ঢাকা, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্র বাক্সবন্দি 

হাসপাতাল দুর্নীতিমুক্তে জরুরি পদক্ষেপ নিন

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৪, ০৭:৫৮ বিকাল  

দেশের স্বাস্থ্যসেবা বেহাল থেকে কবে মুক্তি মিলবে, তা মনে হয় কেউ জানেন না। দায়িত্বশীলরা হয়তো বলবেন, অবস্থার উন্নতির চেষ্টা চলছে। তবে মূল কথা হলো, দেশের সরকারপ্রধান প্রান্তিক মানুষের দোড়গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চান। ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা নয়, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাই লক্ষ্য। কিন্তু তার এই চাওয়ার সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতের লোকজন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র, প্রান্তিক মানুষের দোড়গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা সঠিকভাবে নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, তা বলাই বাহুল্য। সরকার উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিতে যে অর্থ দিয়ে থাকে, তা দিয়ে ভালো স্বাস্থ্যসেবাই দেয়া সম্ভব। অথচ একদিকে হাসাপাতালে রোগী দেখার প্রতি চিকিৎসকদের থাকে অনীহা, অন্যদিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি কেনাকাটাও ঘটে দুর্নীতির ঘটনা। কোটি কোটি টাকা খরচ করে যন্ত্রপাতি কেনা হলেও তা কাজে আসে না। এ জন্য যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, এমন দৃষ্টান্ত বিরল। 

বিপুল অর্থ ব্যয় করে যন্ত্রপাতি কেনা হয় রোগীদের জন্য। অথচ তা অব্যহƒত অবস্থায় রেখে দেয়ার নজির নতুন নয়। কিন্তু এর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। কারণ সরকারি হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় যারা আছেন, তারা খেয়ালখুশি মতো হাসপাতাল পরিচালনা করেন। অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য কায়েম করে লুটপাটের হাট বসায়। এ যেন দেখার কেউ নেই। এভাবে সরকারি হাসাপাতাল চলার ফলে সুযোগটি নিয়েছে বেসরকারি হাসাপাতাল ও ক্লিনিক মালিকরা। সরকারি হাসাপাতালের ডাক্তার দিয়েই তারা রমরমা চিকিৎসা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে গরিব রোগীরা পড়েছেন বিপদে। তাদের বেসরকারি হাসাপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই। আবার সরকারি হাসাপাতালের চিকিৎসা পান না। এ থেকে মানুষের কবে মুক্তি মিলবে, তা কেউ জানেন না। 

খুলনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহƒত ১০ কোটি টাকার ‘লিনিয়ার এক্সিলেটর’ মেশিন ১২ বছর ধরে বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে। জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রয়েছে রেডিওথেরাপি মেশিন ছয়টি। এর চারটিই নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগী ও স্বজনদের। এ চিত্র শুধু দুটি হাসপাতালের নয়, দেশের অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালে বছরের পর বছর যন্ত্রপাতি নষ্ট পড়ে রয়েছে। অনেক জায়গায় বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। অনেক হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপন করা হয়েছে, এমআরআই মেশিন বসানো হলেও তা আর চালু করা হয়নি। এসব মেশিন পরিচালনার জন্য নিয়োগ দেয়া হয়নি জনবল। তাই বাধ্য হয়ে বোগীদের বাড়তি খরচ করে ছুটতে হয় ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন দেশের স্বাস্থ্য খাত কতটা ঠিক করতে পারবেন, তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তবে এতে যে তাকে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে, তা বলাই বাহুল্য। 

স্বাস্থ্য খাত দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতিবাজদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। এই দুর্নীতিবাজদের সরানো সহজ হবে না স্বাস্থ্যমন্ত্রীর জন্য। তবে আমরা একটি কথাই জোর দিয়ে বলতে পারি, যে কোনো দুর্নীতিবাজ দেশ ও দেশের মানুষের শত্রু। তাই যেসব দুর্নীতিবাজ স্বাস্থ্য খাতকে ভঙ্গুর করে তুলেছে, তাদের স্বাস্থ্য খাত বিতাড়িত করাই হবে সঠিক কাজ। দুর্নীতিবাজের আসলে কোনো শক্তি নেই। দুর্নীতি করাটাই তার স্বভাব। এ থেকে থেকে সে কখনো নিজে থেকে সরবে না। এ জন্য আমরা চাই, হাসপাতালকে দুর্নীতিমুক্ত করতে দুর্নীতিবাজের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হোক।