর থেকে রোগীও পাঠাচ্ছে না। আমরা বসে আছি।

ভাতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে রোগীদের সেবা দেওয়ার। কিন্তু একজন চিকিৎসক যখন চিন্তায় থাকে যে বাসায় খাবারের টাকা নাই, বাসায় বাচ্চার ডায়াপার নাই, বাসা ভাড়া দেওয়ার টাকা থাকে না, তখন সে কীভাবে চিকিৎসা দেবে। আমাদের ইন্টার্নশিপে ১৫ হাজার টাকা দেয়, ওই টাকায় কী হয়। অনেক ইন্টার্নকে বাসায় টাকা দিতে হয়। এ অবস্থায় আমরা কোথায় যাব?

এ হাসপাতালের গাইনি বিভাগে চারটি পালায় ৫০ জন ইন্টার্ন এবং ৩০ জন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি কাজ করেন। সোমবার সকাল থেকে তারা কেউ কাজে যোগ দেননি। 

হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শরীফুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এত চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকায় স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

আমাদের হাসপাতালে রোগী রিসিভ করেন ইন্টার্নরা। আর ইনডোর রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার মূল ওয়ার্কফোর্স পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনিরা। যদি একসঙ্গে দুইশজন চিকিৎসক কাজে না আসে তাহলে তো প্রভাব অবশ্যই পড়ে।

ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বাড়ানো, বকেয়া ভাতা পরিশোধসহ চার দাবিতে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মবিরতি শুরু করেন রোববার।

এসব দাবি নিয়ে চিকিৎসকরা গত বছরও আন্দোলনে নেমেছিলেন। এবারে চার দফা দাবিতে শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন করেন চিকিৎসকরা। পরে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে দাবি পূরণের আশ্বাস দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন; রবিবার পর্যন্ত সময় চান তিনি।

কিন্তু এরপরও কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. জাবির হোসেন বলেন, কবে নাগাদ সমাধান আসবে সে বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ বা আমাদের ভাতা কত বাড়ানো হবে সেই সংখ্যাটি বলেননি। পরে আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কোনো হাসপাতালে ডিউটি করব না।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও কর্মবিরতি পালন করছেন চিকিৎসকরা। তবে এতে হাসপাতালের কার্যক্রমে খুব বেশি প্রভাব পড়ছে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. আলা উদ্দিন।

সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, আমাদের সরকারি রেসিডেন্টরা সবাই আছেন। ফলে কাজ চালাতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না, কোনো রোগী ফেরত যাচ্ছে না।

ঢাকার বাইরের হাসপাতালেও কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন চিকিৎসকরা।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক কামরুল হাসান সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, তাদের ওই ইউনিটে ইন্টার্ন, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি মিলিয়ে ৯ জন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করেন। তাদের মধ্যে দুজন সরকারি চিকিৎসক। কর্মবিরতি চলায় দুজন বাদে বাকিরা আসেননি।

আমরা খুব ঝামেলায় আছি। খুব জরুরি অস্ত্রোপচার ছাড়া কোনো কাজ করা যাচ্ছে না।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেছেন, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি এবং ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন করায় ওই হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে সমস্যা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই চিকিৎসক বলেন, হাসপাতালের মূল ওয়ার্কফোর্স ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তারা ২৪ ঘণ্টা কাজ করেন। তারা না আসায় মিড লেভেল, লোয়ার লেভেলের চিকিৎসকদের ওপর কাজের চাপ অনেক বেড়ে গেছে। কিছু কাজ করা যাচ্ছে না।

দৈনিক সরোবর/এএস