কলা গাছে পানামা রোগ, স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় কাঁদছেন চাষিরা
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২৪, ০৪:৫৬ দুপুর

পাবনার ঈশ্বরদীতে কয়েকশ হেক্টর জমির কলা গাছ পানামা রোগ আক্রান্ত হয়েছে। চাষিরা যে স্বপ্ন নিয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করে কলার আবাদ করেছিলেন তাদের চোখের সামনেই মরছে হাজার হাজার কলা গাছ। ফলে স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় কাঁদছেন চাষিরা।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পদ্মার চর জুড়ে ১৮৪০ হেক্টর জমিতে কলার চাষাবাদ হয়েছে। এরমধ্যে লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নেই ১৮০০ হেক্টর জমিতে কলা আবাদ হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কলাচাষে লাভবান হওয়ায় ইউনিয়নের কামালপুর, দাদাপুর, লক্ষ্মীকুণ্ডা, কৈকুণ্ডা, চরকুড়–লিয়া, শান্তিনগর, ডিগ্রীর চর জুড়ে কৃষকরা অন্য ফসল না করে এবার শুধু কলার আবাদ করেছেন।
স্থানীয় কলা চাষিরা জানান, একটি অজ্ঞাত ভাইরাস কলা গাছে আক্রমণ করেছে। এ ভাইরাস প্রথমে কলাগাছের পুরাতন পাতাতে আক্রমণ করে এবং ধীরে ধীরে উপরের দিকে পৌঁছে কচি পাতাকেও আক্রমণ করে। এতে কলাপাতা বাদামী বর্ণ ও শুঙ্ক হয়ে যায়। কিছুদিন পর পাতা ঝরে পড়ে। কলাগাছের গোড়া বা কাণ্ড ভাইরাসের আক্রমণে হলদেটে থেকে লালচে আঁকাবাঁকা দাগ হয়। পরে গোড়ার নিচে ও ওপরের অংশ পঁচন ধরে গাছের মৃত্যু হয়। অনেক সময় কলা গাছ ফেটে যায়। গাছ কাটার পর ভেতরের সাদা অংশ কালচে দেখা যায়। এ বছর হাজার হাজার কলা গাছ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। এছাড়াও এ ভাইরাসে আক্রান্ত কলার ওপরের অংশে কালচে দাগ হয়। কলা অপুক্ত ও স্বাদহীন হয়। এরোগ থেকে কলা গাছকে রক্ষা করা না গেলে শত শত চাষি বাধ্য হয়ে লোকসান থেকে বাঁচতে কলা চাষ বন্ধ করে দিবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫-৬ বছর আগে উপজেলার পদ্মা তীরবর্তী লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চল জুড়ে শুরু হয় কলা চাষ। প্রথম বছরেই চাষিরা ব্যাপক লাভবান হওয়ায় পর্যায়ক্রমে এ ইউনিয়নের ১৮০০ হেক্টর জমিতে কলা চাষবাদ করাহয়। এছাড়াও উপজেলার অন্যান্য এলাকায় আরও ৪০ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়। চরাঞ্চলে কলাচাষাবাদ বদলে দিয়েছে এখানকার গ্রামীণ অর্থনীতি। চাষিরা সবাই আর্থিকভাবে সাবলম্বী হয়েছেন।
প্রতি বিঘা জমিতে ৩৫০ থেকে ৪০০ কলার চারা রোপন করা হয়। জমির খাজনা, সার-বীজ ও চাষাবাদ খরচে প্রতিটি কলা গাছে খরচ হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। এখানকার প্রতিটি কলার ছড়ি বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি বিঘায় কৃষকের কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা লাভ হয়। এখানে সবচেয়ে চাষ হয় সরবি কলা। এছাড়াও মেহেরসাগর, অমৃতসাগর ও মন্দিরা কলার চাষ হয়। এছাড়াও কলা গাছের মুচি ও কলার ভেতরের অংশ সবজি হিসেবে বাজারে বেচাকেনা হয়।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়, রোগাক্রান্ত কলা গাছ পুড়িয়ে ফেলতে হবে। পানামা রোগ মুক্ত চারা সংগ্রহ করে রোপন করতে হবে। দুই তিন বছর পর কলা চাষ বন্ধ রেখে ওই জমিতে অন্য ফসল ফলাতে হবে। এছাড়াও জমিতে চুন প্রয়োগ করে মাটির জৈব শক্তি বাড়ালে পানামা রোগ থেকে কলা গাছ মুক্ত রাখা যেতে পারে।
পাবনা সদর চরপ্রতাপপুর এক গ্রামের চাষি নাজিম হোসেন ঈশ্বরদীর লক্ষ্মীকুণ্ডার শান্তিনগর চরে ১২০ বিঘা জমিতে কলার চাষ করেছেন। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ১১ বছর ধরে আমি কলার আবাদ করছি। শান্তিনগর চরেও পাঁচ বছর ধরে আবাদ করছি। প্রতি বছরই কলা চাষে লাভ হয়। এবার ভাইরাসের কারণে কলা গাছ মরে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও সার-কীটনাশকের দাম বৃদ্ধির কারণে লোকসানের পরিমাণ আরো বেড়েছে।
একই গ্রামের চাষি বেল্লাল চৌকিদার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, কলা গাছের গুড়ায় পঁচন ধরে ও মাঝের কচি পাতা শুকিয়ে গেলে বোঝা যায় ভাইরাস আক্রমণ করেছে। এ ভাইরাস প্রতিরোধে স্থানীয় কৃষি অফিস আমাদের এখনো পর্যন্ত কোন সমাধান দিতে পারেনি।
লক্ষীকুণ্ডা ইউনিয়নের কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা শামীমা খাতুন সংবাদমাদ্যমকে বলেন, ভাইরাসের আক্রান্ত কলা গাছের পাতা কেটে পুড়িয়ে ফেলা ও ছত্রাক নাশক স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছি।
স্থানীয় কৃষি অফিস কৃষকদের এ ভাইরাস সম্পর্কে কোনো পরামর্শ দেয়নি কৃষকদের এ অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিটি কলা চাষির দ্বারে দ্বারে গিয়ে পরামর্শ দেওয়া সম্ভব নয়। যারা পরামর্শ চেয়েছেন তাদের দেওয়া হয়েছে।
দৈনিক সরোবর/এএস