ঢাকা, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

রাজধানীতে জলাবদ্ধতা 

নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন 

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: জুন ০৮, ২০২৪, ০৯:১২ রাত  

বিষয়টি অবাক হওয়ার মতোই। রাজধানী ঢাকাকে জলাবদ্ধতা মুক্ত করার জন্য ইতোমধ্যে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। কিন্তু এই টাকা কোনো কাজেই লাগেনি। জলজটমুক্ত হয়নি রাজধানী। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় রিমেলের তাণ্ডবের প্রভাবে রাজধানীতে বৃষ্টিপাত হয়। এতে রাজধানী বহু জায়গা ডুবে যায়। এসব জায়গায় নৌকা চালানোর মতো অবস্থা হয়। প্রশ্ন হলো, ঢাকা সিটির জলজটমুক্তের সাফল্য কবে ধরা দেবে। অথচ রাজধানীকে জলজটমুক্ত করা গেল না। কর্তৃপক্ষের মনোভাব কী, তা আমরা জানি না। রাজধানীবাসী জলজটমুক্ত দেখতে চায়। ঢাকার দুই সিটির কর্তাদের উচিত নগরবাসীর এই চাওয়া পূরণ করা। ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে রাজধানীর খাল-নালা ড্রেন ঢাকার দুই সিটি নিজেদের হাতে নেয়ার পর আশা করা গিয়েছিল, এবার রাজধানী জলজটমুক্ত হবে। কিন্তু স্বপ্ন অধরাই থেকে যাচ্ছে। ঢাকার দুই সিটি রাজধানী খাল-নালা ড্রেন অর্বজনামুক্ত করায় অনেকটাই সফল। এগুলো এখনো প্রাণ ফিরে পায়নি। এগুলো প্রাণ ফিরিয়ে আনতে নগরবাসী দাবি অব্যাহত রয়েছে। 

ঢাকার দুই সিটি কতটা দুর্নীতিমুক্ত, তা আমরা জানি না। তবে বিএনপি জমানায় নগরভবন দুর্নীতির আখড়া ছিল। নগরবাসীর জন্য কোনো কাজ না করে শুধু দুর্নীতির মচ্ছবে গা ভাসাত। নিশ্চয় ওই পরিস্থিতি বিদ্যমান নেই এখন। এরপরও কেন সামান্য বৃষ্টিতে রাজধানী ডুবে যায়? গত এক যুগে সেবা সংস্থাগুলো ঢাকার জলজট নিরসনে খাল, ড্রেনেজ, নর্দমা পরিষ্কার ও উন্নয়নের নামে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করে ফেলেছে। এ মেগাসিটির বিদ্যমান ড্রেনেজ ব্যবস্থায় ঘণ্টায় ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে পানি সরতে লাগছে ১২ ঘণ্টা। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ২৭ মে রাজধানীতে থেমে থেমে দিনভর বৃষ্টি হয়। ওইদিন ১২ ঘণ্টায় ১৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এতে তলিয়ে যায় ধানমন্ডি, কলাবাগান, মিরপুরসহ পুরো ঢাকা শহর। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কুইক রেসপন্স টিমসহ নানা কার্যক্রম হাতে নিলেও দুই দিনেও সড়ক থেকে পানি সরাতে পারেনি। ঢাকা মহানগরীর প্রধান প্রধান ড্রেনলাইন নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল ঢাকা ওয়াসার। শাখা লাইনগুলোর দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের ওপর ন্যস্ত ছিল। ওই সময় রাজধানীর মোট ড্রেনেজ লাইনের মধ্যে ৩৮৫ কিলোমিটার ঢাকা ওয়াসা এবং ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার ঢাকা সিটি করপোরেশনের অধীন ছিল। এর বাইরে ৭৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ২৬টি খাল ও ১০ কিলোমিটার বক্স কালভার্টের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও ছিল ঢাকা ওয়াসার। এ কারণে বর্ষায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে সংস্থাগুলো একে অন্যের ওপর দায় চাপানোর সুযোগ পেত। কিন্তু ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ওয়াসার দায়িত্বে থাকা সব নালা ও খাল দুই সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করা হয়। দায়িত্ব ছাড়ার আগে ঢাকা ওয়াসা রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০৩ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়। এর মেয়াদ শেষ হয় ২০১১ সালে। তাও এ প্রকল্পে রাজধানীবাসী কোনো সুফল পায়নি। দ্বিতীয় ধাপে ২৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। সব মিলিয়ে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৯ বছরে জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা ওয়াসা ব্যয় করেছে ২ হাজার ২৫ কোটি টাকা। ঢাকা ওয়াসা ছাড়াও ড্রেনেজ খাতের উন্নয়নে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫৭৩ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। পরের দুই বছরে ব্যয় করেছে আরও ৪০০ কোটি টাকা। এছাড়া গত দুই বছর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ১৬১টি জলাবদ্ধ স্থান নির্ধারণ করে ১০৯টি স্থানে জলাবদ্ধতা নিরসনে ২৫২ কোটি খরচ করেছে। ফলে এভাবে নানা সময় ঢাকা ওয়াসা, সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতা নিরসনে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় করেও নগরবাসী কোনো সুফল পায়নি।

আমরা জানি, ঢাকা সিটির দুই মেয়র করিৎকর্মা। তারা যথেষ্ট বিচক্ষণ এবং রাজধানীবাসীর আশা-আকাক্সক্ষা পূরণে কাজ করছেন। মেগাসিটি ঢাকার সব সমস্যা তারা ক্রমান্বয়ে সমাধান করবেন এবং বড় সমস্যা জলজট থেকে মুক্তি দেয়ার তাদের আন্তরিকতার অভাব থাকবে না। জলাবদ্ধতা মোকাবিলার জন্য প্রথমত প্রয়োজন সঠিক, সুদূরপ্রসারী ও সমন্বিত পরিকল্পনা। অপরিকল্পিত নগরায়ন অব্যাহত থাকলে বৃষ্টির মৌসুমে ঢাকা জলাবদ্ধতার কারণে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়তে পারে। তাই সব নির্মাণের ক্ষেত্রে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা বিবেচনায় রাখতে হবে এবং এই ব্যবস্থার অবকাঠামোগত সম্প্রসারণ ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়মিতভাবে চালিয়ে যেতে হবে। জবরদখল হয়ে যাওয়া খাল, ছড়া ও অন্যান্য প্রাকৃতিক জলাশয় পুনরুদ্ধার করতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা, জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি যথাযথভাবে নিয়ম পালন করবে কর্তৃপক্ষ।