ঢাকা, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

বড় শহরে মানুষের চাপ 

উপজেলা পর্যায়ে বিশেষায়িত নগরায়ণ জরুরি

সরোবর প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: অক্টোবর ০৪, ২০২৩, ১১:৫২ রাত  

রাজধানী ঢাকার ওপরে মানুষের চাপ ক্রমেই বাড়ছে। ঢাকায় দুই কোটির বেশি মানুষের বসবাস। এ ছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগরীতেও মানুষের চাপ বাড়ছে। প্রতিটি বিভাগীয় শহরেই ক্রমশ মানুষের চাপ অসহনীয় হয়ে উঠছে। তবে সবচেয়ে বেশি ঢাকায়। রাজধানীতে মানুষের চাপ কমাতে সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণের তাগিদ নগর বিশেষজ্ঞরা অনেকদিন ধরেই দিয়ে আসছেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের কথা সরকারের কর্তাব্যক্তিরা কতটা কানে তুলছে, সেটাই বিবেচ্য। যদি তুলতো তাহলে অনেক আগেই রাজধানীর ওপর মানুষের চাপ কমানোর কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হতো। কিন্তু কার্যত, সেরকম কোনও উদ্যোগ এখনও চোখে পড়েনি। 

বর্তমান সরকার গ্রামকে শহরে রূপান্তরিত করার কথা সম্প্রতি বেশ জোরেশোরে বলছে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। ২০৪১ সালের মধ্যে সরকার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চায়। সরকারকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে হলে অবশ্যই রাজধানীর ওপর মানুষের চাপ কমিয়ে নগরবাসীর সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কথা ভাবতে হবে। 

বিশ্বের রাজধানীগুলোর মধ্যে ঢাকা সবচেয়ে ঘন বসতিপূর্ণ শহর। রাজধানীতে কাজের সুযোগ সুবিধা সহ নানা বিষয়ের কারণে মানুষে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাসের কথা ভাবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মানুষের কাজের সুযোগসহ নানাবিধ সুযোগ বর্ধিত হলে রাজধানী আসা মানুষের ঢল কমতো, তা জোর দিয়ে বলা যায়।

পাশের দেশ ভারতের পশ্চিম বাংলায় কলকাতার সঙ্গে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার ফলে কয়েক কি.মি পথ ট্রেনে চেপে মানুষ কলাকাতায় অফিস করতে আসে এবং অফিস শেষে ট্রেনে চেপে বাড়িতে চলে যায়। এ কারণে মানুষের ওপর আর্থিক চাপও পড়ে না। কলকাতায় থাকাটা ব্যয়বহুল। ফলে কলকাতায় অফিস করে ট্রেনে চেপে নিজের বাড়িতে গিয়ে বসবাস করার মধ্যদিয়ে অর্থের সাশ্রয় ঘটে।

এ বিষয়টা রাজধানী ঢাকার মানুষ ভাবতে পারে না। ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের দূরত্ব খুব বেশি নয়। সাভার ও গাজীপুর, টঙ্গিও বেশি দূরে নয়। কিন্তু এসব স্থান থেকে মানুষ ঢাকায় এসে অফিস করে যথারীতি বাড়িতে ফিরে যাবে, সেই যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। এটা আমাদের সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা কখনও ভেবে দেখেছে বলেও মনে হয় না। 

তবে বিশেষজ্ঞরা শহরে চাপ কমাতে সরকারকে উপজেলা পর্যায়ে বিশেষায়িত নগরায়ণের পরামর্শ দিয়েছে। 

সোমবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আয়োজিত বিশ্ব বসতি দিবস ২০২৩  উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

সভায় বিশেষজ্ঞরা শহরে চাপ কমাতে উপজেলা পর্যায়ে বিশেষায়িত নগরায়ণ গড়ে তোলার ব্যাপারে যে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন, তা, সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা ভেবে দেখবেন বলে আমরা মনে করি। আলোচনা সভায়-পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে পরিকল্পিত নগরায়নের মাধ্যমে নগর অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 

তারা বলেন, সাধারণ মানুষের বসবাসের জন্য শহরকেন্দ্রিক চাপ কমাতে উপজেলা বা গ্রাম পর্যায়ে বিশেষায়িত নগরায়ণ করতে হবে। তাহলে আমাদের নগর অর্থনীতি উন্নতি করবে। সবাই মিলে ভালো পরিকল্পনা গ্রহণ করলে সকলের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে বলে মনে করেন তারা। বক্তারা বলেন, বর্তমানে দেখা যাচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক হচ্ছে। ফলে অর্থনীতিও এই দুই শহর কেন্দ্রিক। আর ঢাকা ও চট্টগ্রাম দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে। কারণ শহর হচ্ছে সবার মূল আকর্ষণের জায়গা। এখানে কর্মসংস্থানসহ নানা সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে ঢাকা শহরের চারপাশে স্যাটেলাইট শহর তৈরি করতে হবে। সেই স্যাটেলাইট শহরগুলোর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। তাহলে মূল শহরের ওপর চাপ কমে যাবে এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ড আরো বাড়বে।  

আরেকটি বিষয় হলো বিশেষায়িত নগরায়ণ করতে হবে। কোন একটি কাজের জন্য কোন একটি নগরের বিশেষত্ব থাকবে। আমাদের সে ধরনের নগর ব্যবস্থায় যেতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয় উপার্জন এই তিনটি বিষয়ের জন্য আলাদা জেলা নির্বাচন করে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে পরিকল্পিত নগরায়নের মাধ্যমে নগর অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। তাহলে আমাদের নগর অর্থনীতি উন্নতি করবে একই সঙ্গে ঢাকার ওপর চাপ কমবে। শহরগুলোকে টেকসই রেজিলেন্টস হিসেবে তৈরি করতে হবে। বিল্ডিং তৈরিতে ব্লকের ব্যবহার বাড়াতে হবে। পানির ব্যবহারে আরো স্মার্ট হতে হবে। বৃষ্টির পানির ব্যবহার বাড়াতে হবে৷ ভ‚মিকম্প সহনীয় বিল্ডিং তৈরি করতে হবে। সহজ কথায় একটি স্মার্ট ও স্বাস্থ্যসম্মত শহর তৈরি করতে হবে।

পরিশেষে আমরা বলবো, সরকার রাজধানীর ওপর মানুষে ঢল ঠেকাতে ও চাপ কমাতে নগর বিশেষজ্ঞদের পারমর্শ অবশ্যই কানে তুলবে।