ঢাকা, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

স্যাটেলাইট শহর 

দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিন 

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৪, ০৯:০১ রাত  

দেশের প্রথম মেট্রোরেল রাজধানী ঢাকায় চালু হয়েছে ১৩ মাস আগে। বর্তমানে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এটি চলাচল করছে। আধুনিক পরিবহন হিসেবে মেট্রোরেলে যাত্রীর চাপ দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় প্রয়োজন দেখা দিয়েছে কোচ বৃদ্ধি করার। তবে কর্তৃপক্ষ কোচ বৃদ্ধি করবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। রাজধানীকে যানজটমুক্ত করার জন্য মেট্রোরেল চালুর যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তা যাত্রীদের কাছে প্রমাণিত হয়েছে। অফিসগামী ও অফিস শেষে চাকরিজীবীরা গণপরিবহনে ছেড়ে মেট্রোরেলেই চেপে বসছেন। যেখানে দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিলে গণপরিবহনে ২ ঘণ্টার বেশি লাগত, সেখানে মেট্রোরেলে আধা ঘণ্টায় পৌঁছানো সম্ভব। দেড় ঘণ্টা সময় বেঁচে যাওয়াটা নগরবাসীর কাছে বড় বিষয়। রাজধানী ঢাকা দুর্ভোগের নগরী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল। যানজটে কী পরিমাল নগরবাসীকে নাকাল হতে হয়েছে, তা ভুক্তভোগী নগরবাসী জানেন। মেট্রোরেল তাদের এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তির বারতা নিয়ে এসেছে। এখন তারা অপেক্ষায় আছেন রাজধানীর অন্য রুটে মেট্রোরেল ও দুটি পাতাল রেল চালু হওয়ার। 

আওয়ামী লীগ সরকারের বড় পরিকল্পনা হলো ঢাকাকে আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তোলা। আধুনিক নগরীর প্রধান বৈশিষ্ট্য ধরা হয়, নগরবাসী পরিবহন ব্যবস্থা কতটা উন্নত। মেট্রোরেল চালুর আগে দুর্ভোগের সঙ্গে মূল্যবান সময়ের অপচয় ও আর্থিক ক্ষতি হতো। গবেষকদের মতে, প্রতি বছর রাজধানীতে যানজটে আর্ধিক ক্ষতি এক লাখ কোটি টাকার বেশি হয়। পুরোপুরিভাবে মেট্রোরেল চালুর পর থেকে যে রাজধানীতে যানজট অদৃশ্য হতে শুরু করেছে, তা নগরবাসীর ফুরফুরে মেজাজ দেখেই বোঝা যায়। রাজধানীর বনানীর কাকলি মোড় থেকে আগারগাঁও মোড়ে যেতে মেট্রোরেল চালুর আগে দেড় ঘণ্টার বেশি লাগত। আর এখন ১০-১৫ মিনিটে পৌঁছানো সম্ভব। রাজধানীর প্রতি প্রান্তেই এ রকম প্রায় একই চিত্র। নগরবাসীর জীবনে যে গতি এনে দিয়েছে মেট্রোরেল, তা বলা যায়। মতিঝিল মেট্রোরেল স্টেশনে যাত্রীর এমন ভিড় যে, পা ফেলার জায়গা থাকে না। টিকিট কাউন্টার থেকে ট্রেনের দিকে যাত্রীদের একটি স্রোত দেখা যায়। সকাল ও সন্ধ্যায় কর্মজীবী মানুষের চাপে ভিড় খুব বেশি থাকে। এ সময় অনেকে ট্রেনে ওঠার সুযোগ পান না। বাসের তুলনায় মেট্রোরেলে ভাড়া কিছুটা বেশি হলেও যাত্রীদের স্বস্তি রয়েছে বেশ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয় না, সময় ধরে ঠিকমতো পৌঁছা যায় গন্তব্যে। সড়কের ধুলা-ধোঁয়া আর দূষণ থেকেও হাঁপ ছাড়া যায়। সব মিলিয়ে এক সময়ের স্বপ্নের মেট্রোরেল এখন বাস্তবের স্বস্তির সারথি। চাহিদা বুঝে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা করছে মেট্রোরেল বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। এরই মধ্যে ট্রেনের সংখ্যা ও কোচ বৃদ্ধি করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে একসঙ্গে ২ হাজার ৩০৮ যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে গড়ে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে প্রায় ২ হাজার ৬৫০ জন। এমন বাস্তবতায় প্রতি ট্রেনে আরও দুটি করে কোচ যুক্ত করা প্রয়োজন। 

আমরা বলব, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা দুর্ভোগের নগরী ঢাকাকে যে পরিকল্পনায় গড়ে তোলার পথে হাঁটছেন; তা ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে। ঢাকার চারপাশে স্যাটেলাইট শহর গড়ে তোলার কথা বারবার বলা হয়। কিন্তু এখনো রাজধানীর চারপাশে স্যাটেলাইট শহর গড়ে তোলার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। আমরা আশা রাখি, প্রধানমন্ত্রী এদিকে দৃষ্টি দিলেই তা দ্রুত সম্ভব হবে। তখন রাজধানী পুরোমাত্রায় আধুনিক শহরের বৈশিষ্ট্য নিয়ে উদ্ভাসিত হয়ে উঠতে পারবে।