ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে নিহত দুই হাজার, বাড়িছাড়া ১২ লাখ মানুষ
প্রকাশিত: অক্টোবর ০৫, ২০২৪, ০৬:০১ বিকাল

লেবাননে ঢুকে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। এতদিন ধরে লাগাতার এয়ারস্ট্রাইক চালানোর পর সীমান্ত পেরিয়ে একেবারে হিজবুল্লার ঘরে ঢুকে পড়েছে আইডিএফ। ইতিমধ্যে একাধিক শীর্ষ নেতাদের তাঁরা খতম করতে পেরেছে বলে দাবিও করেছে। তাঁদের অবশ্য পাল্টা আক্রমণ করেছে হিজবুল্লাও। এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার ফলে এখন লেবানন কার্যত হয়ে উঠেছে দ্বিতীয় 'গাজা'।
একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট বলছে, শনিবার পর্যন্ত কমপক্ষে ২ হাজার জনের মৃত্যু হয়েছে লেবাননে। আর ইসরায়েলি সেনার ক্রমাগত হামলার কারণে ঘর ছাড়া অন্তত ১২ লক্ষ মানুষ! দক্ষিণ লেবানন কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বেশিরভাগ উঁচু বিল্ডিং ভেঙে পড়েছে। রাস্তার যেখানে-সেখানে রক্ত। তা সত্ত্বেও হামলা থামাচ্ছে না আইডিএফ।
এখনও পর্যন্ত এই সংঘাতে মৃত্যু হয়েছে ১২৭ জন শিশু ও ২৬১ জন মহিলার, এমনই খবর স্থানীয় সূত্রের। আহতের সংখ্যা কয়েক লক্ষ ছাড়িয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই হাসপাতালগুলিতে চাপ বাড়ছে। এদিকে ইজরায়েল স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছে, হামলা তাঁরা থামাবে না। হিজবুল্লাও অবশ্য পাল্টা আক্রমণ জারি রেখেছে। তাই মৃতের সংখ্যা যে বাড়বে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এই পরিস্থিতিতে বহু মানুষ দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন। কেউ সিরিয়া, কেউ বা অন্য কোথাও যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
হিজবুল্লা প্রধান নাসরাল্লাকে হত্যা করার পর ইজরায়েল শান্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু তাঁরা সকলকে ভুল প্রমাণ করে লেবাননে ঢুকে গিয়ে এখন হামলা করছে। তাঁদের দাবি, দক্ষিণ লেবাননের জনবসতিপূর্ণ এলাকাকেই নিজেদের অস্ত্রভাণ্ডার বানিয়ে রেখেছে হিজবুল্লা। তাদের একাধিক ঘাঁটতে হামলা করা হচ্ছে। পাশাপাশি হিজবুল্লার গোয়েন্দা শাখাতেও বোমা মেরেছে ইজরায়েল। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, উত্তর লেবাননেও নতুন করে এয়ারস্ট্রাইক করা হয়েছে।
ইসরায়েলকে ইরানের পরমাণু কেন্দ্র গুঁড়িয়ে দিতে বললেন ট্রাম্প: ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে কি হামলা চালাবে ইসরায়েল? প্যালেস্তাইনে হামাস, লেবাননে হিজবুল্লা নিকেশের যুদ্ধে ইহুদি রাষ্ট্রের পরবর্তী নজর জঙ্গি মদতদাতা ইরানের উপর। যে দেশে রয়েছে বেশ কয়েকটি পরমাণু চুল্লি। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ ইরানের দাবি, তাদের পরমাণু কেন্দ্রগুলি অস্ত্র কারখানা নয়, বিদ্যুৎ উৎপাদন সহ অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সমর বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই অনুমান, চোরাগোপ্তা পরমাণু অস্ত্র বানিয়েছে ইরান। তবে ইজরায়েল যদি ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে বিমান থেকে গোলাবর্ষণ করে, তাহলে বিশ্বের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিগড়ে যাবে। সেই কাজে ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে উসকে দিচ্ছেন আমেরিকার দ্বিতীয়বারের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্প এক অনুষ্ঠানে বলেন, ইসরায়েলের উচিত ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলিতে প্রথমেই গুঁড়িয়ে দেওয়া। তারপর কী হবে, তখন চিন্তা করা যাবে। ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি কি ইজরায়েলের সাহায্য মার্কিন সেনা পাঠানোর পক্ষে? ট্রাম্পের জবাব, আমরা ইতিমধ্যেই ইজরায়েলকে সাহায্য করছি। আমরা ইজরায়েলকে বাঁচাতে সবকিছু করব।
হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাকে খতম করার পর থেকে ইরানের সঙ্গে সরাসরি সংঘাত শুরু হয়েছে ইসরায়েলের। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা খামেইনি শুক্রবার নামাজ পড়ার পর পাঁচবছর পর প্রকাশ্যে দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেন। সেই ভাষণের সময় তাঁর হাতে ধরা ছিল একটি অত্যাধুনিক রাইফেল। খামেইনি সোজাসুজি তাদের কাজের জন্য ইজরায়েলকে মাশুল গুনতে হবে এবং ইসরায়েল বলে কোনও চিহ্ন থাকবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। এমনকী ইসরায়েলের বুকে প্রায় ২০০টি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার প্রশংসা করেছিলেন।
তার পর থেকেই আন্তর্জাতিক দুনিয়ার আশঙ্কা ইজরায়েল খামেইনি সহ ইরানকে উচিত শিক্ষা দিতে পরমাণু চুল্লিতে আঘাত হানতে পারে। আর পরমাণু চুল্লিতে বিস্ফোরণ ঘটলে তার পরিণতি হবে ভয়ঙ্কর। যদিও ইজরায়েল সেনাবাহিনী বা সরকারি তরফে কোনও ব্যাখ্যা এখনও দেওয়া হয়নি। তবে, শঙ্কা এমনটা ঘটতেও পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশ মন্ত্রকের এক শীর্ষস্থানীয় আধিকারিক সংশয় প্রকাশ করে বলেন, হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার বর্ষপূর্তিতে ইজরায়েল ক্ষমতা প্রদর্শনে বদলা নেবে কিনা তা বলা মুশকিল।
সিএনএনের এক প্রশ্নের জবাবে ওই আধিকারিক বলেন, ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে হামলা চালাবে না ইসরায়েল, এমন প্রতিশ্রুতি না থাকলেও আমরা আশা করতে পারি এবং প্রার্থনা করতে পারি, এমনটা যাতে না ঘটে। তবে কোনও গ্যারান্টি দেওয়া যাচ্ছে না। আমেরিকার কূটনীতিকের বক্তব্য যাই হোক মার্কিন মুলুক থেকে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে উসকানি দিচ্ছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি ইসরায়েলকে বলেছেন, ইরানি পরমাণু চুল্লি গুঁড়িয়ে দাও। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ট্রাম্পের মতে, তিনি মনে করেন বদলা নিতে ইরানের পরমাণু কেন্দ্র বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া উচিত ইজরায়েলের। তেহরানের হামলার জবাব এই ভাষাতেই দিক ইজরায়েল। প্রসঙ্গত, বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আরব দুনিয়ায় পুরো দস্তুর যুদ্ধ রুখতে এবং উত্তেজনা প্রশমনে ডাক দেওয়ার পরদিনই ট্রাম্প আরো আগুন উসকে দিলেন। সূত্র: দ্য ওয়াল
দৈনিক সরোবর/এমই