ঢাকা, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

গণতন্ত্রের ভিত্তি সুদৃঢ় করার কাজে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: এপ্রিল ১৩, ২০২৩, ১২:৫৩ রাত  

দেশের জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্ণ হলো। অনেকে চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে দেশের জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্ণ হলো। এটা দেশের জন্য সবচেয়ে বড় অর্জন। দেশের গণতন্ত্রের জন্য মূল্যবান একটি বিষয়।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি আমরা। দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য জাতির পিতার ত্যাগ-তিতিক্ষাই ছিলো স্বাধীনতার মূলমন্ত্র। ৩০ লাখ শহীদ আর হাজার হাজার মা-বোনের সম্ভ্রের বিনিময়ে আমরা পেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ। 

জাতির পিতার সুযোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। তিনি ক্ষমতায় আসার পর দেশের গণতন্ত্রের ভিত্তি শক্তিশালী করার সব রকমের প্রচেষ্টা নিয়েছেন। তাই দেশের গণতন্ত্র যেমন সুদৃঢ় হয়েছে, অন্যদিকে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি এগিয়ে যাবার পথে রয়েছে।

জাতীয় সংসদের ৫০ বছর উপলক্ষে জাতীয় সংসদে বক্তব্য রেখেছেন রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বক্তব্যের মূল বিষয় ছিলো গণতন্ত্র আমদানি রপ্তানি পণ্য নয়। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের মূল ছিলো গণতন্ত্র অগ্রায়নে ভূমিকা রাখছে জাতীয় সংসদ।

সামনে রয়েছে আমাদের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনের পর জাতীয় সংসদ আরো কার্যকর হয়ে উঠবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি (সুবর্ণ জয়ন্তী) উপলক্ষে গত শুক্রবার (৭ এপ্রিল) সংসদের বিশেষ অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
  
জাতীয় সংসদে দেওয়া স্মারক বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, গণতন্ত্র আমদানি বা রপ্তানিযোগ্য কোনো পণ্য বা সেবা নয়। মনে চাইল কোনো দেশ থেকে পরিমাণমতো গণতন্ত্র আমদানি বা রপ্তানি করলাম, বিষয়টি এমন নয়। চর্চার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র বিকশিত ও শক্তিশালী হয়। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত গণতন্ত্র চর্চায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

আমাদের দায়িত্ব এই দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রাকে বেগবান করা। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ এই মহান জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে আমি আজ দল-মত-নির্বিশেষে দেশবাসীর প্রতি আহবান জানাচ্ছি- আসুন, সবার সম্মিলিত প্রয়াসে প্রিয় মাতৃভ‚মি থেকে সংঘাত-সংঘর্ষ ও যেকোনো উগ্রবাদ ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড­দূর করে  কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠনে শামিল হই। 

গত ১৪ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও সুদৃঢ় নেতৃত্বে দেশের গণতন্ত্র আজ নিরাপদ ও সুরক্ষিত। বর্তমানে জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া অন্য কোনো গোষ্ঠী বা অসাংবিধানিক শক্তির রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের সুযোগ নেই। আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসের রাজনীতি দেশ ও অর্থনীতির জন্য কল্যাণকর হতে পারে না। 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। ক্ষমতায় যাওয়া বা পরিবর্তন আনার একমাত্র উপায় নির্বাচন। সংঘাত ভুলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে এসে গণতন্ত্রকে বিকশিত হতে সবাইর সহায়তা করা উচিত। প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও মহান সংবিধানের আলোকে বাংলাদেশের জনগণ নিরপেক্ষভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চার ইতিহাসকে আরো সমৃদ্ধ ও বেগবান করবে, এটাই সবার প্রত্যাশা।

সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় জাতীয় সংসদ সব ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। সংসদে সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যদের সমর্থন ও মতামতের ওপর নির্ভরশীল। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের কার্যক্রম তদারকির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের ‘নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য’ প্রতিষ্ঠা করা সংসদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। দক্ষ ও নিবিড় তদারকির মাধ্যমে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা সংসদকে অধিক কার্যকর করে, যা সামগ্রিক জনকল্যাণকেও নিশ্চিত করে। এ ক্ষেত্রেও একজন সংসদ সদস্য ব্যক্তিগত কিংবা সমষ্টিগতভাবে জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে সন্নিবেশিত বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে সংসদের কাছে সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারেন।  

বিশেষ অধিবেশনে সাধারণ প্রস্তাব উপস্থাপনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জাতীয় সংসদ অনন্য ভূমিকা পালন করছে। ৫০ বছরের পথ চলায় বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে। সংসদীয় গণতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু জাতীয় সংসদ অনেক চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র অগ্রায়নে ভূমিকা রেখে চলেছে। ধারাবাহিকভাবে ২০০৮ সালের পর এই দেশে গণতন্ত্র অব্যাহত আছে। যার ফলে একটা স্থিতিশীলতা আছে। মাঝে মাঝে আমাদের প্রতিবন্ধকতা, অনেক চড়াই-উতরাই পার হতে হয়। তার পরও বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

সরকারের জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মহান জাতীয় সংসদ অনন্য ভূমিকা পালন করছে। সংসদের স্থায়ী কমিটিগুলো এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে মন্ত্রণালয়ের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে মন্ত্রীর পরিবর্তে সদস্যদের নির্বাচিত করা হচ্ছে। বিরোধী দলের সদস্যদের থেকে স্থায়ী কমিটির সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সিপিএ ও আইপিইউয়ের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থায় সভাপতিত্ব ছিল বাংলাদেশের সংসদের প্রতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনের আস্থার প্রতীক। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের সংসদ একটি অনন্য দৃষ্টান্ত করেছে। গত তিন মেয়াদে জাতীয় সংসদের ধারাবাহিক অগ্রযাত্রা, সংসদীয় গণতন্ত্রের স্থায়িত্ব ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়নের ক্ষেত্র রচনা করেছে।

একটি বিরল দৃষ্টান্ত জাতির সামনে রেখে গিয়েছিলেন জাতির পিতা। ইচ্ছা থাকলে কত দ্রুত একটা দেশকে পুনর্গঠন, পুনর্বাসন ও উন্নয়ন করা যায়। আজকে তিনি বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে উঠত। আমরা জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে পথ চলি। তাই ধারাবাহিকভাবে ২০০৮ সালের পর এই দেশে গণতন্ত্র অব্যাহত আছে। যার ফলে একটা স্থিতিশীলতা আছে।

গণতন্ত্রের মানসকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দেশের গণতন্ত্রকে কেউ যাতে বিপন্ন অবস্থায় ঠেলে দিতে না পারে, এ ব্যাপারে সজাগ আছেন। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির হাতে দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত হওয়ার ফলস্বরূপ দেশের গণতন্ত্রের কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা সবাই জানেন। ফলে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী রূপ দিতে জাতীয় সংসদের ভূমিকা ও অবদানের কথা আমাদের মনে রাখতে হবে। পাশাপাশি দেশের সবাইকে গণতন্ত্রের ভিত্তি সুদৃঢ় করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

দৈনিক সরোবর/ আরএস