ঢাকা, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১

দেশে ফিরলে গ্রেপ্তার হবেন না সাকিব: আইন উপদেষ্টা

সরোবর প্রতিবেদক  

 প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৪, ০৮:৩৩ রাত  

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, হত্যা মামলার আসামি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান দেশে ফিরলে গ্রেপ্তার হবেন না।

বুধবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। এ নিয়ে দেশ-বিদেশে আলোচনা হচ্ছে। বিষয়টি আপনাদের নজর এসেছে কি না- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে আসিফ নজরুল বলেন, এটাও তো আওয়ামী লীগই শুরু করেছিল। সাকিব তো বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য কিছু বয়ে আনেনি, সে নিজে অনেক কিছু অর্জন করেছে। ফুটবলার আমিনুল হক বাংলাদেশের জন্য পুরস্কার বয়ে এনেছিল, জাতীয় দলের ক্যাপ্টেন ছিল। আমিনুলকে যেভাবে অত্যাচার করা হয়েছিল, আপনারা কি সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন? আমিনুলকে জেলে ভরা হয়েছিল। সাকিবের বিরুদ্ধে তো শুধু মামলা হয়েছে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, এটা পুলিশ প্রশাসনের ব্যাপার, আমরা যতটুকু বলার সেটা বলার চেষ্টা করেছি। মামলা হওয়া মানে তো গ্রেফতার নয়। আমার বিশ্বাস আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে, যেন কেউ অতি উৎসাহী হয়ে গ্রেফতার করতে না যায়।

তিনি বলেন, আমি আশা করি সাকিব গ্রেফতার হবে না। আমি যতদূর জানি আমাদের পুলিশ বাহিনীকে একটা নির্দেশনা দেওয়া আছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন জায়গা থেকে দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আইন উপদেষ্টা বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার যে দাবি হাইকোর্টে উঠেছে, সেটির বিষয়ে আমাদের অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে প্রতিবাদ করা হয়েছে। এটার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে আমি নই। যদি শক্তভাবে জঙ্গি তৎপরতা, রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা- সত্যিকার অর্থেই সে রকম কিছু থাকে, সেটাও অত্যন্ত সততার সঙ্গে তদন্ত করে দেখে হয়তো এটা (নিষিদ্ধ) করা যেতে পারে।

আসিফ নজরুল বলেন, জেনারেল রুল হিসেবে আমাদের সংবিধানে সংগঠন করার স্বাধীনতা আছে। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া দল। বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগ্রামে দলটির অবদান ছিল। গত ১৫ বছরে তারা যা করেছে, সেটা তাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে যায় না, সেটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে যায় না। তারা বাংলাদেশের ইতিহাসে বর্বরতম ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল। দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা মনে হয় না সমীচীন হবে।

৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে মন্তব্য করেছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে আসিফ নজরুল বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রথম রিয়ালাইজ করা উচিত, তাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা কী ছিল। ‘ভুয়া নির্বাচন’ করা তাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছিল? সেটা আগে নিজেরা বিবেচনা করুক। তারা আগে আত্মসমালোচনা করুক, তারপর দেখা যাক। কোথায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের একটা লেখা দেখলাম, উনি এখন আগের সরকারকে স্বৈরাচারী অগণতান্ত্রিক সরকার বলছেন।

এটা (৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন) দরকার কি দরকার না, সেটা ওনার কথায় আমাদের পরিচালিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের যথেষ্ট আইন বিশেষজ্ঞ আছেন। আমরা সব দিকে দৃষ্টি রেখে এটা করবো- বলেন আইন উপদেষ্টা।

বিগত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিভিন্ন আদালতে উঠানোর সময় হামলার ঘটনা ঘটছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আইন উপদেষ্টা বলেন, আদালত চত্বরে যে হামলা হচ্ছে সেটা কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। আপনাদের কি মনে আছে একজন অগ্রজ সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান সাহেব, উনাকে আদালতে কি নির্মমভাবে রক্তাক্ত করা হয়েছিল, তখন আপনারা সবাই কি প্রশ্নটা করেছিলেন? নিউজটা কি দেখাতে পেরেছিলেন?

তিনি বলেন, আরো অনেকভাবে অনেক সাংবাদিককে অপদস্ত করা হয়েছে। আমি নাম নেবো না, আপনারা তো রিপোর্টই করতে পারতেন না। আপনাদের (সাংবাদিক) কারও কারও সরাসরি ইন্ধন ছিল এসব কাজে। তবে আদালতে যাওয়ার সময় কাউকে আক্রমণ করা উচিত নয়। এটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।

তবে আপনারা প্রেক্ষাপটটা বুঝবেন। সেখানে অনেক বিক্ষুব্ধ মানুষ থাকেন, যারা ১৫ বছর চাকরি হারিয়ে ছিলেন, জীবনের নিরাপত্তার ভয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন। গুম ও হত্যার শিকার পরিবার আছে। মানুষের এত ক্ষোভ, এত ক্রোধ! সেই ক্ষোভ ও ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। সেই বহিঃপ্রকাশকে সমর্থন করছি না।

আসিফ নজরুল বলেন, এই ভিড়টা (আদালত প্রাঙ্গণে) কমানোর কী কী উপায় আছে, সেটি আমরা চিন্তা করছি। রাজনৈতিক দলগুলোকে বলেছি, আপনাদের কর্মী-টর্মী থাকলে তাদের থামানোর চেষ্টা করেন।

যত্রতত্র নানা ধরনের মামলা হচ্ছে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, নিহতের পরিবার যদি উনাদের বিরুদ্ধে মামলা দেন, রাষ্ট্রের অধিকার নেই আপনি মামলা করতে পারবেন না এটা বলার। পুলিশের কাছে মামলা হলে পুলিশ তদন্ত করে সুস্পষ্ট তথ্য না পেলে ডিসচার্জ করে দেবে। আদালতে মামলা দিলে আদালত তদন্তপূর্বক এফআইআর নিতে বলবে। আমরা তদন্ত ও বিচারকাজে ডিউ প্রসেস বজায় রাখার চেষ্টা করবো।

দৈনিক সরোবর/এএস