add

ঢাকা, সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১

সংকটেও পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ব্যাংকের

সরোবর প্রতিবেদক 

 প্রকাশিত: জুলাই ০২, ২০২৪, ১২:৩৯ দুপুর  

প্রকৃত মুনাফা যেমনই হোক, জুন শেষে বরাবরের মতো পরিচালন মুনাফা বেড়েছে বেশির ভাগ ব্যাংকের। গেলো ছয় মাসে কোনো কোনো ব্যাংকের এই মুনাফা বেড়েছে ১০ কোটি থেকে সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা পর্যন্ত। কিন্তু অনেক ব্যাংকার পূর্ণাঙ্গ হিসাব বা কর পরিশোধের আগে পরিচালন মুনাফা হিসাব করতে নারাজ।

ব্যাংকগুলোর প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে দুই হাজার ২৬০ কোটি টাকা। কিন্তু গত বছরের একই সময়ে তাদের মুনাফা ছিল এক হাজার ৬৮০ কোটি। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এবার ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ৫৮০ কোটি টাকা। 

রাষ্ট্রায়ত্ত অপর রূপালী ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ৪৫০ কোটি। কিন্তু ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুনে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৩২০ কোটি।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে বছরের প্রথম ছয় মাসে সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৫৭৯ কোটি। গত বছরের একই সময়ে ৪০৭ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল ব্যাংকটি। এক বছরে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ১৭২ কোটি টাকা। 

এছাড়াও জানুয়ারি থেকে জুনে মধুমতি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ১৮০ কোটি, যা আগের বছর ছিল ৮১ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকটির মুনাফা বেড়ছে ৯৯ কোটি টাকা। এবছরের প্রথম ছয় মাসে ইউনিয়ন ব্যাংক ২৫০ কোটি ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ২১১ কোটি টাকার মুনাফা অর্জন করেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফার প্রবৃদ্ধির তথ্য দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। দেশের ব্যাংকগুলোর আয়ের বড় একটি অংশ আসে বৈদেশিক বাণিজ্যের কমিশন থেকে। বিদায়ী বছর আমদানি কমেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ। শ্লথ ছিল রফতানি ও রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধিও। যদিও শেষের দিকে রেমিট্যান্সের গতি কিছুটা বেড়ছে। আবার খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় সব ব্যাংকের। কিস্তি পরিশোধ অনিয়মিত হয়ে পড়ায় বাড়ছে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ। তারল্য সংকট, মূলধন ঘাটতি, সঞ্চিতি (প্রভিশন) ঘাটতিসহ বেশির ভাগ ব্যাংকের আর্থিক ভিতও নাজুক হয়ে উঠেছে। এরপরও দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বেড়েছে।

ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফায় প্রবৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, পরিচালন মুনাফা বাড়ার অর্থ এটি নয় যে ব্যাংক খাত ভালো আছে। সঞ্চিতি সংরক্ষণ ও কর পরিশোধের পর পরিচালন মুনাফার কত অংশ টেকে সেটিই দেখার বিষয়। ব্যাংকগুলোয় মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আবার কিছু ব্যাংক মূলধন ঘাটতি ও সঞ্চিতি ঘাটতিতে রয়েছে। ডলার ও তারল্য সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক প্রত্যাশানুযায়ী ব্যবসা করতে পারছে না।

আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে যে মুনাফা থাকে সেটিকেই বলা হয় পরিচালন মুনাফা, যা কোনো ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। এ মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণ ও অন্যান্য সম্পদের বিপরীতে প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) সংরক্ষণ এবং সরকারকে কর পরিশোধ করতে হয়। প্রভিশন ও কর-পরবর্তী এ মুনাফাকেই বলা হয় ব্যাংকের প্রকৃত বা নিট মুনাফা। বিপুল পরিমাণ ঋণ পুনঃতফসিল সত্ত্বেও চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ। এসব ঋণের বিপরিতে প্রভিশন রেখে সরকারের কর পরিশোধের পর নিট মুনাফার হিসাব হবে।

পুনঃতফসিলকৃত ঋণকে ‘স্ট্রেসড’ বা ‘দুর্দশাগ্রস্ত’ হিসেবে দেখায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে পুনঃতফসিলকৃত ঋণের স্থিতি ছিল ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকার বেশি। আবার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আদায় অযোগ্য হওয়ায় ব্যাংকগুলো ৬৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করেছে। সব মিলিয়ে দেশের ব্যাংক খাতের অন্তত এক-চতুর্থাংশ ঋণই ছিল দুর্দশাগ্রস্ত।

দৈনিক সরোবর/এএল