ঘনিষ্ট লেখকের সঙ্গে দেখা হলে ভালোলাগে
প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৩, ০৭:৪৫ বিকাল

এক. ঢাকার সাহিত্য তথা বাংলাদেশের সাহিত্যের রয়েছে বৃহৎ একটি পরিসর। একে ক্ষুদ্র ভাবার কোনও সুযোগ নেই। এখানে প্রচুর লেখক সৃজনকর্মে জড়িয়ে আছেন। এদের নিয়ে সাহিত্যের জগৎ বা পরিমলটি। ঈষৎ হলেও এই সাহিত্য জগতের সঙ্গে জড়িয়ে আছি আমিও। সময় হিসেবে খুম কম নয়, যদি ধরি ২০ বছরের বেশিই হবে এবং সেটা ঢাকায় এবং ঢাকার লেখক সমাজ বলে যা বোঝায়, তার গন্ধবর্ণ কিছুটা হলেও আন্দাজ করার ও দেখার সুযোগ ঘটেনি এমন কিন্তু নয়। ‘চর্ণসম্ভাষণ’ কি নিয়ে এগুবে, তার বিষয় নির্বাচন কি হবে, এর পূর্ব-পরিকল্পনা কি, এসব কিছুই ছোঁয়া হয়নি। একটা কথাই বলা যাক, গত ৯ মার্চ, বৃহস্পতিবার, ঢাকার সাহিত্য পাড়ায় গিয়েছিলাম। অনেক কসরত করে যেতে হলো।
এখানে আসলে একটা ভিন্ন অনুভ‚তি কাজ করে। মনে হয় যেন একটা স্বর্ণগুহায় ঢুকে পড়লাম। চারিদিকে শুধু স্বর্ণ ছিটকে পড়ে আছে, সাহস করে ওর এক হাতে তুলে নিলে অন্যায় কি? এখানে আসার সুবাদে প্রায় ক-বছর না সাক্ষাৎ হওয়া ঘনিষ্ট এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা ও আলাপচারিতা হলো বটগাছের নিচে ফুটপাথে ধাবমান শকটের শব্দধ্বনির মধ্যে প্রায়ান্ধকারে বেঞ্চিতে বসে। এক বসায় বহুদিন পর ধোয়ারকুলি উড়ানো সহ পরপর চা পান করা হয় না, সেটা হলো, একটা ঘোর লাগা সন্ধ্যারাত টুপ বরে বসে থাকলো আমাদের মাঝে- এই আড্ডা, এই আলাপচারিতা, আলাপচারিতা থেকে ‘চর্ণসম্ভাষণ’ এর লেখার বহু প্রণালী খুঁজে পাওয়া যেতে পারে।
ঢাকার লেখক সমাজের চেহারাটা বুঝবার জন্য কিছুটা তো এর কাছে আসতে হবে। আসলে যেটা দেখা যাবে, লেখকদের মধ্যে অতি-তরুণ থেকে বয়সী লেখদের দেখা পাওয়া যাবে। অনেক জায়গার মতো রাজধানী ঢাকায় সাহিত্য কেন্দ্রিক নানা অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এসব অনুষ্ঠানে লেখকদের মধ্যে অনেকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাবে। অনুষ্ঠান সাহিত্য সমাজের এক ধরনের গতিকে ধারন করে। এখানে সাহিত্যের একটি উপকারি দিক নেই, এটা বলার দু:সাহস কারোর নেই। তবে একটা বিষয় পরিষ্কার যে, সাহিত্যের আড্ডা সভা অনুষ্ঠান যাই বলা হোক না কেন, তা, নির্দিষ্ট বলয়কেন্দ্রিক। এটা কেউ দোষের বলবে না।
আমি নিজের সামান্য লেখালেখির গরজে ঢাকার সাহিত্য পাড়ায় যাই। আর লোভ থাকে, যদি কাক্সিক্ষত কোনও লেখক বা কবির সঙ্গে দেখা হয়। দেখা ভালোলাগে। তবে এতে আমার জন্য খারাপ সংবাদই অপেক্ষা করে। এমনও হয় কাক্সিক্ষত একজনকেও পেলাম না। মনটা তখন খারাপ হয়ে যায়। তবে এটা অনেকদিন ধরে হয়ে আসায়, এখন আর ঘনিষ্ট কারোর সঙ্গে দেখা হলো না বলে মন কষ্ট পায় না। আবার এটাও ঠিক যে, রাজধানীতে যারা থাকেন, তাদের হাতে সময় কোথায়। লেখকদেরও এ থেকে আলাদা করা যায় না। তারপরও অনেক লেখক নিয়মিত সাহিত্য পাড়ায় আসেন বলে ধরে নেওয়া যায়, কিন্তু সেটি নিশ্চিত করে বলা আমার সাজবে না। কারণ আমি বেশ দেরিতে দেরিতেই ওদিকটায় গিয়ে থাকি। ফলে কে নিয়মিত এলেন তার খবর আমরা জানার কথা নয়।
দুই. রাজবাড়ী শহর থেকে যদি আমার লেখালেখির সূচনা হয়, তাহলে সংবাদকর্মী হিসেবে সূচনা নিজ শহরেই এবং কবি অধ্যাপক সাংবাদিক মুসা বিশ্বাসের হাত ধরে। তা, জাতীয় পত্রিকার স্থানীয় অনেক সাংবাদিককে চিনতাম। দু-একজনের সঙ্গে ঘনিষ্টতাও হয়েছে। বিশিষ্ট প্রবীণ সাংবাদিক মোহাম্মদ সানাউল্লাহ রাজবাড়ী শহরে নামকরা সাংবাদিকদের একজন ছিলেন। আমরা যখন কলেজে পড়ছি, তিনি আলোকিত এক ব্যক্তি। তার ব্যক্তিত্বের বর্ণছটা বোঝা যেত। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা, ফলে সুদৃঢ় একটি ব্যক্তিত্ব অনুভব করা যেত। বীর মুক্তিযোদ্ধা এই সাংবদিক প্রয়াত হয়েছেন। তার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা থাকবে সবসময়। মনে পড়ছে বছর দুই আগে শহরের কেন্দ্রেবিন্দুতে তাকে ঘিরে ছিলেন অনেকে। তিনি সাংবাদিক পেশার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন। আমি কান পেতে শুনছিলাম। ভাবছিলাম যে আমার পেশাও তো এই। এ পেশা কতটা অনিশ্চিত, ভালোলাগা মন্দলাগালা তৈরি করে, তা, তো আমারও কিছুটা জানা। দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিক সানাউল্লাহকে দেখার সুযোগ হলেও, আলাপ-পরিচয় কখনও হয়নি। ওইদিন আলাপ-পরিচয় হবার একটা সুযোগ আমি নিজে থেকেই হাত ছাড়া করি। একটু নিজেকে এগিয়ে নিয়ে কথা বলা যেত, বলা যেত আমি একজন সংবাদকর্মী। যাই হোক সেটি আর হয়ে ওঠেনি। তার ওই শেষ দেখায় মনে হল কিছুটা ও বিধ্বস্ত।
তিন. সত্যি ভাবছিলাম কতটা অন্ধকারে ছিলাম। বিজন ভট্রাচার্যের শেকড়ের খবর দিয়ে সাংবাদিক-লেখক বাবু মল্লিক একটি তথ্যবহুল প্রতিবেদন পেশ করেছেন পত্রিকায়। তাতে জানা গেল তার বাড়ি রাজবাড়ীর খানখানাপুরে। এও জানা গেল- বিজনের বাবা দাদার ভিটে দখল হয়ে আছে। এলাকার সাংস্কৃতিক কর্মীরা সেই ভিটেয় তার নামে জাদুঘর করার দাবি জানিয়ে আসছেন। এ দাবি কী কোনওদিন পূরণ হবে। বাবু ভাইয়ের প্রতিবেদনটি পড়ার পর কয়েকদিন ধরে ভাবছিলাম -বিজন ভট্রাচার্য কী কলকাতায় যাওয়ার পর খানখানাপুরে কখনো আর এসেছিলেন। এ ব্যাপারেও আমার তেমন কিছু জানা নেই। অনেকবার ভেবেছি, রাজবাড়ী গেলে বিজন ভট্রাচার্যের বাস্তুভিটায় যাবার চেষ্টা করবো।
রাজবাড়ীতে বর্তমানে শিল্প সাহিত্য নিয়ে বেশ কাজ হচ্ছে। অনেকেই এর সঙ্গে আছেন। বিজন ভট্রাচার্যকে নিয়ে কোনও আলাপ আলোচনা হয় বলে মনে হয় না। এখানে নাটক নিয়েও কাজ হয়। নাটকের এই মহিরুহকে নতুন প্রজন্মের যারা নাটক করেন, তাদের কাছে তুলে ধরার বিষয়ে ভাব উচিত। বিশেষ করে তিনি রাজবাড়ীর সন্তান, এটা তো বড় একটি বিষয়।