ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩১

রঙিন মুখে মাকে বিদায়ের প্রস্তুতি

সরোবর প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৪, ০৬:৩৯ বিকাল  

আজই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার নবমী এবং দশমী। একই দিনে তিথি হওয়ায় নবমীর পূজার পর দশমীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে আজ শনিবার। সেই সঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসবের ইতি হচ্ছে আজই। আগামীকাল শুধু প্রতিমা বিসর্জন। এরই মধ্যে মর্ত্যলোক ছেড়ে কৈলাসে ফিরে যাবেন দেবী দুর্গা। আর সেজন্য ভক্তদের মধ্যে আছে বিষাদের ছায়া। মণ্ডপে মণ্ডপে বেজে গেছে মায়ের বিদায়ের ঘণ্টা। হাসিমুখে দেবী দুর্গাকে বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভক্তরা।

সনাতন ধর্মমতে, নবমীর পুণ্য তিথিতে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে বিশ্বে শুভ শক্তির প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন দেবী দুর্গা। নবমী তিথি শুরু হয় সন্ধিপূজা দিয়ে। তিথি অনুযায়ী সন্ধিপূজা আয়োজিত হয়েছে গতকাল শুক্রবার। অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীর প্রথম ২৪ মিনিট সর্বমোট ৪৮ মিনিটে সন্ধিপূজা হয়। এসময় মূলত দেবী চামুণ্ডার পূজা করা হয়। এই সময়েই দেবী দুর্গার হাতে বধ হয়েছিল মহিষাসুর, আর রাম বধ করেছিলেন রাবণকে। এই দিনই দুর্গাপূজার অন্তিম দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ পরের দিন কেবল বিসর্জনের পর্ব। নবমীর রাতে উৎসবের রাত শেষ হয়। আর দশমী রাতে মণ্ডপে মণ্ডপে বিদায়ের ঘণ্টা বাজে। তবে এবছর একই দিনে তিথি হওয়ায় নবমী এবং দশমীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে আজ শনিবার সকালে।

মহানবমী তিথিতে বিহিত পূজা এবং দর্পণ বিসর্জনের মাধ্যমে মণ্ডপে মণ্ডপে দেবীর দুর্গার আরাধনা করেছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। এ দিন সকাল ৬টা থেকে হয় নবমী বিহিত পূজা। ১০৮টি বেল পাতা, আম কাঠ, ঘি দিয়ে যজ্ঞের মাধ্যমে দেবী দুর্গার কাছে দেওয়া হয় আহুতি। 

গোপীবাগে রামকৃষ্ণ মিশনে সকাল ৮টা ২৬ মিনিটে শুরু হয় নবমী পূজা। সকালে ঝড়বৃষ্টি মাথায় নিয়ে পূজায় অঞ্জলি নিতে হাজির হন ভক্তরা। অতিরিক্ত বৃষ্টির মধ্যে অনেককেই যানবাহনের জন্য দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। অনেকে ঠিক সময়ে মণ্ডপেও পৌঁছাতে পারেননি।

ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে ভোর থেকেই নবমীর বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার পুরোহিত প্রণব চক্রবর্তী।

এবার তিথি অনুযায়ী, নবমী পূজা সকাল ৯টা ২০ মিনিটের মধ্যে শেষ করার নিয়ম ছিল। সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে নবমী পূজা শেষ করে ৮টা ৫০ মিনিটে ভক্তরা দেবীকে অঞ্জলি প্রদান করেন। পরে শুরু হয় দশমীর বিহিত পূজা।

প্রণব চক্রবর্তী আরো জানান, দশমীর তিথি আগামীকাল ভোর ৪টা পর্যন্ত আছে। যেহেতু দিনের বেলা দশমীর বিহিত পূজা করতে হয়, সেজন্য নবমীর পূজার পরেই দশমীর বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।  

পূজা দিতে আসা মল্লিক চক্রবর্তী বলেন, আমাদের সব কষ্ট দূর করে তিনি (দেবী দুর্গা) চলে যাবেন। এক বছর পর মা আবার আসবেন। আগামী বছর আবার আমাদের মাঝে এসে শান্তি বিলিয়ে দিয়ে যাবেন এই কামনা করি।

এদিকে পূজা শেষে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। দশমীর আরও আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে আছে সিঁদুর খেলা, মাকে মিষ্টি দান এবং এরপর প্রতিমা বিসর্জন। তবে পূজা উদযাপন পরিষদ বলছে, শনিবার দশমী পূজা হয়ে গেলেও রবিবারে করা হবে প্রতিমা বিসর্জনসহ বাকি আনুষ্ঠানিকতা।  

সিঁদুর খেলে দুর্গা মাকে রঙিন মুখে বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিবাহিত নারীরা। দুর্গা পূজায় সবশেষ রীতিটি হচ্ছে ‘দেবী বরণ’। এটি শুরু হয় বিবাহিত নারীদের সিঁদুর খেলার মাধ্যমে। বিবাহিত নারীরা সিঁদুর, পান ও মিষ্টি নিয়ে দুর্গা মাকে সিঁদুর ছোঁয়ানোর পর একে-অপরকে সিঁদুর মাখিয়ে দেন। তারা এই সিঁদুর মাখিয়ে দুর্গা মাকে বিদায় জানান। দুর্গাকে নিয়ে যাওয়ার আগে সিঁথিতে সিঁদুর মাখানোর পর আঙুলে লেগে থাকা বাকি সিঁদুরটুকু তারা একে-অপরের মুখে মাখেন। এই সিঁদুর মাখার রীতি অনেক সময় দশমী ঘরে পালন করা হলেও অনেকে আবার নিজেদের ঘরেই খেলে থাকেন। মুখ রঙিন করে হাসিমুখে মাকে বিদায় জানানোর জন্যই এই সিঁদুর খেলা। তাই মাকে বিসর্জনের আগ পর্যন্ত তারা একে অপরকে সিঁদুর লাগিয়ে মিষ্টিমুখ করেন, নাচ-গান করেন। আর প্রত্যাশা করেন, সারাটা বছর যেন এমন আনন্দেই কাটে। 

বিবাহিত নারীরা স্বামীর মঙ্গল কামনায় দশমীর দিন নারীরা নিজ কপালে সিঁদুর লাগান এবং সেই সিঁদুরের কিছু অংশ দিয়ে দেবীর চরণ স্পর্শ করে থাকেন। তারপর সবাই মিলে একে অপরকে সিঁদুর মাখেন। দুর্গা আগামী বছর আবার সাথে করে শাঁখা-সিঁদুর সঙ্গে নিয়ে আসবেন এবং সেই শাঁখা সিঁদুর ধারণ করেই স্বামীর মঙ্গল হবে এই বিশ্বাসে ভক্তরা সিঁদুর নিয়ে দশমী উদযাপন করেন। এই উৎসবের নামই সিঁদুর খেলা।

এই সিঁদুর খেলা বিবাহিত নারীর জন্য সীমাবদ্ধ থাকলেও সকলেই মণ্ডপে ভিড় করেন নেচে গেয়ে এতে অংশ নেন। অবিবাহিতরা গালে আর হাতে মাখেন সিঁদুর।

বিজয়া দশমীর দিন মঙ্গলবার বিকেল ৩টার পর থেকে প্রতিমা বিসর্জনের কথা বলা হয়েছে। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির নেতৃত্বে পলাশীর মোড় থেকে বিজয়া শোভাযাত্রা বের হয়ে সদরঘাটের ওয়াইজ ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন হবে।

দৈনিক সরোবর/এমই