ঢাকা, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

ভোট ঠেকানোই মূল লক্ষ্য

বিএনপি-জামায়াত জোট: শেষ রক্ষাকবচ!

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: ডিসেম্বর ০৭, ২০২৩, ০৮:৪১ রাত  

বিএনপি জটিল এক পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে একদিকে যেমন বর্জন করেছে। অন্যদিকে ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য শক্তি নিয়োগ করেও কুলিয়ে উঠতে পারছে না। নির্বাচন প্রতিহত করার কাজে জাময়েতে ইসলামীকে সঙ্গি হিসেবে বিবেচনা করছে দলটি। 

দেখার বিষয় হলো বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী একসঙ্গে হরতাল-অবরোধ পালন করছে। এ ঘটনা থেকে প্রতিয়মান হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে, দুটি দলই আবার একবিন্দুতে মিলিত হওয়ার ইচ্ছা নিয়ে এগুচ্ছে। এটা সামনের দিনগুলোতে আরো দৃশ্যমান হবে এবং বিএনপি-জামায়াতের ঘনিষ্টতা আগে যে কোনও সময়ের চেয়ে চোখে পড়ার মতোও হতে পারে।

নানা রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে বিএনপি, জামায়াতকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে এসেছে। এক টেবিলে বসার দৃশ্য অনেকদিনই দেখা যায়নি। বিশেষ করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে। এখন আর এই জামাায়াতকে দূরে সরিয়ে রাখার পক্ষে নয় বিএনপি। ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিহত করতে হলে জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গি হিসেবে বিএনপির খুবই প্রয়োজন। জামায়েতের যে সংগঠিনক শক্তি আছে, তা, বিএনপির জন্য অতীতে যেমন নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে, বর্তমানেও করবে বলে বিএনপি-জামায়াত আগের মতো একট্টা হয়ে চলতে চায়। 

প্রশ্ন উঠতে পারে- এতে রাজনৈতিক ফায়দা কতকটুকু অর্জন হবে, নাকি বিসর্জনে যাবে সবকিছু? ধারনা করা হচ্ছে, বিএনপি অনেক হিসেবে করে দেখেছে, জামায়াতকে কাছে টানাই উত্তম, অনুরূপ জামায়াত তো বরাবরই মুখিয়ে থাকে বিএনপির সঙ্গে একাট্টা হয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়তে। মাঝে দু’দলের মধ্যে যে বিচ্ছেদ ঘটেছিল, তাতে দু’দলই হিসেবে করে দেখেছে, এতে কারোর কোনও লাভ হয়নি, ক্ষতি ছাড়া। তাই আর বসে থাকার সময় নেই, এক রেখায় এসে মিলতে হবে। 

এই যখন অবস্থা, তখন বিএনপির সঙ্গে থাকা অন্য দলগুলো বিষয়টি ভালো ভাবে নিচ্ছে না বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর হয়েছে। বিএনপি জামায়াত কাছে টেনে নিলে বিএনপির সঙ্গে থাকা অন্যরা বিএনপিকে ছেড়ে যেতে পারে, এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। তাই দেখা যাচ্ছে-বিএনপির দু-কূল রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। অন্য দলগুলো ছেড়ে গেলে, তখন জামায়াতের ওপর বিএনপির নির্ভরতা অনেক বেড়ে যাবে, এতে আবার সমালোচনা হবে, ইতিমধ্যে  জামায়াতের সঙ্গে সহাবস্থান করার জন্য বিএনপি অনেক সমালোচনার মুখে পড়েছে।

বিএনপি দাবি করে দলটিতে অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা আছে, দলটি বীর মুক্তিযোদ্ধার দল, তাই যদি হয়, তাহলে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি জামায়াতের সঙ্গে দলটি কিভাবে রাজনীতি করে। জামায়াতকে নিয়ে বিএনপি সরকার গঠন করায় সমালোচনায় পড়েছিলো। জামায়াত নেতাদের মন্ত্রী বানিয়ে দলটির গায়ে কলঙ্ক লেগে যায়। 

আন্তর্জাতিক মহলের অনেকে চায় না, জামায়াতকে বিএনপি আশ্রয় দিক। কিন্তু বিএনপির যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাতে ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও জামায়াতকে কাছে টানতে হচ্ছে। ফলে এক কূল রক্ষা করতে গিয়ে আর এক কূল হারানোর উপক্ষম। 

সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তজসিল অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসায় এক দফার আন্দোলন জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। আগামী ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারের শুরুর দিন থেকে ৭ জানুয়ারির মধ্যবর্তী সময়কে দাবি আদায়ের ‘মোক্ষম সময়’ বিবেচনা করে পরিকল্পনা সাজাচ্ছে দলটি। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তারিখে ভোট ঠেকানোই তাদের মূল লক্ষ্য। এ জন্য আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে নির্বাচন বয়কট করা সব দলকে একমঞ্চে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। 

এক্ষেত্রে সাংগঠনিক শক্তি বিবেচনায় চূড়ান্ত আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীকে ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে পাশে চায় দলটি। বিশেষ করে নির্বাচন ঠেকাতে ২০১৪ সালের মতো জামায়াতের সক্রিয় ভূমিকা আশা করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। সেই সঙ্গে এবার চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছে তারা।

তবে জামায়াতের সঙ্গে একমঞ্চে যেতে নারাজ যুগপতের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র গণতন্ত্র মঞ্চ। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য দেশবাসীর কাছে এখনো ক্ষমা না চাওয়ায় আদর্শগত কারণে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত এই দলটিকে নিয়ে আপত্তি তাদের। অবশ্য জামায়াতকে যুগপৎ ধারায় আন্দোলনে সম্পৃক্ত করলে তাতে আপত্তি থাকবে না ছয় দলীয় এই জোটের। জামায়াতকে নিয়ে জোটের এই অবস্থানের বিষয়টি ইতোমধ্যে বিএনপিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে যুগপতের অন্য শরিকদের এ নিয়ে আপত্তি নেই।

জামায়াতকে কাছে টানার ঘটনায় মনে হচ্ছে, বিএনপি নিজের বেগতিক অবস্থা বুঝতে পারছে। ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক অরস্থান যাতে আরো ক্ষতির মুখে না পড়ে, সেই বিবেচনা থেকেই জামায়াতের সঙ্গে পাকাপাকি সম্পর্ক ধরে রাখতে চায়। ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যে বিএনপি-জামায়াত মিলেও ঠেকাতে পারবে না, তা নিয়ে কারোর মনে কোনও সন্দেহ নেই। বরং নির্বাচন ঠেকাতে গিয়ে দু’টি দলই আরো বেশি বিপজ্জনক অবস্থায় পড়তে পারে। এটা দুটি দলের মাথায় রাখার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি।

দৈনিক সরোবর/এএস