ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩১

৪০ হাজার কোটি টাকা কমল বাজার মূলধন

সরোবর প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪, ২০২৪, ০৮:৪৯ রাত  

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইর সাধারণ সূচক ডিএসইএক্সের ৪৮ পয়েন্ট পতনে বাজার মূলধন কমল ৩ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। এ নিয়ে গত ১৪ অগাস্ট দরপতন শুরু হওয়ার পর থেকে দুই মাসে বাজার মূলধন কমল ৪০ হাজার ৬৬০ কোটি টাকার বেশি।

সাপ্তাহিক বন্ধ ও দুর্গাপূজা মিলিয়ে চার দিন ছুটি শেষে সোমবার পুঁজিবাজারে লেনদেনের শুরুতে সূচক বাড়লেও দিন শেষে তা কমে যায়।

১১৯টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে ২২৫টির দর হারিয়ে লেনদেন শেষ করে। আগের দিনের দরে হাতবদল হয় ৫২টি কোম্পানি। দিনভর ৩৫০ কোটি টাকার শেয়ার হাতবদলের তথ্যই বলে দেয় বিনিয়োগকারীরা এখনও নিষ্ক্রিয়। গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকেই ডিএসই লেনদেন চারশত কোটি টাকার নিচে রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ৯৮ পয়েন্ট সূচক বৃদ্ধির দিন লেনদেন ছিল ৩৭৬ কোটি টাকার বেশি।

গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর প্রাথমিক উচ্ছ্বাসে পুঁজিবাজারে দেখা দেয় উত্থান। চার কর্মদিবসে প্রায় ৮০০ পয়েন্ট সূচক বৃদ্ধির পাশাপাশি ৬ থেকে ১৪ অগাস্ট বাড়ে বাজার মূলধন।

১৪ অগাস্ট বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ১১ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা। তবে পরদিন থেকে শুরু হয় টানা দরপতন। এর মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি অতীতে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধির বিষয়ে তদন্ত কমিটি, শেয়ারদর বৃদ্ধির ঘটনায় কারসাজির অভিযোগে ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা, ঘোষিত লভ্যাংশ বিতরণ না করাসহ নানা কারণে ২৮টি কোম্পানিকে জেড শ্রেণিতে পাঠায়। এসব ঘটনায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয় আর টানা দরপতন ঘটছে।

এর মধ্যে পুঁজিবাজারে সংস্কার নিয়ে রোডম্যাপ তৈরিতে অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ বিষয়ে ৫ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এরপর পূজার ছুটি শুরু হওয়ার আগে গত বুধবার বাজারে উত্থান দেখা দেয়। তবে একদিন যেতে না যেতেই দরপতনে ব্যাংক, বীমা, প্রকৌশলসহ প্রায় সব খাতের বেশিরভাগ শেয়ার দর হারাল। এই দরপতনে শেয়ার দর হারিয়ে বাজার মূলধন দাঁড়াল ৬ লাখ ৭১ হাজার ২১০ কোটি টাকা, যা ঠিক দুই মাস আগের তুলনায় ৪০ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা কম।

অথচ সরকার পতনের পর গ্রামীণফোনের বাজার মূলধন প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা, ইসলামী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা, ব্র্যাক ব্যাংকের বেড়েছে পৌনে তিন হাজার কোটি টাকা।
 
সোমবার পুঁজিবাজারে লেনদেন চলার সময় স্টক ব্রোকারদের সমিতি ডিবিএর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে লেনদেনে শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখা ব্যাংক খাত এদিন পিছিয়ে গেছে। অন্য খাতের তুলনায় সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে ওষুধ ও রসায়ন। এই খাতের ৬৪ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে, যা মোট লেনদেনের প্রায় ১৯ শতাংশ। খাতটির ১০টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ২২টির দর। দুটি হাতবদল হয়েছে আগের দিনের দামে।

দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্যাংক খাতে লেনদেন হয়েছে ৫৫ কোটি টাকার কিছু বেশি, যা মোট লেনদেনের ১৬ শতাংশের কিছু বেশি। খাতটির কেবল একটি কোম্পানির দর বেড়ে, ২৭টির হারিয়ে এবং আটটি আগের দিনের দরে লেনদেন হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি, বস্ত্র এবং খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাত ছিল এর পরের অবস্থানগুলোতে। এসব খাতেও বেশিরভাগ কোম্পানি দর হারিয়েছে।
দর বৃদ্ধি ও পতনের শীর্ষে কারা

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, একক কোম্পানি হিসেবে সর্বোচ্চ সীমা বা সার্কিট ব্রেকার ১০ শতাংশ ইউনিট দর বেড়েছে ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ড।

দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ঋণ কেলেঙ্কারিতে জর্জর আর্থিক খাতের কোম্পানি বিআইএফসি। বিডিকম ও ফারইস্ট নিটিং ও ডায়িংয়ের দরও বেড়েছে সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে।

ইফাদ অটোস, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, রানার অটো, সায়হাম কটন ও আইসিবিএএমসিএল সোনালী ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ছিল দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায়। এসব কোম্পানির দর ৫.২৬ শতাংশ থেকে বেড়েছে ৯.১৩ শতাংশ। অন্যদিকে দরপতনের তালিকায় ৯ শতাংশ দর হারিয়ে শীর্ষে উঠে এসেছে রতনপুর স্টিল রি রোলিং মিলস লিমিটেড। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬.৮১ শতাংশ দর হারিয়েছে ওয়ালটন। রেনউইক যগেশ্বর, লিবরা ইনফিউশন, ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল হেভি ক্যামিকেলস, অগ্নি সিস্টেমস, এসকে ট্রিমস, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস ও খুলনা পেপার মিলস ছিল দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশে। এর প্রতিটির দরই কমেছে ৫ শতাংশের বেশি। ডিবিএ-বিএসইসি বৈঠক

লেনদেন চলাকালে বেলা ১১টায় ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সঙ্গে বৈঠক করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বিএসইসি। বৈঠকে পুঁজিবাজার সংস্কার আইনের সংস্কার, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো নিয়ে আলোচনা হয়। ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অসঙ্গতিপূর্ণ এবং ব্যবসায় বাধা প্রদানকারী বিদ্যমান আইন কানুন ও নিয়মনীতির প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে কমিশন চেয়ারম্যান আশ্বাস দিয়েছেন। ব্রোকারেজ হাউজের উপর আরোপিত কিছু বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার দাবিও করা হয়ে বৈঠকে জানিয়েছেন তিনি।

বিকেলে বিজ্ঞপ্তিতে ডিবিএ জানিয়েছে, বৈঠকে সমন্বিত গ্রাহক হিসাব (সিসিএ) থেকে সুদ বণ্টন, মূল ব্যবসার বাইরে বিনিয়োগ, আনএডিটেবল ব্যাক অফিস সফটওয়্যার বাস্তবায়ন, কোম্পানিকে লিমিটেড থেকে পিএলসি করতে চার্জ প্রদান, মার্জিন ঋণের উপর সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ সুদ হার নির্ধারণ করার বিষয়টি উঠিয়ে দেওয়া, স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন ও স্কিম পুনর্মূল্যায়ন করার দাবি করা হয়।

বিএসইসি আরেক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, সংস্থার চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেছেন, একটি সমৃদ্ধ ও সফল পুঁজিবাজার গড়তে হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও পুঁজিবাজারের সাথে সম্পৃক্ত সকল অংশীজন প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। সকলের সহযোগিতা ও সমর্থনের মাধ্যমেই পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও সংস্কার সম্ভব।

দৈনিক সরোবর/এএস