ঢাকা, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ৮ চৈত্র ১৪৩১

হিথ্রো বিমানবন্দর বন্ধ, মাঝপথ থেকে ফিরল ঢাকার বিমান

সরোবর ডেস্ক

 প্রকাশিত: মার্চ ২১, ২০২৫, ০৭:১২ বিকাল  

সাবস্টেশনে অগ্নিকাণ্ডে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে আজ সারা দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ইউরোপের সবচেয়ে বড় লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর। এতে বিপর্যয়ের মুখে বিমান চলাচল। শত শত ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটও মাঝ পথ থেকে ঢাকায় ফিরে এসেছে। হঠাৎ এভাবে ফ্লাইটগুলো বাতিল হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার যাত্রী। 

ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি বলছে, কোনো ফ্লাইট হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করছে না এবং ইতোমধ্যেই সেখানে থাকা বিমানগুলিকে অন্য বিমানবন্দরে ডাইভার্ট করা হচ্ছে, অথবা তাদের মূল স্থানে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। 

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার২৪ বলছে, আজ পশ্চিম লন্ডনের বিমানবন্দরে আসা-যাওয়া কমপক্ষে ১ হাজার ৩৫১টি ফ্লাইট বাতিল হতে পারে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তারা বলেছে, হিথ্রো বন্ধ ঘোষণা করার সময় প্রায় ১২০টি ফ্লাইট আকাশে ছিল যেগুলো জটিলতায় পড়বে।

এদিকে হিথ্রোতে হঠাৎ ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণায় মাঝপথ থেকে ফিরে আসতে হয়েছে বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইটকে। এ ব্যাপারে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম শুক্রবার দুপুরে গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকা-লন্ডন-ঢাকা রুটের উড়োজাহাজটি সকাল ৮টা ৪২ মিনিটে যাত্রা শুরু করে। সকাল ৯টা ৬ মিনিটে ফ্লাইটটি সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখান থেকে সকাল ১০টা ৪৬ মিনিটে রওনা হয় লন্ডনের উদ্দেশে। কিন্তু হিথ্রো বিমানবন্দরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় সেটি দুপুর পৌনে ২টায় শাহজালাল বিমানবন্দরে ফেরত আসে।

সামাজিক মাধ্যম এক্সে (টুইটার) হিথ্রো বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, আমাদের যাত্রী এবং সহকর্মীদের নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য, হিথ্রো বিমানবন্দর ২১ মার্চ রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এই সময়ে যাত্রীদের বিমানবন্দরে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া আরও তথ্যের জন্য তাদের বিমান সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। এমন অসুবিধার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেছে কর্তৃপক্ষ।

আগুন লাগে পশ্চিম লন্ডনের হেইসে সাবস্টেশনে। এই স্টেশন থেকে হিথ্রোয় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে লন্ডন ফায়ার ব্রিগেড আগুন লাগার প্রথম খবর পায়।সাবস্টেশনের ভেতরে জ্বলন্ত ট্রান্সফরমার নিয়ন্ত্রণে আনতে ১০টি ফায়ার ইঞ্জিন এবং প্রায় ৭০ জন ফায়ার ফাইটার পাঠানো হয়। প্রায় সাত ঘণ্টা পর ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা পার্শ্ববর্তী বাড়ি থেকে ২৯ জনকে নিরাপদে সরিয়ে নেন এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আরও দেড় শ মানুষ সরিয়ে নেওয়া হয়। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে প্রায় ৫ হাজার ঘরবাড়ি বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছে। তবে এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। 

ব্রিটিশ জ্বালানি সচিব এড মিলিব্যান্ড এই ঘটনাকে অভূতপূর্ব বলে আখ্যা দিয়েছেন। আগুন লাগার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। 

যুক্তরাজ্যের জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডে সাবস্টেশনগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুই ধরনের সাবস্টেশন তথা ট্রান্সমিশন সাবস্টেশন এবং বিতরণ সাবস্টেশন রয়েছে দেশটিতে। ট্রান্সমিশন সাবস্টেশনগুলি দীর্ঘ দূরত্বে উচ্চ-ভোল্টেজ বিদ্যুৎ সঞ্চালন পরিচালনা করে, যখন বিতরণ সাবস্টেশনগুলি বাড়ি এবং ব্যবসাগুলিতে স্থানীয় বিতরণের জন্য ভোল্টেজ কমিয়ে আনে।

এই উদ্দেশ্যে বিদ্যুতের ভোল্টেজ বৃদ্ধি এবং কমানো সাবস্টেশনগুলির অন্যতম প্রধান ভূমিকা- এবং প্রক্রিয়াটি ট্রান্সফরমার নামক একটি সরঞ্জামের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।

লন্ডন ফায়ার ব্রিগেডের মতে, হেইসের বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনের মধ্যে একটি ট্রান্সফরমারে আগুন লেগেছে।

এদিকে একের পর এক ফ্লাইট বাতিলে বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার যাত্রী। লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করেও মাঝপথেও ঘুরিয়ে নেওয়া হয়েছে অনেকের ফ্লাইট।

এমনই একজন ভুক্তভোগী অ্যালেক্স মানির। অক্সফোর্ড থেকে আজ তার লন্ডনে অবতরণের কথা ছিল। কিন্তু তার ফ্লাইটটি কেপটাউন থেকে বার্সেলোনায় পুনরায় ঘুরিয়ে নেওয়া হয়। যেখানে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে টারম্যাকে থাকার পর তিনি বিমান থেকে নেমেছেন।

বিবিসিকে তিনি বলেন, আজ আমার জন্মদিন। আমি যেভাবে এটি কাটানোর কথা ভেবেছিলাম সেভাবে হয়নি।

তিনি এখন বার্সেলোনার টার্মিনালে তার ব্যাগের জন্য অপেক্ষা করছেন এবং ভালো কিছুর আশা করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স বিবিসিকে জানিয়েছে, তাদের সাতটি ফ্লাইট হিথ্রোর উদ্দেশে রওনা হওয়ার পর আবার ফিরে গেছে বা অন্য বিমানবন্দরের দিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার সরকারি সংস্থা কোয়ান্টাস এয়ারলাইন বিবিসি নিউজকে জানিয়েছে তাদের দুটি ফ্লাইটের রাস্তা বদলে লন্ডন থেকে প্যারিসের দিকে নেওয়া হয়েছে।

হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার ৩০০ ফ্লাইট ওঠা-নামা করে। সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, গত বছর রেকর্ড ৮৩ দশমিক ৯ মিলিয়ন যাত্রী (আট কোটি ৩৯ লাখ) এই বিমানবন্দরের টার্মিনালগুলো ব্যবহার করেছেন। সূত্র: বিবিসি

দৈনিক সরোবর/ইএইচপি