গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৭৩ জন নিহত
প্রকাশিত: অক্টোবর ২০, ২০২৪, ০৮:৪৪ রাত

ইসরায়েলের বিমান হামলায় গাজার উত্তরাঞ্চলের বেইত লাহিয়া শহরে নারী ও শিশুসহ অন্তত ৭৩ জন নিহত এবং আরো অনেকে আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজা উপত্যকার হামাস পরিচালিত কর্তৃপক্ষ।
শনিবার গভীর রাতে বোমাবর্ষণের পর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে অনেকে এখনও আটকা পড়ে আছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ইসরায়েল বলছে, তারা হতাহতের খবর যাচাই করে দেখছে। তবে তারা হামাসের দেয়া তথ্যকে ‘অতিরঞ্জিত’ উল্লেখ করে বলেছে, এর সঙ্গে তাদের সামরিক বাহিনীর তথ্যের মিল নেই।
শহরের ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালে ইসরায়েলি সেনাদের ব্যাপক গোলাগুলির খবর প্রকাশের পরই সর্বশেষ বিমান হামলা চালানো হয়।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, ওই অঞ্চলের যোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বেইত লাহিয়ায় উদ্ধার তৎপরতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
হামাস পরিচালিত সরকারের মিডিয়া অফিস বলছে, জনবহুল আবাসিক এলাকায় বোমা হামলা করা হয়েছে এবং এতে ৭৩ জন মারা গেছে। গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সিও একই রকম তথ্য দিয়েছে। তবে বিবিসি স্বাধীনভাবে নিহতদের এই সংখ্যার তথ্য যাচাই করে দেখতে পারেনি।
ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, পুরো আবাসিক কমপ্লেক্সটি ওই হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ বিবিসিকে জানিয়েছে যে তারা ‘হামাসের সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তু’তে হামলা করেছে এবং ‘বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে তারা সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নিয়েছে’।
ইসরায়েল অক্টোবরের শুরু থেকে নতুন করে গাজার উত্তরাঞ্চলে সামরিক অভিযান শুরু করেছে। তারা বলছে, হামাসের ওই এলাকায় পুনরায় সংগঠিত হওয়া থেকে হামাসকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে তারা।
বিশেষ করে ইসরায়েলি বাহিনী ঘনবসতিপূর্ণ জাবালিয়া এলাকায় বোমাবর্ষণ করেছে। এর মধ্যে একটি শরণার্থী শিবিরও আছে। শুক্রবার সেখানে হামলায় ৩৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
সাহায্য সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলেছে, গত কয়েক সপ্তাহ ওই এলাকায় কোনও সহায়তা আসেনি। ইসরায়েলের নিজেদের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম সেপ্টেম্বরের তুলনায় সার্বিকভাবে ধ্বসে পড়েছে।
জাতিসংঘের শীর্ষ মানবিক সহায়তা কর্মকর্তা জয়সে এমসুয়া শনিবার বলেছেন, উত্তর গাজায় ফিলিস্তিনিরা ‘অবর্ণনীয় ভয়াবহতা’র মধ্যে রয়েছে এবং তিনি এসব নৃশংসতা বন্ধের আহবান জানিয়েছেন।
ইসরায়েলের একজন মন্ত্রী আমিচাই চিকলি বিবিসিকে বলেছেন, ইসরায়েল গাজার উত্তরাঞ্চলের একটি অংশ অবরুদ্ধ করে রেখেছে।
‘আমরা বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদ এলাকায় যাওয়ার সুযোগ দিয়েছি এবং অবরুদ্ধ এলাকায় সব কিছু সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে’-আমিচাই চিকলি নিউজ আওয়ার প্রোগ্রামে বলেছেন। তিনি জানান যে আইডিএফ লোকজনকে সরে যাওয়ার জন্য সতর্ক করে দিয়েছে।
তার মতে, এটা করা হয়েছে আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে।
গাজায় ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না- এমন তথ্য ইসরায়েল বারবার প্রত্যাখ্যান করে আসছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সেখানে প্রবেশের সুযোগ বাড়ানোর কথা বলেছে, না হলে আমেরিকার সামরিক সহযোগিতা কমে যাওয়ার ঝুঁকির কথা উল্লেখ করেছে তারা।
অন্যদিকে, শনিবার বৈরুতে অন্তত এক ডজন হামলা করেছে ইসরায়েল। এক সপ্তাহের মধ্যে এটিই সেখানে বড় ধরণের হামলার ঘটনা।
এ হামলায় হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। তবে দক্ষিণে শহরতলী এলাকায় একটি বহুতল ভবন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইসরায়েল বলছে, তারা হেজবুল্লাহর অস্ত্রাগার এবং দাহিয়েহ এলাকায় গোয়েন্দা সদর দপ্তরের কমান্ড সেন্টারকে লক্ষ্য করে হামলা করেছে।
হেজবুল্লাহ ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে রকেট নিক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, শনিবার অন্তত দু'শো রকেট ছোঁড়া হয়েছে।
ইসরায়েলি স্বাস্থ্য সেবা কর্তৃপক্ষ একজনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে। শনিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন যে তাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে। এর আগে খবর আসে যে তার ব্যক্তিগত বাড়িতে ড্রোন হামলা হয়েছে।
‘ইরানি প্রক্সি হেজবুল্লাহ আজ আমাকে ও আমার স্ত্রীকে হত্যার যে চেষ্টা করে, তা ছিল মারাত্মক ভুল’-সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
ওই হামলার সময় নেতানিয়াহু ও তার স্ত্রী সেই বাড়িতে ছিলেন না এবং এতে কেউ আহত হয়নি।
ইরান বলেছে, ওই হামলা হেজবুল্লাহ করেছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনা এই খবর দিয়েছে। হেজবুল্লাহকে অর্থ ও অস্ত্র নিয়ে সহায়তা করছে ইরান। তবে তারা এ নিয়ে আর কোনও মন্তব্য করেনি। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি শনিবার বলেছেন, ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যুতে ‘প্রতিরোধ সংগাম’ বন্ধ হবে না। ‘হামাস সক্রিয় আছে এবং সক্রিয় থাকবে’- তার বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
গাজায় হামাস পরিচালিত কর্তৃপক্ষের হিসেবে, গত বছর অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে প্রায় ৪২ হাজার ৫১৯ জন নিহত এবং কয়েক লাখ মানুষ আহত হয়েছে।
হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ১২০০ মানুষকে হত্যা ও ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে গেলে যুদ্ধ শুরু হয়। জবাবে ইসরায়েল হামাসকে ধ্বংস করে দেয়ার অঙ্গীকার করে।
এর আগে, চলতি সপ্তাহে গাজায় হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার হত্যার পর যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার কিছুটা আশা তৈরি হয়েছে অনেকের মধ্যে।
তবে ওই গোষ্ঠীর ডেপুটি লিডার বলেছেন, হামাস আরও শক্তিশালী হবে এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার না হলে ইসরায়েলি জিম্মিরা ফিরে যাবে না। তথ্যসূত্র: বিবিসি নিউজ বাংলা
দৈনিক সরোবর/এএস