নিয়োগ পরীক্ষার আগেই উত্তরপত্র
প্রশ্নফাঁস চক্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনুন
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৫, ২০২৪, ০৮:০২ রাত
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সংঘবদ্ধ চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ। তাদের মধ্যে দুইজন ঢাবি শিক্ষার্থী ও তিনজন পরীক্ষার্থী। তারা হলো ঢাবি শিক্ষার্থী জ্যোতির্ময় গাইন (২৬) ও সুজন চন্দ্র রায় (২৫) এবং পরীক্ষার্থী মনিষ গাইন (৩৯), পংকজ গাইন (৩০) ও লাভলী মন্ডল (৩০)।
জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলে বসে ওই পরীক্ষার প্রশ্নের সমাধান করত গ্রেপ্তারকৃতরা। পরীক্ষা শুরুর আগেই পরীক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হতো উত্তরপত্র। পুলিশকে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন সমাধানের সমাধানের দায়িত্ব পেয়েছে জ্যোতির্ময় গাইনের চাচা অসিম গাইনের মাধ্যমে। প্রশ্নপ্রতি ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার আশ্বাসে তাদের দিয়ে প্রশ্ন সমাধান করায় অসিম। এই প্রস্তাবে জ্যোতির্ময় ও সুজনসহ সাতজন ঢাবির জগন্নাথ হলের জ্যোতির্ময়গুহ ঠাকুরতা ভবনের ২২৪ রুমে বসে তারা প্রশ্নের সমাধান করে পাঠায়। পরীক্ষার দুই থেকে তিন মাস আগেই তিনি পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। বিশেষ করে যাদের চাকরির বয়স শেষের পথে, এমন পরীক্ষার্থীদের টার্গেট করত। তাদের পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার জন্য ১২ লাখ থেকে ১৪ লাখ টাকায় চুক্তি করত। পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগেই প্রশ্নের উত্তরপত্র পরীক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন অসিম গাইন। তাদের সমাধান করে দেওয়া প্রশ্নের মধ্যে ৭২ থেকে ৭৫টিই মিলেছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রশ্নপত্র ফাঁস শুধু আইনশৃঙ্খলার অবনতির দৃষ্টান্তই নয়; সামাজিক অবক্ষেয়েরও লক্ষণ। সামাজিক অনুশাসনের অভাবে এ ধরনের অনৈতিক প্রবণতা বাড়ছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে পরিবারের পাশাপাশি সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও সামাজিক বৈষম্য দূর করা দরকার। এসবের সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; যেন আর কোনোভাবেই এমন কাজ করার কথা কেউ চিন্তাও করতে না পারে। এটি দেশ ও মানুষের জীবনের স্বাভাবিকতা বজায় রাখার স্বার্থেই জরুরি। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করলে একের পর এক এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে। আমরা প্রত্যাশা করি, এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক; যেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ হয়।
আমরা অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে বলতে চাই, এ রকম ঘটনা শুধু একটি নয়; এর আগেও ঘটেছে। এই প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশ রয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা সমীচীন বলে মনে করি। যাদের অবহেলায় এ রকম ঘটনা প্রায়ই ঘটে, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করাটাও জরুরি। প্রশ্নফাঁস রোধে সংশ্লিষ্টদের আরও সক্রিয় ও সজাগ হওয়া কর্তব্য। যে কোনো মূল্যে প্রশ্নফাঁস চক্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। নিয়োগ পরীক্ষা দিতে এসে মেধাবীরা বঞ্ছিত না হয়; এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা।