ঢাকা, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’ ঘোষণা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নতুন দল! 

সরোবর প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২৪, ০৭:১৭ বিকাল  

‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’ নামের এক প্ল্যাটফর্ম ঘোষণা করা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নেতৃত্বে। মুহাম্মাদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে আহ্বায়ক, আখতার হোসেনকে সদস্য সচিব এবং সামান্তা শারমিনকে মুখপাত্র করে মোট ৫৫ সদস্যের এই জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। রবিবার বিকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এর ঘোষণা দেওয়া হয়।

কমিটিতে আছেন– ১। আহ্বায়ক- মুহাম্মাদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, ২। সদস্য সচিব- আখতার হোসেন, ৩। মুখপাত্র- সামান্তা শারমিন। সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন– ৪। আরিফুল ইসলাম আদীব, ৫। সাইফ মোস্তাফিজ, ৬। মনিরা শারমিন, ৭। নাহিদা সারোয়ার চৌধুরি, ৮। সারোয়ার তুষার, ৯। মুতাসিম বিল্লাহ, ১০। আশরাফ উদ্দিন মাহদি, ১১। আলাউদ্দিন মোহাম্মদ, ১২। অনিক রায়, ১৩। জাবেদ রাসিন, ১৪। মো. নিজাম উদ্দিন, ১৫। সাবহানাজ রশীদ দিয়া, ১৬। প্রাঞ্জল কস্তা, ১৭। মঈনুল ইসলাম তুহিন, ১৮। আব্দুল্লাহ আল আমিন, ১৯। হুযাইফা ইবনে ওমর, ২০। শ্রবণা শফিক দীপ্তি, ২১। সায়ক চাকমা, ২২। সানজিদা রহমান তুলি, ২৩। আবু রায়হান খান, ২৪। মাহমুদা আলম মিতু, ২৫। অলিক মৃ, ২৬। সাগুফতা বুশরা মিশমা, ২৭। সৈয়দ হাসান ইমতিয়াজ, ২৮। তাসনিম জারা, ২৯। মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া, ৩০। মো. আজহার উদ্দিন অনিক। ৩১। মো. মেসবাহ কামাল, ৩২। আতাউল্লাহ, ৩৩। এস. এম. শাহরিয়ার, ৩৪। মানজুর- আল- মতিন, ৩৫। প্রীতম দাশ, ৩৬। তাজনুভা জাবীন, ৩৭। অর্পিতা শ্যামা দেব, ৩৮। মাজহারুল ইসলাম ফকির, ৩৯। সালেহ উদ্দিন সিফাত, ৪০। মুশফিক উস সালেহীন, ৪১। তাহসীন রিয়াজ, ৪২। হাসান আলী খান, ৪৩। মো. আব্দুল আহাদ, ৪৪। ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, ৪৫। মশিউর রহমান, ৪৬। আতিক মুজাহিদ, ৪৭। তানজিল মাহমুদ, ৪৮। আবদুল্লাহ আল মামুন ফয়সাল, ৪৯। মো. ফারহাদ আলম ভূঁইয়া, ৫০। এস.এম. সুজা, ৫১। মো. আরিফুর রাহমান, ৫১। কানেতা ইয়া লাম লাম, ৫২। সৈয়দা আক্তার, ৫৩। স্বর্ণা আক্তার, ৫৪। সালমান মুহাম্মাদ মুক্তাদির, ৫৫। আকরাম হুসেইন।

জাতীয় নাগরিক কমিটি ঘোষণা উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসা জনতা (ছবি: আবিদ হাসান) মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক নেতা। ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর এবি পার্টিতে যোগ দেন তিনি। সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সমাজসেবা সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন নাসীরুদ্দীন।

আখতার হোসেন ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক। তিনিসহ কিছু শিক্ষার্থী ২০২৩ সালে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তি’ নামে একটি ছাত্রসংগঠনের ঘোষণা দেন। গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তি প্রতিষ্ঠার আগে আখতার ছিলেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরুল হক নূরের সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদে। পরে সেই সংগঠন থেকে বেরিয়ে নতুন সংগঠন গড়ে তোলেন তারা। কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সাবেক শিক্ষার্থী এবং নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীদের নেতা হিসেবে পরিচিত।

‘শহীদের’ বোনের ঘোষণায় আত্মপ্রকাশ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ৫ আগস্ট বিকালে আশুলিয়ায় নিহত আহনাফ আবির আশরাফুল্লাহর বোন সায়েদা আখতারের ঘোষণার মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। তিনি আহ্বায়ক, সদস্য সচিব ও মুখপাত্রের নাম ঘোষণা করেন। এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই-আগস্টের  ‘শহীদদের’ স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

অনেকগুলো ‘সেল’ হবে

কমিটির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দীন পাটোয়ারী পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন। তিনি জানান, সদস্যদের নিয়ে অনেকগুলো সেল করা হবে। এই কমিটির এখনও পূর্ণাঙ্গ নয়, এই কমিটির বর্ধিতাংশ আরও করা হবে।

নাসিরউদ্দীন বলেন, আমরা অতি শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করবো। এটিকে আমরা গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যাবো। জিওপলিটিক্সসহ যাবতীয় ষড়যন্ত্রকে আমরা সবাইকে নিয়ে রুখে দেবো। আমাদের কমিটির কার্যক্রম নিয়ে যা কিছু বলার আমাদের মুখপাত্র সামন্তা শারমিন বলবে। তার বাইরে কেউ কিছু বললে তার দায়ভার আমরা নেবো না।

রাজনৈতিক দল নয়

এটি কোনও রাজনৈতিক দল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি কোনও রাজনৈতিক দল নয়। আমরা একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য সব দলের লোক নিয়ে এটি করেছি। সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, শত তরুণরা যে স্বপ্নের জন্য জীবন দিয়েছে, আমরা তাদের স্বপ্ন নিজেদের কাঁধে তুলে নিতে চাই। আমরা স্বৈরাচার ও গণহত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করতে চাই।

কমিটির কাজ

কমিটির প্রাথমিক কাজ নিয়ে সামান্তা শারমিন বলেন, আহ্বায়ক কমিটির প্রাথমিক কাজগুলো হচ্ছে– ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হওয়া সামষ্টিক অভিপ্রায় ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে সমুন্নত রাখা, ছাত্র-জনতার ওপর সংঘটিত নির্মম হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা, রাষ্ট্রের জরুরি সংস্কার ও পুনর্গঠন করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা ও জবাবদিহিতার পরিসর তৈরি করা, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগের সঙ্গে আলোচনা, মত বিনিময় ও গণমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে সর্বস্তরের জনতাকে সংহত করার লক্ষ্যে কাজ করা।

এছাড়াও দেশের সর্বস্তরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্বকে সংহত করে গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা সমুন্নত করে রাখার লক্ষ্যে ফ্যাসিবাদী কাঠামো ও শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখা, জনস্বার্থের পক্ষে নীতি নির্ধারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন শ্রেনি পেশার মানুষ এবং প্রবাসী বংলাদেশিদের সাথে বিষয়ভিত্তিক সংলাপের আয়োজন করা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতি নির্ধারণী প্রস্তাবনা তৈরি ও সেটা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক পদক্ষপে গ্রহণ করা, গণপরিষদ গঠন করে গণভোটের মাধ্যমে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান তৈরির জন্য গণআলোচনার আয়োজন করা বলেও জানান তিনি।

এর আগে শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জানায়, যাত্রা শুরুর পর ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’ সারা দেশের জেলা, উপজেলা ও মহানগরে তাদের কার্যক্রম শুরু করবে। তাদের প্রথম কাজ হবে সংস্কার। সংস্কার আনার জন্য তারা প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে।

সদস্য সংগ্রহ: জাতীয় নাগরিক কমিটি ঘোষণার পরপরই শহীদ মিনারের এক পাশে একটি বুথে নতুন সদস্য গ্রহণ করতে দেখা যায়। সেখানে অনেক মানুষের ভীড়ও চোখে পড়ে। তবে শিক্ষার্থীদের এই জাতীয় নাগরিক কমিটিতে নেওয়া হবে না বলে বুথ থেকে জানানো হয়। কেউ ফরম পূরণ করলে তাকে যাচাই-বাছাই করে বাদ দেওয়া হবে। সেখানে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

দৈনিক সরোবর/এমই