জাতিসংঘের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান ইসরায়েলের
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৪, ০৮:৪৩ রাত

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ ১২টি দেশের আনা লেবাননের হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল। সর্বাত্মক ও বিস্তৃত পরিসরের যুদ্ধ এড়াতে ২১ দিনের ওই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আনা হয়েছিল। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর সামরিক বাহিনীকে লেবাননের সঙ্গে সীমান্তে লড়াই চালিয়ে যেতে বলেছেন। এ প্রেক্ষাপটে বুধবার রাতেও লেবাননে ব্যাপক বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল।
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বৃহস্পতিবার সামাজিক মাধ্যম এক্সে বলেন, উত্তরে (লেবানন সীমান্ত) কোনো যুদ্ধবিরতি হয়নি। হিজবুল্লাহর সঙ্গে সর্বশক্তি নিয়ে বিজয় আসার আগ পর্যন্ত আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাব, যাতে নিরাপত্তার সঙ্গে ইসরায়েলের (উত্তরাঞ্চলের) বাসিন্দারা নিজ নিজ বাড়িঘরে ফিরতে পারেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, তাঁর মন্তব্য লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতির যুদ্ধবিরতির আশায় গুড়ে বালি হয়েছে।
গত দুই দশকে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে এটা সবচেয়ে ভয়াবহ লড়াই। ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা বুধবার রাতভর লেবাননের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। দক্ষিণ লেবাননের বেকায় ৭৫টি স্থানে হামলা চালানো হয়েছে। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, হামলায় তাদের অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৯০ হাজারের বেশি মানুষ। গাজায় আগ্রাসন ও নৃশংসতা চলাকালে লেবাননে এ ধরনের হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্বনেতারা। তবে ইসরায়েলকে যে তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না, এটা অনেকটাই স্পষ্ট। ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা লেবাননে একটি স্থল অভিযান চালানোর প্রস্তুতি হিসেবে এসব হামলা চালাচ্ছে।
কাতার জানিয়েছে, তারা লেবানন থেকে ভয়ংকর খবর পাচ্ছে। সেখানে পুরো পরিবারকে লক্ষ্যে পরিণত করা হচ্ছে। অনেকটা গাজার আদলে এমনটা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির সরকারের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি উস্কানি কমানোর আহ্বান জানান। বিবিসি জানায়, হিজবুল্লাহও ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে ৪৫টি রকেট ছুড়েছে। এগুলোর কয়েকটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ঠেকালেও কিছু সংখ্যক আঘাত হেনেছে। হিজবুল্লাহ বলছে, তারা ইসরায়েলের রাফায়েল সামরিক কমপ্লেক্স লক্ষ্য করে এসব হামলা চালিয়েছে।
বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা আনাদোলুর খবরে বলা হয়, লেবাননে চলমান সংঘাতের কঠোর সমালোচনা করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সেখানে হত্যাযজ্ঞ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, লেবানন আরেকটি গাজা হতে পারে না। তিনি বলেন, লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় হাজার হাজার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন। এসব বেসামরিক মানুষকে অবশ্যই সুরক্ষা দিতে হবে; বেসামরিক স্থাপনায় অবশ্যই হামলা চালানো যাবে না।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে দেওয়া ভাষণে মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এ আগুন নেভাতে সাহায্যের জন্য নিরাপত্তা কাউন্সিলকে জোর দিয়ে কাজ করার অনুরোধ করছি। সংঘাতরত পক্ষগুলোকে অবিলম্বে শত্রুতা বন্ধ করতে হবে। জাতিসংঘের সব সম্পদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আন্তর্জাতিক আইনকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে।’ তিনি বলেন, যে কোনো মূল্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়িয়ে চলা উচিত।
এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন নিয়ে কথা বলেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান।
নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, গাজায় ইসরায়েল পরাজিত হয়েছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো জাতিসংঘে বক্তব্য দিলেন পেজেশকিয়ান। সাধারণ পরিষদের দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, তাঁর দেশ প্রত্যক্ষ করেছে কীভাবে ইসরায়েলি শাসন গাজায় নৃশংসতা চালায় এবং কীভাবে ১১ মাসে তারা ৪১ হাজার নিরপরাধ মানুষকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করে। নিহতদের বেশির ভাগই ছিল নারী ও শিশু। ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, ইসরায়েল শিশু হত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মতো গণহত্যাকে বৈধ আত্মরক্ষা হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছে। বিশ্বজুড়ে যেসব স্বাধীনতাপ্রেমী ও সাহসী ব্যক্তি গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন, তাদের ‘ইহুদিবিরোধী’ ট্যাগ দেয়।
দৈনিক সরোবর/এমই