ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১

যুদ্ধবিরতি শুরুর আগেও লেবাননে বোমা হামলা ইসরায়েলের

সরোবর ডেস্ক

 প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২৪, ০৭:৩৬ বিকাল  

কয়েক ঘণ্টা আগের রিপোর্ট অনুযায়ী বৈরুতের দুইটি এলাকা খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। লেবাননে এখন সকাল। যার অর্থ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘোষিত ইসরায়েল-হেজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতি এখন থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। তবে ইসরায়েল সতর্ক করে দিয়েছে, যুদ্ধবিরতি হলেও বেসামরিক মানুষজন এখনি যেন বাড়িঘরে ফিরে না যায়। যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক মিনিট আগে আবারও বোমা হামলার খবর পাওয়া গেছে।

তবে, যদি এই চুক্তি বজায় থাকে, তবে এটি ইসরায়েল ও ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠী হেজবুল্লাহর মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটাবে। দু'পক্ষের মাঝে চলমান এই যুদ্ধ তীব্র হয়ে ওঠে গত সেপ্টেম্বর মাসে, যখন ইসরায়েল বোমা হামলা বাড়ায় এবং সীমিত স্থল অভিযান শুরু করে।

হেজবুল্লাহর একটি মারাত্মক আন্তঃসীমান্ত অভিযানের ফলে হেজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে ২০০৬ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হয়। ইসরায়েলি বাহিনী হেজবুল্লাহর হুমকি মোকাবেলায় দক্ষিণ লেবাননে আক্রমণ করলেও গোষ্ঠীটি টিকে যায় এবং এরপর থেকে তাদের যোদ্ধা সংখ্যা বৃদ্ধি করাসহ নতুন ও উন্নত অস্ত্রের ভান্ডারও গড়ে তোলে।

উল্লেখ্য, যুদ্ধ বিরতির শর্ত অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনী আগামী ৬০ দিনের মধ্যে লেবানন থেকে সরে যাবে এবং এই সময়ের মাঝে হেজবুল্লাহর পরিবর্তে লেবাননের সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে।

যুদ্ধবিরতি চুক্তির কারণ: মঙ্গলবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হেজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর, নেতানিয়াহু একটি বিবৃতি দিয়ে এ ঘোষণা দেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সে সময় হোয়াইট হাউস থেকে চুক্তিটিকে বৃহত্তর শান্তির পথ হিসেবে স্বাগত জানান। এই মুহূর্তে হেজবুল্লাহ'র সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তির তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন।

১. ইরানের হুমকির প্রতি মনোযোগ দেয়া: এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না বললেও তিনি উল্লেখ করেছেন যে ইসরায়েল ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রধান অংশ এবং ইরানের পরমাণু কর্মসূচির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ধ্বংস করেছে। হেজবুল্লাহকে সবসময় ইরানের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে প্রধান ঢাল হিসাবে দেখা হতো। কিন্তু হেজবুল্লাহ’র ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডারের একটি বড় অংশ ধ্বংস হওয়ার ফলে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সামরিক ভারসাম্য ইসরায়েলের পক্ষে চলে গেছে।

২. ক্লান্তি: এই শব্দটি তিনি সরাসরি ব্যবহার করেন নি। তবে তিনি এটি বলেছেন, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একটি বিরতি নেয়া এবং পুনরায় অস্ত্র সংগ্রহ করাটা প্রয়োজন।

ইসরায়েলি বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশটির সামরিক বাহিনী দুই দিকে দুইটি দীর্ঘ মেয়াদে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত ছিল না। তবে এখন লেবাননে যদি সংঘাত শেষ হয়, তাহলে গাজায় আরও বেশি ইসরায়েলি বাহিনী মোতায়েনের সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে যুদ্ধের কোনও সমাপ্তি দেখা যাচ্ছে না।

৩. হামাসকে বিচ্ছিন্ন করা: হেজবুল্লাহকে যুদ্ধ থেকে সরিয়ে নেয়ার অর্থ হল হামাসের ওপর চাপ বেড়ে যাওয়া। হামাস বরাবরই মনে করেছে যে ইরানের ‘এক্সিস অব রেজিসট্যান্স’ বা ‘প্রতিরোধের অক্ষ’-এর বাকি সদস্যরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়বে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার বলেছেন, ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্ত করার জন্যই তারা এই যুদ্ধ করছেন। যদিও তার এই দাবিটি বিতর্কিত। গাজায় এখনও আটক থাকা ইসরায়েলি বন্দিদের পরিবার ও আত্মীয়রা নেতানিয়াহুর তীব্র সমালোচনা করেছেন।

তারা অভিযোগ করেছেন, তিনি গাজা যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন এবং বন্দিদের মুক্তি নিয়ে চুক্তি করার ক্ষেত্রে অবহেলা করছেন।

চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন: যুক্তরাষ্ট্রের সদ্যনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারণা দলের এমন একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন বাইডেনের বহির্মুখী প্রশাসনের কারণে এই শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। যা এ মাসে ট্রাম্পের বিজয়ে উদ্ভাসিত হয়েছিল। ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সঠিকভাবে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যে তার ঐতিহাসিক বিজয় এ অঞ্চলের নেতাদের শান্তির দিকে নিয়ে যাবে এবং আমরা ঠিক এটাই ঘটতে দেখছি’- বলেন এ কর্মকর্তা। তবে এই যুদ্ধ বিরতি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

এই চুক্তির আওতায় ইসরায়েলি বাহিনী ও হেজবুল্লাহ যোদ্ধাদের প্রত্যাহারের পর দক্ষিণাঞ্চলে হাজার হাজার লেবানিজ সেনা মোতায়েন করা হবে। কিন্তু তাদের কিভাবে মোতায়েন করা হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।

সামরিক বাহিনীর অভিযোগ তাদের এ দায়বদ্ধতা পূরণের জন্য সম্পদ, অর্থ, জনবল এবং সরঞ্জাম নেই। হেজবুল্লাহ কী, কোথায় কাজ করে? হেজবুল্লাহ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী একটি শিয়া মুসলিম সংগঠন, যেটি লেবাননের সবচেয়ে শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করে।

এটিকে ১৯৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে ইসরায়েলের বিরোধিতা করার জন্য এই অঞ্চলের সবচেয়ে প্রভাবশালী শিয়া শক্তি ইরান প্রতিষ্ঠিত করেছিল। তখন দেশটির গৃহযুদ্ধের সময় ইসরায়েলি বাহিনী দক্ষিণ লেবানন দখল করেছিল। হেজবুল্লাহ ১৯৯২ সাল থেকে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং একটি অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে সংগঠনটির উপস্থিতি দেখা যায়।

এর সশস্ত্র শাখা লেবাননে ইসরায়েলি ও মার্কিন বাহিনীর উপর মারাত্মক হামলা চালিয়েছিল। লেবানন থেকে ২০০০ সালে ইসরায়েল যখন সৈন্যদের প্রত্যাহার করে, হেজবুল্লাহ তখন সেই সৈন্য প্রত্যাহারের কৃতিত্ব নেয়।

এরপর থেকে, হেজবুল্লাহ দক্ষিণ লেবাননে হাজার হাজার যোদ্ধা এবং বিশাল ক্ষেপণাস্ত্র অস্ত্রাগার ঘাঁটি গড়ে তুলেছে, পাশাপাশি বিতর্কিত সীমান্ত এলাকায় ইসরায়েলের উপস্থিতির বিরোধিতা করে চলেছে। গোষ্ঠীটিকে পশ্চিমা রাষ্ট্র, ইসরায়েল, উপসাগরীয় আরব দেশগুলি ও আরব লীগ একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে আখ্যায়িত করে থাকে। সূত্র: বিবিস নিউজ বাংলা

দৈনিক সরোবর/এএস