ঢাকা, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল: শর্ত নিশ্চিত করতে হবে

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২৩, ০৭:১৩ বিকাল  

অবশেষে স্বপ্নের পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলতে পারবে। সম্প্রতি একমাত্র পদ্মা সেতু ছাড়া দেশের সব সেতু দিয়ে ঈদে মোটরসাইকেল চলতে পারবে বলে নির্দেশ জারি করা হয়। 

মোটরসাইকেল চালকরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন, তারা ঈদে পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে গন্তব্যে যেতে চান। সরকার মোটরসাইকেল চালকদের ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখিয়ে পদ্মা সেতুতে কিছু নির্দেশনা মেনে মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি দিয়েছে। 

জানা গেছে, ২০ এপ্রিল থেকে পরীক্ষামূলকভাবে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলবে। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ দিয়েছেন। মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি এই নির্দেশ দেন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এই তথ্য জানান। 

ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলকভাবে চলবে মোটরসাইকেল। ২০ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারবে। সেতুর বাম পাশে সার্ভিস লেন দিয়ে চলবে। স্পিড লিমিট ঘণ্টায় থাকবে ৬০ কিলোমিটার। গতি এর বেশি তোলা যাবে না। কোনোভাবেই সার্ভিস লেনের বাইরে মূল সেতুতে মোটরসাইকেল আসতে পারবে না। নির্ধারিত হারে টোল প্রদান করতে হবে। যদি নিয়ম না মানে তাহলে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হবে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন করার পরদিন যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় পদ্মা সেতু। প্রথম দিন বিপুল সংখ্যক মোটরসাইকেল সেতু দিয়ে পার হয়। টাকার বিনিময়ে বাইকে করে সেতু পার করে দেওয়ার অভিযোগও ওঠে। এরমধ্যেই ওই দিন রাতে এক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই জন মারাত্মক আহত হন। ওই দুর্ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। পরদিন সেতুটি দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করে সরকার। 

ঈদে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি দেওয়া হলেও কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার শেখ ওয়ালিদ ফয়েজের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নির্ধারিত টোল দিয়ে পদ্মা সেতুতে ওঠা যাবে। মোটরসাইকেলের জন্য নির্ধারিত টোলবুথ ও নির্ধারিত লেন (বাম পাশের সার্ভিস লেন) ব্যবহার করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই নির্ধারিত লেন পরিবর্তন করা যাবে না। ওভারটেকও করা যাবে না।

সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হতে পারবে। চালক ও আরোহীকে হেলমেটসহ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাসামগ্রী ব্যবহার করতে হবে। সেতুর ওপর দাঁড়ানো বা ছবি তোলা যাবে না। চালকসহ সর্বোচ্চ দুই জন মোটরসাইকেলে চড়তে পারবেন। এতে বলা হয়, এই শর্তসমূহ মেনে পদ্মা সেতু ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। শৃঙ্খলা না মানলে মোটরসাইকেল চলাচলের এ সুযোগ বাতিল করা হবে বলেও জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। 

দুর্ঘটনা এড়াতে সরকারের দেওয়া শর্ত সঠিকভাবে মোটরসাইকেল চালকরা মেনে চলবে বলে আশা করা যায়। সম্প্রতি দেশে সড়ক দুর্ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে। দুর্ঘটনায় অন্য যানের সঙ্গে বেশিভাবে মোটরসাইকেল যুক্ত হয়েছে।

বেপারোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর কারণে বর্তমানে সড়কে মৃত্যু বেড়ে গেছে। এ কারণে মহাসড়কে মোটরসাইকেল বন্ধ করার দাবি ওঠে। অন্যদিকে আবার মোটরসাইকেল চালকরা মহাসড়কে মোটরসাইকেল চালানোর দাবিতে আন্দোলন-বানববন্ধন সহ নানা কর্মসূচি পালন করে। 

এদিকে দেশে সড়ক দুর্ঘটনার রাশ টেনে ধরতে মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালা খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে ঈদ-পূজার আগে-পরে ১০ দিন মহাসড়কে বাইক নিষিদ্ধের প্রস্তাব করা হয়।

সব মহল থেকেই দাবি তোলা হয় যে, দেশের সড়ক দুর্ঘটনারোধে সড়ক আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন জরুরি। এটা যথাযথ বাস্তবায়িত না হওয়ায় দুর্ঘটনার রাশ টেনে ধরা যাচ্ছে না। এমতাবস্থায়-মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালার প্রাসঙ্গিতার গুরুত্ব আছে। 

জানা গেছে, সারা দেশে মোটরসাইকেলের ব্যবহার বেড়েছে দ্রুতগতির। স্বল্প দূরত্বের বাহনটি এখন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এতে দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এই পরিস্থিতির রাশ টানতে সরকার ‘মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালা’র খসড়া তৈরি করেছে। 

এতে বলা হয়েছে, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, দুর্গাপূজার মতো উৎসব-পার্বণের আগে-পরে ১০ দিন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে মোটরসাইকেল চালানো বন্ধ রাখা হবে। এছাড়া মহাসড়কে মোটরসাইকেল আরোহী বহন এবং ১২৬ সিসি ইঞ্জিনের নিচে বাইক চলাচলও নিষিদ্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। খসড়াটি শিগগিরই অনুমোদন পেতে পারে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। 

আগের চেয়ে সস্তা হওয়ায় মোটরসাইকেল নির্ভর হয়ে পড়েছে মানুষ। দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো উন্নত হওয়ায় যানবাহন গতি বাড়িয়ে চলে। কিন্তু দেশে দক্ষ চালকের অভাব আছে। ফলে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত হচ্ছেন। গড় হিসেবে দেখা যাচ্ছে- মোটরসাইকেল অহরহ দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে পড়ছে। এ কারণে, ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে মহাসড়কে মটোরসাইকেল চালান নিষিদ্ধের দাবি ওঠে। তবে যে শর্তে স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে, এই শর্ত যেন মোটরসাইকেল চালকরা মেনে চলে তা নিশ্চিত জরুরি। অন্যদিকে অন্য সেতুতেও যেন দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য কঠোর শর্তের বেড়াজালের মধ্যদিয়ে মোটরসাইকেল চালকরা যান চালান তা নিশ্চিত জরুরি।

মোট কথা, মোটর সাইকেলসহ সব ধরনের যান চলাচলের ওপর সড়ক আইন কঠোরভাবে কার্যকর করা গেলে দুর্ঘটনারোধ সম্ভব হবে আশা করা যায়।

দৈনিক সরোবর/ আরএস