ঢাকা, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১

রহস্যময় সুড়ঙ্গ, এক পাশে বাংলাদেশ অন্যপাশে ভারত

ফেনী প্রতিনিধি

 প্রকাশিত: জুলাই ০৯, ২০২৩, ০৫:২৬ বিকাল  

কালের বিবর্তনে এখনো অক্ষত আছে ফেনীর ভাটির বাঘ খ্যাত বাংলার বীর শমসের গাজীর সুড়ঙ্গ। অবিভক্ত বাংলায় তৈরি হওয়া এ সুড়ঙ্গের বর্তমানে একমুখ বাংলাদেশে, অন্যমুখ ভারতে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুঁটে আসে পর্যটক সুড়ঙ্গ ও শমসের গাজীর ভিটা দেখতে।

জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী চম্পকনগর ও সোনাপুর এলাকাটি মূলত শমসের গাজীর স্মৃতি বিজড়িত স্থান। সেখানে রয়েছে শমসের গাজীর সুড়ঙ্গ, শমসের গাজী বাঁশের কেল্লা রিসোর্ট, দিঘিসহ নানা স্থাপনা। 

স্থানীয়দের তথ্য মতে, ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী এবং ত্রিপুরার রোশনাবাদ পরগনার কৃষক বিদ্রোহের নায়ক শমসের গাজীর প্রাসাদসহ অন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ ভারতের ত্রিপুরার মধ্যে ভাগ হয়ে গেছে।

এখানকার গাজীর সুড়ঙ্গ পথটি নিয়ে রয়েছে অনেক গল্প ও উপাখ্যান। ইতিহাসের এই আশ্রমটি দেখতে সবসময় এখানে ভিড় করেন পর্যটকরা। স্থানীয় সামছুল হক নামে এক বয়োবৃদ্ধ বাসিন্দা জানান, এ সুড়ঙ্গের দিকে তাকালেই রহস্যময় অনুভূতির সৃষ্টি হয়। ছোট থেকে এটি নিয়ে নানা কথা শুনে আসছি।

সোলায়মান হাজারী নামে আরেক পর্যটক বলেন, শমসের গাজী পরিবারের নারীদের জন্যই এ সুড়ঙ্গ পথটি তৈরি করেছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে। এ পথ দিয়ে গাজীর পরিবারের নারী সদস্যরা গোসলে যেতেন।

সুড়ঙ্গের অদূরেই রয়েছে শমসের গাজীর একটি দিঘি। যাকে এক খুইল্লা দিঘিও বলা হয়। এটিকে নিয়েও রয়েছে নানা গল্প। কথিত আছে, এ দিঘিটির ওপর ঢিল ছুঁড়ে কেউ কখনও দিঘি পার করতে পারেনি। স্থানীয় প্রবীণরা বলেন, এতে অলৌকিক শক্তি আছে। যে কারণে ঢিল ছুঁড়ে দিঘি পার করা যায় না। 

শমসের গাজীর স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম আরেকটি হল বাঁশের কেল্লা রিসোর্ট। বাঁশের নান্দনিক নির্মাণ শৈলীতে গড়ে তোলা হয়েছে এই রিসোর্টটি। এর পুরো আঙিনায় রয়েছে নানা শৈল্পিক আয়োজন, বিভিন্ন ধরনের ফল আর ফুলের বাগান। সেই বাগানের পাশের খোলা আঙিনার ধারে বাঁশের মাচা। আর খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ি ঘরের নমুনায় নির্মিত হয়েছে আসবাব।

নবাব শমসের গাজীর বংশধর পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূঞাঁ নবাবের স্মৃতি ধরে রাখতে ৫ একর জায়গায় শমসের গাজীর বাঁশের কেল্লা রিসোর্টটি তৈরি করেন। এখানের প্রতিটি আসবাবপত্রই বাঁশ দিয়ে তৈরি করা।

দর্শনার্থী ও স্থানীয়রা বলছেন, সম্ভাবনাময় এ পর্যটন স্পটকে ঘিরে যদি নিরাপত্তার ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয় এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা যায় তাহলে এটির কদর আরো বাড়বে।

ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল বলেন, এ জায়গাটি ফেনীর ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। দারুণ সম্ভাবনাময় পর্যটন স্থান হিসেবে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করতে এখানে আরও বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে। পর্যটন কর্পোরেশনের সঙ্গে কথা বলে সে ধরনের কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

ফেনী জেলাপ্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান বলেন, শমসের গাজীর সুড়ঙ্গ ও দিঘির বিষয়াবলী দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে তুলে ধরার জন্য আমরা ফেনী গাইড নামে একটি প্রকাশনা করেছি। সেখানে এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া এ স্থানটিকে আরও পর্যটকবান্ধব করতে পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে স্টারলাইন পরিবহনে সরাসরি ছাগলনাইয়া যাওয়া যায়। এছাড়া শ্যামলী, ইউনিক, সোহাগ, গ্রিন লাইন ও সৌদিয়া পরিবহনের বাসে ফেনী যেতে হবে। ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মহানগর গোধূলি ও তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনে ফেনী যাওয়া যায়। এরপর ফেনী সদর হাসপাতাল মোড় থেকে সিনএনজিযোগে ছাগলনাইয়া উপজেলা হয়ে স্থানীয় পরিবহনে শুভপুর এলাকায় শমসের গাজীর দিঘি ও সুড়ঙ্গ পথে যেতে হবে।

দৈনিক সরোবর/আরএস